নিত্যপণ্য দিয়ে সহায়তার নামে পাতা হচ্ছে ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদ। এ সহায়তার বিনিময়ে কৌশলে প্রতারক চক্র সংগ্রহ করে নেয় জাতীয় পরিচয়পত্র, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ। আর এসব তথ্য দিয়ে খোলা হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ হিসাব সংবলিত সিমকার্ড তুলে দেয়া হচ্ছে ভয়াবহ সব অপরাধী চক্রের হাতে।
সম্প্রতি এমন এক চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, অন্যের তথ্য ব্যবহার করে এরই মধ্যে প্রতারকরা খুলেছে লাখ লাখ অ্যাকাউন্ট।
একজনের নামে অন্য কেউ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলে লাখ লাখ টাকার অবৈধ লেনদেন করলে দায় কার? যার নামে অ্যাকাউন্ট নিঃসন্দেহে তার। যদিও তিনি কিছুই জানেন না।
সম্প্রতি ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে মোবাইল ব্যাংকিং জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত একটি চক্রের সাত সদস্যকে গ্রেফতারের পর চাঞ্চল্যকর এ তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তাদের মধ্যে রবিউল ইসলাম একাই এক বছরে এক লাখের বেশি জালিয়াতি করে মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। এ চক্রে মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠানের কিছু অসাধু ডিস্ট্রিবিউশন সেলস অফিসার ও ডিস্ট্রিবিউশন সেলস সুপারভাইজারও জড়িত।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন জেলার দরিদ্র লোকজনকে সহযোগিতার ফাঁদে ফেলে তাদের এনআইডি, ফিঙ্গার প্রিন্ট ও আইরিশ নিয়ে চক্রটি কয়েক লাখ মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট খুলেছে। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এসব সিমকার্ড ভয়াবহ সব অপরাধী চক্রের হাতে তুলে দিয়েছেন তারা। অথচ যাদের তথ্য নিয়ে এসব হিসাব খোলা হয়েছে, তারা এসবের কিছুই জানেন না। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্রের বিপরীতে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব নম্বর চালু করে দিনের পর দিন চলছে প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড।
এ বিষয়ে ডিএমপি মিরপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন, যে চক্রটির সন্ধান পেলাম, তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে এজেন্ট আছে। একেকটা জেলা, উপজেলা ও মফস্বল শহরে তারা দরিদ্র বিশেষ করে দুস্থ নারীদের টার্গেট করতেন। নানান প্রকল্পের নাম ভাঙিয়ে তেল, ডাল, লবণ ও চালসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য সহায়তার কথা বলে ভুক্তভোগীদের একত্রিত করা হতো। পরে তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতো। কারণ ওইসব পণ্য পেতে হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি দিতে হবে! এভাবেই এনআইডির তথ্য হাতিয়ে নেয়া হতো। পাশাপাশি তারা একটা স্মার্ট ট্যাবের মাধ্যমে প্রত্যেকের আইরিশ নিয়ে নিতেন। কারণ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জন্য এখন আইরিশ দরকার হয়। তথ্যগুলো যখন চক্রটির হাতে চলে আসতো, তখন তারা এটা আবার একটা ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের মাধ্যমে লোকাল মোবাইল ব্যাংকিং ডিস্ট্রিবিউশন স্টোরগুলোর সঙ্গে এক ধরনের লিয়াজোঁ করতেন।
গ্রেফতার হওয়াদের মধ্যে অনিক নামে কক্সবাজারের একজন আছেন। তার কাছ থেকে ছটি মোবাইল ও ২৮টি সিমকার্ড পাওয়া গেছে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে তোরাব আলী নামে তার চাচাকে গ্রেফতারে অভিযান চালায় পুলিশ। তার বাসা থেকে ৬৮টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনিক পুলিশকে জানিয়েছে, গত ৪ মাসে এসব নম্বর থেকে আড়াই কোটি টাকা তুলেছেন তারা।
হাসান মুহাম্মদ মুহতারিম বলেন, ‘এরই মধ্যে আমরা যতটুকু জেনেছি, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে তারা এ পর্যন্ত কয়েক লাখ সিম ক্রিয়েট করেছেন। এ রকম লক্ষাধিক মোবাইল ব্যাংকিং ফেক অ্যাকাউন্টও আছে। শুধু ট্রানজেকশন না, এ ধরনের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভুয়া অ্যাকাউন্ট আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যেসব প্রতিষ্ঠান যুক্ত, তারা আরও সচেতন না হলে এ ধরনের জালিয়াতি ঠেকানো কষ্টসাধ্য।’