শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতে বাক প্রতিবন্ধীকে পুড়িয়ে হত্যা

মো. মেহেদী হাসান: ঢাকার কেরানীগঞ্জে শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতেই বাক প্রতিবন্ধী লতা সরকারকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় মূল আসামি সুজন মিয়াকে (২৫) গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

শনিবার (৩ ডিসেম্বর) ঢাকার পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান তার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লতা সরকারের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক থাকায় পুলিশ কর্তব্যরত ডাক্তার ও একজন সাইন ল্যাংগুয়েজ এক্সপার্টের সহায়তায় মৃত্যুকালীন জবানবন্দি গ্রহণ করে। এরপর তদন্ত টিম ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত ও সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করে। পরবর্তীতে লতার ডায়িং ডিক্লারেশন, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তদন্ত টিম চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয়।

তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবীর কেরাণীগঞ্জ সার্কেল এর নেতৃত্বে একটি আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করে শুক্রবার (২ ডিসেম্বর) পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার তেগাছিয়া বাজার থেকে মূল আসামি সুজন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে। আসামি সুজন মিয়ার বাড়ি শরিয়তপুর জেলার গোসাইরহাটের কোদালপুরে।

পুলিশ সুপার বলেন, বাকপ্রতিবন্ধী লতার সাথে সুজনের ৮ থেকে ১০ দিনের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। ঘটনার দিন বিকেলে সুজন বালির গদির খাটে লতার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। এরপর লতা সুজনকে বিয়ের জন্য জোর-জবরদস্তি করতে থাকে। লতা সুজনকে বলে, সে যদি লতাকে নিয়ে পালিয়ে না যায় তাহলে সে শারীরিক সম্পর্কের কথা সবাইকে জানিয়ে দেবে। সুজন তখন লতাকে কাপড়-চোপড় নিয়ে রাতে গাব গাছের কাছে অপেক্ষা করতে বলে। লতা চলে গেলে সুজন লতাকে দূরে কোন নির্জন জায়গায় নিয়ে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করে। এরই ধারাবাহিকতায় সুজন লতাকে নিয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন চুনকুটিয়া সাবান ফ্যাক্টরি রাস্তার ব্রিজের পরে অন্ধকার জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে সুজন লতাকে প্রথমে ঘুষি মেরে ও ধাক্কা দিয়ে রাস্তা থেকে নিচের খাদে ফেলে দেয়। তখন লতা চিৎকার করতে থাকলে সুজন লতার গলা চেপে ধরে সিমেন্টের পাথরের সাথে মাথায় ৩/৪ টা আঘাত করে। এতে লতা জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সুজন মনে করে লতা মারা গেছে। তারপর মৃত লতাকে যেন পরবর্তীতে কেউ চিনতে না পারে সেজন্য লতার ব্যাগের কাপড়-চোপড় তার শরীরের উপর রেখে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়ে সুজন পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে লতাকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে জেনে সুজন মোবাইল বন্ধ করে ঐ রাতেই শরীয়তপুর গোসাইরহাটের কোদালপুরে তার গ্রামের বাড়িতে পালিয়ে যায়। পরে সেখান থেকে সুজন পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তার শ্বশুর বাড়ীতে পালিয়ে গিয়ে অবস্থান করে।

পুলিশ সুপার বলেন, মূলত লতার সাথে শারীরিক সম্পর্কের কথা গোপন রাখতেই সুজন পরিকল্পিতভাবে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। মামলার তদন্ত এখনও চলমান রয়েছে।

লতা সরকারের ভাই ও এই মামলার বাদী স্বপন সরকার বলেন, আমার বোন বাক প্রতিবন্ধী ছিলো। তাকে ফুসলিয়ে নিয়ে এসে ধর্ষণ করার পর আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। আমরা খুনির ফাঁসি চাই।

এর আগে ২৮ নভেম্বর রাত সাড়ে ১০ টায় ৯৯৯ এর মাধ্যমে পুলিশ খবর পায় কেরানীগঞ্জের সাবান ফ্যাক্টরি রোডের পাশে এক নারীর শরীরে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। পুলিশ নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে (মিটফোর্ড) ও পরবর্তীতে শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ণ এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৯ নভেম্বর রাত সাড়ে ৮ টায় লতা মারা যায়।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts