১১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে হজে ‘এমটিএফই’র দুই পরিচালক

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অনলাইন বিনিয়োগ প্লাটর্ফম ‘এমটিএফই’ অ্যাপে গ্রাহকের বিনিয়োগের প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা লোপাট করে হজে গেছেন প্রতিষ্ঠানটির দুই পরিচালক।

দুবাইভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠানটি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং বা এমএলএম পঞ্জি মডেলে ব্যবসা করতো। ভারত ও বাংলাদেশ থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিনিয়োগকারী ছিল। তবে এই ১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ অর্থই বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের বলে অভিমত সাইবার বিশ্লেষকদের। এ ঘটনায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।

বিভিন্ন হায় হায় কোম্পানির পর এবার বিদেশ থেকে পরিচালিত ‘এমটিএফই’ অ্যাপে কুমারখালী উপজেলার প্রায় দুই হাজার মানুষ খোয়ালেন ‘শত কোটি’ টাকা।

জানা গেছে, এই অ্যাপে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিনিয়োগকারীরা বিপুল লভ্যাংশের মাধ্যমে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার আশায় টাকা জমা দেন।

এদিকে বিনিয়োগকারীরা পথে বসলেও তাদের খোঁজখবর না রেখে ওমরা হজ করতে সৌদি আরবে গেছেন কোম্পানির দুই পরিচালক। তাদের সেই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করছেন।

বিনিয়োগকারীদের ভাষ্য, কুমারখালীসহ জেলার প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার গ্রাহক ৮ হাজার থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ করেছেন। গেল শুক্রবার থেকে এই অ্যাপটির সকল কার্যক্রম হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়।

কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন সিঙ্গার প্লাজার দ্বিতীয় তলায় অফিস নিয়ে প্রায় দেড় বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন মাসুম ও মিজান নামে দুজন। এই দুজনের মাধ্যমে প্রায় দুই হাজার মানুষ বিনিয়োগ করেছিল। টার্গেট পূরণ সাপেক্ষে মিজানুর কুষ্টিয়ার প্রতিষ্ঠানটির ‘সিইও’ এবং তার পরের স্থানে মাসুম আলী।

জানা যায়, কুমারখালী ‘এমটিএফই’র মূলহোতা পৌরসভার বাটিকামারা মধ্যপাড়ার মসলেম উদ্দিনের ছেলে মিজানুর রহমান। তিনি স্থানীয় ফেমাস ফুলকুঁড়ি বিদ্যালয়ের পরিচালক পদে রয়েছেন। তার সহকারী ছিলেন পৌরসভার ঝাওতলা এলাকার তোফাজ্জেলের ছেলে সাবেক পুলিশ কনস্টেবল মো. মাসুম আলী। তিনি পুলিশ সদর দপ্তরের আইটি সেক্টরে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে ‘এমটিএফই’র ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হন।

গত ১১ আগস্ট মিজানুর ও মাসুম সৌদি আরবে ওমরা হজ করতে যান। তারপর থেকে শুরু হয় অ্যাপটিতে বিভিন্ন সমস্যা, সঙ্গে গ্রাহকদের কমিশনও কমে যায়। এরপর গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) থেকে অ্যাপটি বন্ধ হয়ে যায়।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী সিইও মিজানুর রহমানের বাড়িতে গেলে তার স্ত্রী সুমী খাতুন জানান, মিজানুর হজে গেছেন। তিনি এসব বিষয়ে কোনোভাবেই কথা বলবেন না। মিজানুর আসলে তার সঙ্গে কথা বলবেন।

কুমারখালী পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের ঝাউতলা এলাকায় আরেক সিইও মাসুম আলীর সঙ্গে বাড়িতে গেলে তার মা রেখা খাতুন বলেন, আমার ছেলে হজে গেছে। আগে পুলিশের চাকরি করতো। সেটি ছেড়ে এই ব্যবসা শুরু করে। সে নিজেও এতে টাকা দিয়েছিল।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আকিবুল ইসলাম জানান, আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানতে পেরেছি এই সম্পর্কে। তবে এই বিষয়ে থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেনি।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts