ছবি: নিহত সবুজ বার্নার্ড ঘোষাল ও তার বন্ধু শাহীন
গাজীপুর প্রতিনিধি: গাজীপুরের কালীগঞ্জে তুচ্ছ ঘটনার জেরে মদ পানের আসরে সবুজ বার্নার্ড ঘোষালকে হত্যা করে তার বন্ধু শাহীন। হত্যার পর দেহ ৮ টুকরা করে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলেন তিনি।
শাহীনকে গ্রেপ্তারের পর এ তথ্য জানিয়েছে গাজীপুরের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
শাহীনের বাড়ি সাতক্ষীরা জেলার তালা থানাধীন এলাকায়। অন্যদিকে নিহত সবুজ কালীগঞ্জ উপজেলার নাগরী ইউনিয়নের ভাসানিয়া গ্রামের অমূল্য বার্নার্ড ঘোষালের ছেলে। তিনি নাগরী এলাকার পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল এ্যাপারেলস্ লিঃ নামের পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি চেকার (কিউ.সি) হিসেবে কাজ করতেন।
গাজীপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, নিখোঁজের তিন দিন পর শনিবার (১ অক্টোবর) সবুজের লাশের ৭টি টুকরা পানজোরা গ্রামের বিভিন্নস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। তবে আরেকটি টুকরা পরদিন পাওয়া যায়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
তিনি জানান, লোমহর্ষক ও চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে সবুজের ঘনিষ্ট বন্ধু শাহীনকে রোববার (২ অক্টোবর) সাতক্ষীরা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। কালীগঞ্জের পানজোরা এলাকায় প্রাক্তন ইউপি সদস্য মানিক মিয়ার বাড়িতে ভাড়া বাসায় থেকে একই পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন শাহীনের স্ত্রী। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন এ খুন করেছে বলে স্বীকার করেছে। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ভাড়া বাড়ির ঘর থেকে বটি দা, রক্ত মাখা কাপড় ও লাশের টুকরা বহনের জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি বাজারের ব্যাগসহ বিভিন্ন আলামত জব্দ করে পিবিআই’র সদস্যরা। এইদিন নিহতের ডান পায়ের হাঁটুর নীচের অবশিষ্ট অংশ পানজোড়া গ্রামের পূর্বাচল এ্যাপারেলস লি. এর ফ্যাক্টরির পাশের ডোবা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এরআগের দিন শনিবার পানজোরা গ্রামের জনৈক আলাউদ্দিন শেখের ডোবা থেকে নিহতের কোমর থেকে হাঁটু পর্যন্ত অংশ, একই গ্রামের জনৈক সোবাহান শেখের বাড়ির পুকুরের পাশ থেকে প্লাস্টিকের পলিথিনে মোড়ানো বিচ্ছিন্ন মাথা এবং রক্ত ও কাদামাটি মাখা জিন্স প্যান্ট পরিহিত বাম পায়ের দু’টি খন্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও একই এলাকার মনিকো গ্রুপের গেইটের সামনের ড্রেন থেকে প্লাস্টিকের বস্তার ভিতরে থাকা বাজারের ব্যাগে মোড়ানো কোমর থেকে গলা পর্যন্ত অংশ উদ্ধার করা হয়।
পিবিআই’র পুলিশ সুপার জানান, ঘনিষ্ট দুই বন্ধু সবুজ ও শাহীন প্রায়শঃ একত্রে বসে মাদক সেবন করতেন। গত বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর শাহীন তার বাসায় বন্ধু সবুজকে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় শাহীনের স্ত্রী তার কর্মস্থলে ছিলেন। স্ত্রীর অনুপস্থিতির সুযোগে শাহীনের বাসায় বসে একত্রে মদপান করছিলেন দু’বন্ধু। অতিরিক্ত মদপানের কারণে বেসামাল হয়ে পড়েন তারা। এ সময় উচ্চ মূল্যে কেনা বোতলের মদ তেঁতো লাগার কথা বলে সবুজ তার বন্ধুকে বকাঝকা করলে তাদের মাঝে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। একপর্যায়ে সবুজকে সজোরে ঘুষি মারে শাহীন। এতে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান সবুজ। পরে তার মরদেহ গুম করতে বাড়িতে বসেই বটি দা দিয়ে ৮ টুকরা করেন শাহীন। পরে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে ও বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দিনভর তার সুবিধাজনক সময়ে বাজারের ব্যাগে ভরে মরদেহের টুকরাগুলো প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ফেলে দেয় বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাহীন জানিয়েছে।