তালায় নিরীহ একটি পরিবার এক যুগের বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার

অর্জুন বিশ্বাস, তালা (সাতক্ষীরা): সাতক্ষীরার তালার জেঠুয়া এলাকায় ২ বিঘা জমির বিরোধ নিয়ে নিরীহ একটি পরিবার এক যুগের বেশি সময় ধরে হয়রানির মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছেন বলে জানিয়েছেন।

হয়রানির শিকার হওয়া জেঠুয়া গ্রামের মোজাম্মেল সরদারের পরিবারের অভিযোগ, ২ বিঘা জমি নিয়ে দীর্ঘ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে প্রতিপক্ষ সাইফুল সরদার (৩৮) ও লুৎফর সরদার (৫০) গংরা তাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এরই রেশ ধরে একের পর এক জমি দখলের চেষ্টা, মহিলাদের শ্লীলতাহানিসহ হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। সর্বশেষ তাদের হামলার শিকার হয়ে এ পরিবারের আবু মুছা সরদার (৬৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।

জেঠুয়া গ্রামের আলমগীর সরদারের স্ত্রী মিলি আক্তার জানান, তার দাদাশ্বশুর কলম সরদার ফকির সরদার নামে এক ব্যক্তিকে লালনপালন করেন। পরে ১৫ বিঘা মতো সম্পত্তি তাদের নিজের নামে করে দেন। কিন্তু ফকির সরদারের শরিকরা সাইফুল সরদার, লুৎফর সরদার, মজিদ সরদার ও শরিফুল সরদার একসাথে হয়ে অতিরিক্ত ২ বিঘা জমি দাবি করে তাদের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে আসছে। শ্লীলতাহানি, জমি দখলের চেষ্টা, পুকুরের মাছ মেরে বিক্রি করা, জমির গাছপালা কেটে ফেলাসহ জীবননাশের হুমকি দিয়ে আসছে। এ বিষয়ে থানা, জেলা পুলিশ সুপারসহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ করা হয়েছে। ২১ জানুয়ারি সাইফুল সরদারের নেতৃত্বে তাদের জমি দখল করার চেষ্টা করে। এসময় তার বড় ভাসুর আবু মুছা সরদার (৬৫) আহত হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মারামারির এ ঘটনায় তালা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এরপর আসামিরা বিভিন্নভাবে তাদের পরিবারের সদস্যের প্রতি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে।

মোজাম্মেল সরদার (৫৫) বলেন, যে জমি নিয়ে মামলা চলে আসছে সে জমিতে ১৪৫ ধারায় আমরা রায় পেয়েছি। তবুও তারা রায়কে উপেক্ষা করে আমাদের বসতবাড়িসহ বিভিন্ন জায়গায় ফসলি জমি দখল করার চেষ্টা করছে। আমরা আমাদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত।

নিহত মুছা সরদারের মেয়ে শিউলি আক্তার (৪০) বলেন, আব্বার মৃত্যুর পরে আমাদের সম্পত্তির বাঁশ, মেহগুনি গাছসহ বিভিন্ন গাছ কেটে নিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) সকালে রাস্তা দিয়ে আমার বড় ফুফু আর আমি যাওয়ার সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে।

অভিযুক্ত সাইফুল সরদার (৪০) বলেন, তারা তাদের মতো জমি দাবি করে। যে গাছপালা কেটেছি ওগুলো আমাদের লাগানো গাছ। এসময় তিনি অনন্য অভিযোগ অস্বীকার করে ব্যস্ততা দেখিয়ে মুঠোফোন কেটে দেন।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু জানান, দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ চলে আসছে। আমরা স্থানীয়ভাবে মিমাংসার চেষ্টা করেও পারিনি। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝামেলা হয়। এটা নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।

তালা থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চৌধুরি রেজাউল করিম বলেন, আমরা সাইফুল গংদের এগুলো করতে নিষেধ করেছি। তাদেরকে সর্তক করা হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে তারা কোন বাড়াবাড়ি করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly

Related Posts