যেভাবে লেখা হলো নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস

অবিশ্বাস্য! ঐতিহাসিক! অবিস্মরণীয়! সাধারণত নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এশিয়ার দলগুলো সবসময় খাবি খায়। কারোরই খুব বেশি সুখ স্মৃতি নেই। আর বাংলাদেশ তো সেখানে গিয়ে প্রতিবারই বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়। এমনকি লড়াই পর্যন্ত করতে পারে না তারা। সেই বাংলাদেশ দলই কি না এবার কিউইদের মাটিতে বিরুদ্ধ কন্ডিশনে তাদেরকেই দাপট দেখিয়ে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে।

বাংলাদেশের জয় ম্যাচের চতুর্থ দিনই একপ্রকার নিশ্চিত হয়ে যায়। কেবল অপেক্ষা ছিল আনুষ্ঠানিকতার। সেটিও বুধবার (৫ জানুয়ারি) পঞ্চম দিন পূর্ণতা দিলো মুমিনুল বাহিনী। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্বাগতিক নিউজিল্যান্ডকে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে টিম টাইগার।

এই টেস্টে পুরো চারদিন নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের দলগত পারফরম্যান্সই প্রধান ভূমিকা রেখেছে। তবে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে এসে যেন সব আলো নিজের দিকেই কেড়ে নিলেন পেসার এবাদত হোসেন। একাই ৬টি উইকেট শিকার করেছেন তিনি। এতেই পঞ্চম দিন সকালেই ১৬৯ রানে অলআউট হয়ে গেছে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের জয়ের জন্য টার্গেট দাঁড়ায় মাত্র ৪০ রান।

সহজ এই লক্ষ্যমাত্রা পাড়ি দিতে খুব একটা বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশি ব্যাটারদের। অধিনায়ক মুমিনুল হক ও নাজমুল হোসেন শান্তর ব্যাটে ভর করে মাত্র ১৭ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে সিরিজেও ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো সফরকারীরা। তবে শেষ দিকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে যান এদিন ওপেনিংয়ে নামা নাজমুল শান্ত। কেইল জেমিসনের বলে স্লিপে দাঁড়ানো টেলরের হাতে ক্যাচ তুলে দেওয়ার আগে ৪১ বল মোকাবিলায় করেন ১৭ রান। এতে তিনটি দৃষ্টিনন্দন চারের মার ছিল।

অপরপ্রান্ত আগলে রেখে ম্যাচ জিতিয়েই ক্রিজ ছেড়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক। তিনি ৪৪ বল মোকাবিলায় করেন ১৩ রান। তার আগে শুরুতেই আউট হয়ে যান ওপেনার সাদমান ইসলাম। মাত্র ৩ রান করেছেন তিনি। টিম সাউদির বলে উইকেটকিপার টম ব্লানডেলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন এই ব্যাটার। জয়সূচক রানটি এসেছে অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে। তিনি ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

তার আগে ম্যাচের চতুর্থ দিনই (৪ জানুয়ারি) একাই কিউইদের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপে ধস নামান এবাদাত। ৫টি উইকেটের মধ্যে চারটিই তার দখলে। বাংলাদেশকে ইতিহাস সৃষ্টি করার স্বপ্ন দেখানো শুরু করেন। বুধবার (৫ জানুয়ারি) পঞ্চম দিন সকালে মাঠে নেমে সেই স্বপ্নযাত্রা অব্যাহত রাখেন এই পেসার।

প্রথমেই প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান গতকালের অপরাজিত ব্যাটার রস টেলরকে। কিউইদের স্কোরবোর্ডে আর ৭ রান যোগ করতেই দিনের প্রথম আঘাতটি হানেন এবাদত। তার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে সরাসরি বোল্ড হন টেলর। আউট হওয়ার আগে ১০৪ বল মোকাবিলায় ৪০ রান করেছেন এই অভিজ্ঞ ব্যাটার। এর মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেট শিকার করলেন এবাদত হোসেন।

এর কিছুক্ষণ পর আবারও বাংলাদেশ শিবিরে উল্লাস। এবার সিলেট এক্সপ্রেসের শিকার কেইল জেমিসন। ব্যক্তিগত রানের খাতা খোলার আগেই এবাদতের বলে শটে দাঁড়ানো শরিফুলের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। তখন নিউজিল্যান্ডের স্কোর ১৬০ রান। শরিফুলের ক্যাচটি দেখার মতো ছিল। পরের দুটি উইকেট তাসকিন আহমেদের। তিনি যেন এবাদতের দেখানো পথেই হাটলেন।

স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ করার আগেই তাসকিনের দারুণ এক রিভার্স সুইংয়ে পরাস্ত হলেন রচিন রবীন্দ্র। ক্যাচ তুলে দেন উইকেটকিপার লিটস দাসের হাতে। এরপর ক্রিজে নেমে মাত্র ৪ বল খেলতে পেরেছেন টিম সাউদি। এবার তাকে বোল্ড করে দিলেন তাসকিন। এর আগে চতুর্থ দিন কিউই অধিনায়ক ও ওপেনার টম লাথামকে বোল্ড করে উইকেটের শুভসূচনা করেছিলেন এই পেসার।

কিউই শিবিরে শেষ আঘাতটি হানলেন স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ। ৮ রান করা ট্রেন্ট বোল্টকে ফিরিয়ে দেন তিনি। এর আগে প্রথম ইনিংসে তিনটি উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি। এটি নিয়ে দুই ইনিংস মিলিয়ে চারটি হলো তার।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts