চাঁদপুর প্রতিনিধি: পদ্মা, মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা ঘেরা চাঁদপুরে অনিরাপদ হয়ে উঠছে নৌপথের যোগাযোগ ব্যবস্থা। একের পর এক ঘটে চলেছে নৌ পথে ডাকাতির ঘটনা। গতিসম্পন্ন স্পিডবোট ব্যবহার করে এসব ডাকাতি ঘটানো হচ্ছে।
রোববার (২৩ জানুয়ারি) দিনেদুপুরে মেঘনার সফরমালী লঞ্চঘাট এলাকায় ২টি স্পিডবোটযোগে ডাকাতদল ব্যবসায়ীদের অর্ধলক্ষ টাকা ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেন চাঁদপুর নৌ পুলিশের এসপি মো. কামরুজ্জামান।
এ সময় ডাকাতদের মারধরে আহত হওয়া আক্কাস শেখ (৩৫), উজ্জল মাঝি (২৫) ও হাকিম গাজী (৪৮) জানান, শীতকাল এলেই ঘনকুয়াশায় চাঁদপুর নৌ পথে ডাকাতি বেড়ে যায়। এরজন্য আমরা মনে করছি প্রশাসনের তদারকির অভাব। কেননা এই রুটে কয়টি স্পিডবোট চলে? কারা এই স্পিড বোটের মালিক, কারা স্পিড বোট চালক- এর তেমন কোন তথ্যই নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে। তার ওপর ২শ হর্স পাওয়ারের ডবল ইঞ্জিনের অবৈধ হাই স্পিডের বোটগুলো কারা চালায়- এই তথ্য পর্যন্ত কারো সংগ্রহে নেই। অথচ প্রশাসনের কাছেও এতো গতি সম্পন্ন স্পিডবোট নেই। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে আমাদের সাধারণ ব্যবসায়ীদের এই ক্ষতি করে গেলো ডাকাত দল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আহতদের মধ্যে আক্কাস শেখ ও উজ্জল মাঝিকে গুরুতর আহত অবস্থায় চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ব্যবসায়ীরা সকলে মতলব উত্তর উপজেলার আমিরাবাদ ও গৌরাঙ্গ বাজারের ব্যবসায়ী।
ঘটনা প্রসঙ্গে ট্রলারে থাকা আহত ব্যবসায়ী হাকিম আলী গাজী জানায়, মেঘনা নদীর সফরমালী লঞ্চঘাটের কাছে আসলে হাই স্পিডবোট নিয়ে ৮-৯ জনের মুখোশধারী ডাকাত দল কাটা-রাইফেল, শটগান, রামদা ও রড নিয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় এবং আমাদের কাছে থাকা টাকা-পয়সা লুটে নেয়। আমাদের মোবাইল ফোনগুলোও তারা নিয়ে যায়। পরে ডাকাতরা মেঘনা নদীর উত্তর দিকে চলে যায়। ওদের গায়ে লাইফ জ্যাকেট ছিল।
ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী ট্রলারের মাঝি উজ্জল শেখ বলেন, ট্রলারে ডাকাতরা দ্রুত গতি সম্পন্ন স্পিডবোট দিয়ে উঠেই সবাইকে মারধর শুরু করে। কয়েকজন ব্যবসায়ী ট্রলারের সাথে আসেননি। তারা আমার কাছে চাঁদপুরের পার্টিদেরকে পৌঁছে দেওয়ার জন্য টাকা দেয়। সেই টাকার পরিমান ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা। সব টাকাই ডাকাতরা নিয়ে গেছে।
আহত পাইকারি মুদি ব্যবসায়ী আক্কাস শেখ বলেন, আমার কাছে ৯ লাখ টাকা ছিলো। টাকা দিতে দেরী করায় রড দিয়ে আমার হাত ভেঙে ফেলে এবং টাকা ছিনিয়ে নেয়।
এ ছাড়াও তেলের ডিলার ব্যাপারী ট্রেডার্সের মালিক আতাউর রহমান সবুজ জানান, তার টাকা ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার, তেলের ডিলার নাইমা ট্রেডার্সের মালিক মোহাম্মদ হোসেনের টাকা ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার, মরিচের পাইকার খোকন মেম্বারের ৩ লাখ ১০ হাজার, গৌরাঙ্গ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী কামাল মল্লিকের ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা, রহম আলী গাজীর কাছে থাকা ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ডাকাতরা নিয়ে গেছে।
চাঁদপুর নৌ-পুলিশের এসপি কামরুজ্জামান বলেন, পুরো ঘটনাটি আমরা খতিয়ে দেখছি। ব্যবসায়ী এবং ট্রলার চালকের কাছে এতো টাকা ছিলো তা লিক আউট হলো কিভাবে? কারা এই নৌ পথে হাই স্পিডবোট চালাচ্ছে। সকল তথ্যই উদঘাটন করা হচ্ছে। আমি খবর পেয়ে সাথে সাথে চাঁদপুর সদর ও মোহনপুর নৌ-পুলিশের ওসিকে ঘটনাস্থলে নদীতে টিমসহ পাঠিয়ে দিয়েছি। এরপর নৌ-পুলিশের এডিশনাল এসপিকেও বিষয়টি অধিকতর যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছি। ব্যবসায়ীদের থেকে ছিনিয়ে নেয়া মোবাইলের নম্বর আমাদের হাতে চলে আসছে। আমরা সেগুলি নিয়ে ডাকাতদের ধরার বিষয়ে যা যা করনীয় সবই করছি। আশা করি দ্রুত ঘটনায় জড়িত ডাকাতদের ধরতে সক্ষম হবো।
এদিকে ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে আসা চাঁদপুর নৌ-পুলিশের এডিশনাল এসপি বেলায়েত হোসেন বলেন, ডাকাতদের ধরার জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি। তবে এই ডাকাতির ঘটনায় ব্যবসায়ী কিংবা স্থানীয়দের যোগসাজস থাকতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি। ভবিষ্যতে এতো টাকা নিয়ে নৌ-পথে মোকামে গেলে অবশ্যই আমাদের সহযোগিতা নিতে সকল ব্যবসায়ীকে অনুরোধ করছি।