ময়মনসিংহ প্রতিনিধি: ময়মনসিংহ নগরীর ছোট বাজারের নিরালা রেস্ট হাউজ থেকে তরুণীর গলাকাটা মরদেহ উদ্ধারের পর হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এই ঘটনায় রাকিবুল ইসলাম রাকিব (২৩) নামে যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত রাকিব মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার নতুন চরচাষি গ্রামের মো. খোকন মিয়ার ছেলে।
মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বেলা ১১ টায় জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান জেলা পুলিশ সুপার মাসুম আহমেদ ভূঞা।
পুলিশ সুপার বলেন, ওই তরুণী একজন ভাসমান যৌনকর্মী এবং আসামি রাকিব পড়াশুনার পাশাপাশি সমাজ সেবা অফিসে আউট সোর্সিংয়ের কাজ করে। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে রাকিব জানিয়েছে, সে গত ১৪ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টায় কাজের জন্য ঢাকার আগারগাঁও অফিস থেকে ময়মনসিংহের ভালুকায় রওনা দেন। সেখান থেকে মিরপুর শ্যাওড়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড যায়। পরে শ্যাওড়াপাড়া ফুটওয়ার ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় এই যৌনকর্মীর সাথে রাকিবের পরিচয় হয়। তখন রাকিব তার সাথে ৫ হাজার টাকা চুক্তি করে ময়মনসিংহে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং ওই যৌনকর্মী ময়মনসিংহে যেতে রাজি হয়। পরে সেখান থেকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ড গিয়ে বাসযোগে ময়মনসিংহে আসে। নগরীর ছোট বাজার এলাকার নিরালা রেস্ট হাউজে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে ৪ দিন থাকবে বলে ২০৯ নম্বর রুম ভাড়া নেয়। পরদিন ১৫ মার্চ সকাল ১০ টার দিকে রাকিব ১ হাজার টাকা দেয় এবং বাকি ৪ হাজার দিবে না বলে জানায়। এতে দু’জনের কথা কাটাকাটির জেরে ওই যৌনকর্মী রাকিবের গালে থাপ্পর মারে। এতে রাকিব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। পরে বিকাশ থেকে টাকা উত্তোলনের কথা বলে নিচে গিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে চাকু কিনে আবারও রুমে এসে গলায় চাপ দিয়ে বাথরুমে নিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে রাকিব ওই যৌনকর্মীর দুই হাতের কবজির রগ কাটে এবং মুখে চাকু দিয়ে আচড় কাটে। তারপর হোটেল রুমের রক্ত পরিস্কার করে বাইরে থেকে তালা লাগিয়ে চলে যায়।
পলিশ সুপার বলেন, এভাবে দুই দিন রুমের তালা বন্ধ দেখে রেস্ট হাউজের লোকজন ১৮ মার্চ পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামি করে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর সিসিটিভি ফুটেজ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গত ১৯ মার্চ রাকিবকে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পুলিশ সুপার বলেন, ওই যোনকর্মীর পরিচয় এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তার পরিচয় নিশ্চিতে পুলিশ কাজ করছে। তরুণীর মরদেহ ময়নাতদন্ত করে ফ্রিজিং করে রাখা হয়েছে। পরিচয় নিশ্চিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাকিব আদালতে ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে বলেও জানান তিনি।