মোবাইল অ্যাপে ঋণের নামে প্রতারণার ফাঁদ

আবুল এহসান ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে একটি অ্যাপের বিজ্ঞাপন দেখেন। ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ নামের এই অ্যাপে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়া যায় বলে বিজ্ঞাপনে দেখানো হয়। অ্যাপটি ডাউনলোড করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রথমে ৭১৫ টাকা ঋণও পান। কিন্তু ঋণ নেওয়ার পর অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলো তার জীবন। এই অ্যাপের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতারকেরা তাকে জিম্মি করে আদায় করছিলেন অনেক টাকা। পুলিশ এই প্রতারকচক্রের ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ভুক্তভোগী আবুল এহসানের বাড়ি রাজশাহী। আর প্রতারকদের বাড়ি গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আবুল এহসানের অভিযোগের প্রেক্ষিতে নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এদের গ্রেপ্তার করে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১০টি মোবাইল ফোন, ১১টি ল্যাপটপ, পাঁচটি সিপিইউ, পেনড্রাইভ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার ১৭ জন হলেন- মাহিউদ্দিন মাহির (৩১), বিন সাদ মিনহাজ (২৩), ছানা মিয়া (৩৫), মো. লিটন (৪৩), মেহেদী হাসান (২৩), হাসান ইমাম প্রিন্স (৩৩), বেলায়েত হোসেন (২৮), মারুফ আহমেদ (২৭), সাব্বির হোসেন লিয়ন (২৬), শিহাবুল ইসলাম নিশু (২২), ফায়েজুল ইসলাম (২৪), সোহান খান (২১), আব্দুল ওয়াদুদ (২৫), ইতি আক্তার (২০), স্মৃতি শাহ সৌমিক (২১), আয়েশা (২১) এবং রুবাইয়া (২০)। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজশাহী নগর পুলিশের (আরএমপি) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সগত ২৯ মার্চ আবুল এহসান ফেসবুকে ‘র‌্যাপিড ক্যাশ’ নামের একটি অ্যাপ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার সুযোগের বিজ্ঞাপন দেখেন। তিনি অ্যাপটি ডাউনলোড করে তার মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও লাইভ ছবি দিয়ে নিবন্ধন করেন। পরে একটি নগদ মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর থেকে তার মোবাইল ব্যাংকিং ৭১৫ টাকা ক্যাশ ইন হয়। তিনি ওই নম্বরে কল দিলে সেটি বন্ধ পান। রাতে অ্যাপ চেক করে দেখেন তার নামে ৭১৫ টাকা জমা হয়েছে। শর্তে বলা হয়েছে, ৫৮৫ টাকা সুদসহ মোট ১ হাজার ৩০০ টাকা ৩ এপিলের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এহসান তাদের কাস্টমার কেয়ার নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পেলে ই-মেইলের মাধ্যমে সে টাকা পরিশোধ করবেন বলে জানান। তখন প্রতারকরা একটি নম্বর দিয়ে টাকা পরিশোধ করতে বলে।

এরপর আবুল এহেসান ১ হাজার ৩০০ টাকা পরিশোধ করেন। কিন্তু সেদিন আবার আবুল এহসানের নগদ অ্যাকাউন্টে আগের মতো টাকা জমা হয় এবং সুদসহ পরিশোধ করতে বলা হয়। এরপর প্রতারক চক্রটি মোবাইল ফোনে জানায়, তার মোবাইলের কন্টাক্ট লিস্ট, ছবি, ভিডিওসহ যাবতীয় তথ্য হ্যাক করা হয়েছে। টাকা পরিশোধ না করলে তার নগ্ন ছবি তৈরি করে সব কন্টাক্ট নম্বরসহ ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে প্রতারকরা বিভিন্ন সময়ে একাধিক মোবাইল নম্বর থেকে কল দিয়ে হুমকি দেয় এবং টাকা চাইতে থাকে। আবুল টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রতারকরা তার নগ্ন ছবি তৈরি করে তাকেসহ তার কন্টাক্ট লিস্টে কয়েকজনের কাছে পাঠায়। এছাড়া তার এক নারী নিকটাত্মীয়ের নগ্ন ছবি তৈরি করে ফেসবুকে ছাড়ার হুমকি দেয়। ভয়ে আবুল প্রতারকদের দাবি করা টাকা পরিশোধ করেন।

কিন্তু প্রতারক চক্রটি তারপরেও বিভিন্ন অজুহাতে তার কাছে টাকা দাবি করতে থাকে। তিনি আবারও তাদের টাকা দেন। এভাবে আসামিরা টাকার জন্য তাকে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। বাধ্য হয়ে গত ১৪ মে আবুল বোয়ালিয়া থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। এরপরই পুলিশ অভিযানে নামে। পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিটের অফিসার ও ফোর্সের সহায়তায় এই ১৭ জনকে বুধবার গ্রেপ্তার করা হয়।

আরএমপির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, প্রতারক চক্রটি র‌্যাপিড ক্যাশ মোবাইল অ্যাপটি ব্যবহার করে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রতারণার মাধ্যমে প্রতারণা করছিলো। তারা সাধারণ মানুষকে ব্ল্যাকমেইল টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো। বৃহস্পতিবার (১৮ মে) গ্রেপ্তার ১৭ জনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

 

Print Friendly

Related Posts