ফল দেখে যেতে পারেননি ৪৩ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ২৮ তম পল্লব

মো. শহিদুল ইসলাম: ৪০ ও ৪১ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত পল্লব বসুর স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। ৪৩ তম বিসিএসে সে স্বপ্নপূরণও হয়েছে। তবে স্বপ্নের প্রশাসন ক্যাডারের ফলাফল দেখে যেতে পারেননি পল্লব বসু।

৪৩ তম বিসিএস এর ফল প্রকাশের সাত দিন আগে গত ২০ ডিসেম্বর মারা যান তিনি। এই সাফল্য তার পরিবারের শোক আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।

পল্লব বসু বাপ্পি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার মৃত দেবু প্রসাদ বসুর ছেলে। তিনি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।।৪০ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ পেয়ে ভোলার লালমোহন কলেজে অর্থনীতি বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেছিলেন তিনি। পরে ৪১তম বিসিএসে ফুড ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। সবশেষ মৃত্যুর সাত দিন পর ৪৩ তম বিসিএসে এডমিন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হন তিনি।

পল্লব বসুর মা কল্পনা বসু বলেন, ওর বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে দুই ভাই বোনকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। আমার ছেলে সারা জীবন ভালো রেজাল্ট করেছে। স্বপ্ন ছিল প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। ছেলের স্বপ্নপুরণ হলো কিন্তু ভগবান আমার বুকের ধনকে নিয়ে গেলো।

তিনি বলেন, ছেলে ডুপ্লেক্স বাড়ি করতে চেয়েছিলো। বাড়ি করার জন্য সবকিছু রেডি করেছে। এর মধ্যেই তার মৃত্যু হলো। এখন সব পড়ে আছে শুধু আমার ছেলে নেই। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন পল্লবের মা।

পল্লবের চাচা কৃষ্ণ কানাই বসু বলেন, গত ২০ ডিসেম্বর নতুন বাড়ির কাজ শুরু করার জন্য ইট বালু ও রড রেডি করেন। রাতে ব্যাডমিন্টন খেলতে গিয়ে বুকে ব্যথা অনুভব করেন। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে পল্লবকে আর বাঁচানো যায়নি। তার মৃত্যুর পর বিসিএস এর ফলাফল জানতে পেরেছি। সে ৪৩ তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে ২৮তম স্থান অধিকার করেছে। কিন্তু তা আর দেখে যেতে পারেনি।

পল্লব বসুর প্রতিবেশী জাহিদুল ইসলাম বুলু বলেন, ছোটবেলা থেকেই পল্লব আমাদের চোখের সামনে বেড়ে উঠেছে। পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ওর বাবা মারা যায়। তারপর ওর মা দুই ভাই বোনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। মায়ের একমাত্র অবলম্বন ছিল এই পল্লব বসু। মায়ের স্বপ্ন ছিলো ছেলে বড় হয়ে চাকরি করে তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন করবেন। পল্লব বসু সেভাবেই জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। প্রথমে ৪০ তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়ে ভোলার লালমোহন কলেজে যোগদান করেন। পরবর্তীতে ৪১ তম বিসিএসেও সে ফুড ক্যাডারের সুপারিশপ্রাপ্ত হন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিলো প্রশাসন ক্যাডার হওয়ার। ৪৩ তম বিসিএসে তার সেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে। কিন্তু ফলাফল প্রকাশের সাত দিন আগেই তাকে আমরা হারিয়েছি।

তিনি বলেন, পল্লবের ফলাফলটি ওর মা যখন জেনেছে তখন থেকেই তিনি স্বাভাবিক নেই। পাগলের মতো হয়ে গেছেন, তিনি শুধুই কান্না করছেন। তার দুঃখ যেন আরো বেড়ে গেলো।

অপর প্রতিবেশী তুহিন খান বলেন, পল্লবের অর্জনে আমরা সবসময় গর্ব করেছি। সে তিনবার বিসিএস দিয়েছে। প্রতিবার তার রেজাল্ট ভালো হয়েছে। ব্যক্তি হিসেবে সে অত্যন্ত ভালো ছিলো। আমাকে চাচা বলে ডাকতো। মৃত্যুর আগে পল্লব বাড়িতে এসেছিলো ডুপ্লেক্স বাড়ির কাজ শুরু করার জন্য। বাড়ির সামনের জায়গাতে পল্লব একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি করতে চেয়েছিলো। বাড়ির জন্য ইট বালু রেডি করেছিলো। সবকিছু সেভাবেই পড়ে আছে শুধু পল্লব নেই।

 

Print Friendly

Related Posts