সুগন্ধা নদীতে লঞ্চ অভিযান-১০ ট্রাজেডির দুই বছর

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে ঢাকা থেকে বরগুনাগামী অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর আজ। এই দুর্ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান ৪৯ জন। এখনো শনাক্ত হয়নি ৯ জনের মৃতদেহ। সরকারের থেকে সহায়তা করা হলেও ধরা-ছোয়ার বাইরে রয়ে গেছে লঞ্চ মালিক কর্তৃপক্ষ। তাদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজনরা।

২০২১ সালের ২৪ ডিসেম্বর ভোর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে অভিযান-১০ লঞ্চে ইঞ্জিন রুম থেকে লাগা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ৪৯ জন। তাদের মধ্যে ২৬ জনের পরিচয় শনাক্ত করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলেও পরিচয়হীন ২৩ জনের মৃতদেহ পোটকাখালী গণকবরে ২১টি কবরে দাফন করা হয়।

নিখোঁজের স্বজনদের নমুনা সংগ্রহ করে পরের বছর ১৪ জনের পরিচয় শনাক্ত হলেও এখনো শনাক্ত হয়নি ৯ জনের মৃতদেহের পরিচয়।

শনাক্ত হওয়া মৃতদেহের স্বজনদের দেড় লাখ করে সরকারি সহায়তা দেওয়া হলেও পরিবারের একমাত্র উপার্জনাক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে অভাব-অনটনের মধ্যে দিন পার করছেন সদরের খাজুরা গ্রামের মোহিবের স্ত্রী-সন্তান ও বাবা-মা। মোহিবের একমাত্র সন্তান আবদুল্লাহকে দুই বেলা খাবার দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

একই অবস্থা লঞ্চ দূর্ঘটনায় নিহত বাকি ৪৮টি পরিবারের স্বজনদের। ইঞ্জিনে ত্রুটি থাকার পরেও লঞ্চ থেকে যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে না নেওয়ায় লঞ্চ মালিকের শাস্তি ও ক্ষতিপূরণ আদায়ের দাবি স্বজনদের।

বরগুনা সদরের পরীরখাল এলাকার রাজিয়া সুলতানা ও আট বছরের শিশু নুসরাত। দুই বছর পার হলেও এখনও মা ও বোনের মৃতদেহ পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে এই পরিবারের জান্নাতুল ফেরদৌসী।

জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, আমার মা ও ছোট বোন অভিযান-১০ লঞ্চে আগুনে পুড়ে মারা গেছেন। দুই বছর হয় মায়ের মুখ দেখি না। এখন তো আর মৃতদেহ পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই। তবে যদি মায়ের কবরটা অন্তত পেতাম অথবা মায়ের মৃতদেহের একটি হাড্ডি যদি পেতাম তাহলেও বাড়িতে নিয়ে এসে দাফন করতাম।

১৪ জনের ডিএনএ ম্যাচ করেছে কিন্তু আমাদের কপাল খারাপ মায়ের সন্ধান পাইনি। সেই ১৪ জনের মধ্যে আমার মা নেই, বোনও নেই।

একই দুর্ঘটনায় নিখোঁজ রয়েছেন ফজিলা আক্তার পপি। তার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটার ছোট টেংরা গ্রামে। পপির মা আমেনা বেগম বলেন, আমরা কিছু চাই না শুধু আমার মেয়ের কবরটা চাই। জানিনা বেঁচে থাকতে আমাদের এই আশা পূরণ হবে কিনা। আমরা বেঁচে থাকতে আমাদের মেয়ে মারা গেল, এর থেকে কষ্টের বাবা-মায়ের আর কিছু থাকতে পারে না।

জেলা প্রশাসক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, শনাক্ত না হওয়া বাকি ৯ জনের মৃতদেহ শনাক্তের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতে কাজ করছে জেলা প্রশাসন।

ঘটনার দুই দিন পর ২৬ ডিসেম্বর বরগুনার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে লঞ্চের মালিক হাম জালাল শেখকে প্রধান ও ২০/২৫ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন আইনজীবী নাজমুল ইসলাম নাসির ও নৌ আদালতে পৃথক আরেকটি মামলা করেন নৌপরিবহন অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক মো. শফিকুর রহমান।

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts