খাবারে চেতনানাশক মিশিয়ে বাড়িতে চুরি ও ধর্ষণ

চুরির কয়েক দিন পর টের পেয়েছেন বাড়ির লোকজন। কারণ এ কদিন অচেতন অবস্থায় তারা ছিলেন হাসপাতালে। চোর চক্র খাবারে অতিমাত্রায় চেতনানাশক মিশিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের অন্তত ১২টি বাড়িতে ঘটেছে অভিনব এ চুরির ঘটনা। চক্রটির ৬ সদস্যকে গ্রেফতারের পর পুলিশ বলছে, এক্ষেত্রে অচেতন অবস্থায় ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।

কেরানীগঞ্জের কলাতিয়া ইউনিয়নের রঞ্জিতপুর এলাকার একটি বাড়িতে গত ৭ অক্টোবর রাতে ঘটে এমন চুরির ঘটনা। অথচ বিষয়টি দুদিন পর টের পান বাড়ির লোকজন। কারণ এ দুদিন তারা অচতেন অবস্থায় ছিলেন রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

পরিবারের সদস্যরা বলছেন, ৭ অক্টোবর রাতের খাবার খাওয়ার পরপরই তারা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরদিন সকালে তাদের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। সবাইকে অচেতন অবস্থায় দেখতে পেয়ে নিয়ে যান স্থানীয় হাসপাতালে; সেখান থেকে সোহরাওয়ার্দীতে।

এমন অন্তত ১২টি বাড়ি থেকে চুরির তথ্য আসে পুলিশের কাছে। কিন্তু অজানা কারণে মামলা করা থেকে বিরত থাকেন তারা। মামলা হয় মাত্র একটি। আর সেই মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ পায় চাঞ্চল্যকর তথ্য, যা এর আগে কখনো হয়নি।

চুরির সঙ্গে জড়িত ছয়জনকে গ্রেফতার করেছে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। তাদেরকে নেয়া হয় ঘটনাস্থলে। কীভাবে তারা চুরি করেছে, তা পুলিশকে দেখায়। রাতের বেলা এ চক্রের সদস্যরা টার্গেট করা বাড়ির রান্নাঘরের আশপাশে অবস্থান করতে থাকে। রান্না শেষে খাবার রেখে ভেতরে ঢুকতেই চক্রের একজন পানিতে মেশানো চেতনানাশক সিরিঞ্জের মাধ্যমে খাবারে প্রয়োগ করে। সেই খাবার খাওয়ার পর অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে পড়েন পরিবারের সবাই। এ ফাঁকে গ্রিল কেটে ঘরে ঢুকে সব চুরি করে পালিয়ে যান তারা।
 
কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাবুদ্দিন কবির জুয়েল সময় সংবাদকে বলেন, ঘরে থাকা বিভিন্ন আসবাবপত্র ঘেঁটে মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে যায় চক্রটি। শুধু তাই নয়, ঘুমিয়ে থাকা লোকদের সঙ্গে থাকা গহনাও খুলে নেয় চক্রটির সদস্যরা।
পুলিশ কর্মকর্তা জানান,  চক্রটি আগে এলাকা বাছাই করে। এরপর তারা প্রত্যেকেই ফার্মেসি থেকে ৩/৪টা করে ঘুমের ওষুধ কেনে। এগুলো একসঙ্গে করে পানিতে মেশায়। তারপর সেটা সিরিঞ্জের মাধ্যমে তারা রান্না করা খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে দেয়।
তিনি বলেন, ‘এটা একটা অদ্ভুত ধরনের চুরি। এ ধরনের চোর চক্রের বিরুদ্ধে এর আগে আমরা আর কোনো মামলা খুঁজে পাইনি। তার মানে হলো, তারা এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।’
এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে সাভারের একটি বাড়িতে চুরির রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ একই চক্র ওই বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটিয়েছে। আদালতে তারা এ বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ওই চক্রটি শুধু চুরিই করে না, এর পাশাপাশি ওই বাড়িতে থাকা নারীদের সঙ্গে অসামাজিক কাজেরও চেষ্টা করে। অনেক ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়। ফলে অনেক ক্ষেত্রে স্বাভাবিক কারণেই কেউ আমাদের থানায় মামলা রুজু করে না। যদিও আমরা চুরির অভিযোগ পেয়েছি, কিন্তু এটার ভেতরে অপরাধের মাত্রাটা তীব্র; খুবই সেনসিটিভ। সামাজিক লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই মামলা করতে চায় না।
Print Friendly

Related Posts