নবীনগরে ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে দেহ ব্যবসা, ব্ল্যাকমেল, গ্রেপ্তার-৩

জ,ই বুলবুল: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ খানকা এলাকার সিজিল মিয়ার তিনতলা বিশিষ্ট ভবনের দ্বিতীয় তলা ফ্ল্যাট বাসায় অভিযান চালিয়ে নাঈম সরকার (২৫), রত্না আক্তার (২৬) ও শেফালী বেগম (৪৫) নামে ৩জনকে আটক করেছে নবীনগর থানা পুলিশ। এসময় সাইদুল (৩৬) নামে একজন পালিয়ে গেছে।

আটককৃতদের একজন দেহ ব্যবসায়ীর মূল হোতা ও অপর দুইজন দেহ ব্যবসায়ী বলে জানিয়েছে পুলিশ।

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারী) রাতে উপজেলার সলিমগঞ্জ খানকা এলাকার সিজিল মিয়ার ৩য় তলা ভবনের ২তলা ফ্লাটে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল (শুক্রবার) বিকাল তিনটায় তাদের বিরুদ্ধে নবীনগর থানায় মামলা দায়েরের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

আটক হওয়া নাঈম সরকার সলিমগঞ্জ ইউনিয়নের নিলখী গ্রামের নাজিম উদ্দীন সরকার ছেলে, শেফালী বেগম শ্যামগ্রাম ইউনিয়নের শ্যামগ্রাম গ্রামের জজ মিয়ার স্ত্রী ও তার মেয়ে রত্না আক্তার। পালিয়ে যাওয়া সাইদুল নিলখী গ্রামের শাহ আলম মিয়ার ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, উপজেলার সলিমগঞ্জ খানকা এলাকার সিজিল মিয়ার ৩য় তলা ভবনের ২য় তলা ফ্ল্যাট বাসা ভাড়া নিয়ে মাদক কারবারি নাঈম সরকারের নেতৃত্বে রত্না আক্তার, শেফালী বেগম দীর্ঘদিন ধরে দেহ ব্যবসা চালাচ্ছে।রত্না ও তার মা শেফালী বিদেশ থেকে আসা যুবক ও গ্রামের যুবকদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে দেখা করার নাম করে বাসায় এনে নাঈম সরকার ও সাইদুল মিয়ার মাধ্যমে প্রতারনা করে আটকে রেখে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি তেমনি এক ঘটনা ঘটেছে সলিমগঞ্জ খানকা এলাকার সিজিল মিয়ার নবনির্মিত তিন তলা ফ্ল্যাট বাসায়।

ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দেহ ব্যবসায়ী রত্না আক্তার মুক্তারামপুর গ্রামের সোহেল মিয়ার কাছ থেকে স্বামী বিদেশ যাওয়ার কথা বলে ২০ হাজার টাকা হাওলাত হিসেবে চান। সোহেল মিয়ার কাছে টাকা না থাকায় তার বন্ধুর স্ত্রীর কাছ থেকে ৫ আনা ওজনের একটি কানের দুল এনে বন্দক রেখে ২০ হাজার টাকা রত্নাকে দেন। ১৫ দিন পর রত্না আক্তার,সোহেল মিয়াকে ফোন করে বলেন বাসায় এসে ২০ হাজার টাকা নেওয়ার জন্য, সোহেল মিয়া কাজে ব্যস্ত থাকায় টাকা আনার জন্য তার বন্ধুর স্ত্রী ডলি আক্তারকে সেখানে পাঠায়। সেখানে দুই প্রতারক নাঈম সরকার ও সাইদুল সোহেল মিয়ার বন্ধুর স্ত্রী ডলি আক্তারকে আটক রেখে। কিছুক্ষণ পর সোহেল মিয়াকে ফোন করে বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে নাঈম ও সাইদুলের নেতৃত্বে সোহেল ও তার বন্ধুর স্ত্রীকে আটকে রেখে নগ্ন অবস্থায় মোবাইলে ভিডিও ধারণ করেন। পরে তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকার করিলে ইন্টারনেটের ভিডিও ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। পরে প্রতারক চক্র তাদেরকে মারধর করে নগদ ৮৩ হাজার টাকা ও তাদের সাথে থাকা একটি ৮ আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন মূল ৪৫ হাজার টাকা, ৬ আনা ওজনের ২ টি স্বর্ণের আংটি যার মূল ৩০ হাজার টাকা। ৪ ভরি ওজনের একজোড়া রুপার নূপুর যার মূল ৫ হাজার টাকা প্রতারক চক্র হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্র আরও তাদের কাছ থেকে বিকাশ নাম্বারে ৯৮ হাজার টাকা আনার পর খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রেখে (১১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে তাদেরকে মুক্তি দেয়। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী সোহেল মিয়া (১৬ ফেব্রুয়ারি) বুধবার নবীনগর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে নবীনগর থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারে প্রেরণ করেন।

এবিষয়ে নবীনগর থানার মামলার (তদন্ত) কর্মকর্তা এসআই আল আমিন জানান, নিলখী গ্রামের নাঈম সরকারের নেতৃত্বে রত্না আক্তার ও তার মা-শেফালী বেগম, সলিমগঞ্জ খানকাবা এলাকার সিজিল মিয়ার ৩য় তলা ভবনের ২য় তলা ফ্লাট ভাড়া নিয়ে দেহ ব্যবসা করে ভিডিও চিত্র ধারণ করে প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেল করে আসছিল। এতে এলাকার মানসম্মান ও সামাজিক পরিবেশ নষ্ট করে আসছিল।

Print Friendly

Related Posts