রাজধানীতে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে দুই শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের সাতটি ইউনিট গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এর আগেই ট্রেনের চারটি কামরা পুড়ে গেছে। আহতদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।
বেনাপোল এক্সপ্রেস ১৫৪ যাত্রী নিয়ে শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) দুপুর ১টায় বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসে। যাত্রাপথে ১১টি স্টেশনে বিরতি নেয় বেনাপোল এক্সপ্রেস। ট্রেনে কমলাপুরগামী যাত্রী ছিলেন ৪৯ জন। ট্রেন ঢাকায় পৌঁছানোর কথা রাত ৯টার দিকে। এর মধ্যে গোপীবাগ পৌঁছালে আগুনের ঘটনা ঘটে।
বেনাপোল এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দগ্ধ আটজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের সবারই শ্বাসনালী পুড়ে গেছে। সর্বোচ্চ একজন দগ্ধের শরীরের ৯ শতাংশ পুড়ে গেছে। সবাই মানসিক ট্রমার মধ্যে রয়েছেন।
শনিবার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রধান সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আসিফ মোহাম্মদ খান নামে একজন রোগীর শরীরে ৮ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে। নাফিজ আলম নামে আরেকজনের ৫ শতাংশ পুড়েছে। এ দুজনসহ বাকিদের শ্বাসনালী পুড়ে গেছে।
ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, ‘সবাইকেই আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি। সব রোগীই আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে।’
ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান জানান, শুক্রবার রাত ৯টা ৫ মিনিটের দিকে তারা আগুন লাগার খবর পান। প্রথমে খিলগাঁও ও পোস্তগোলা ফায়ার স্টেশনের চারটি ইউনিট সেখানে ছুটে যায়। পরে আরও তিনটি ইউনিট পাঠানো হয়। শনিবার থেকে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের আগের রাতে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনটি বেনাপোল থেকে ঢাকায় আসছিল। কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছার আগে গোপীবাগ কাঁচাবাজার এলাকায় ট্রেনের একটি কামরায় আগুন দেখা যায়। গাড়িটি থামার পর আশপাশের লোকজন পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তবে তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। দ্রুত আগুন পাশের কামরায় ছড়িয়ে পড়ে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে তৎপরতা শুরু করেন।
এর আগে গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ওই ঘটনায় মা ও শিশুসহ চারজন পুড়ে মারা যান। আহত হন আরও অন্তত একজন। তবে আগুন দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের এখনও গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বিএনপির ডাকা হরতাল-অবরোধের মধ্যে গত দুই মাসে প্রায় ৩০০ যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে গাজীপুরে রেললাইন কেটে রাখার ঘটনায় একজনের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া একাধিক স্থানে রেললাইনে নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়।
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন পরিদর্শন শেষে রেলওয়ে পুলিশের ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্রেনে আগুন দেওয়া হয় বগির ভেতর থেকে। তবে কে বা কারা আগুন দিয়েছে, সেটি আমরা নিশ্চিত নই। তবে ‘চ’ বগির মাঝখানের বাম পাশে প্রথম আগুন জ্বলে ওঠে।
এই ঘটনায় গোপীবাগ এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে। রেলওয়ের ক্ষতিগ্রস্ত বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনটির গার্ড বাদী হয়ে মামলা করবেন। সেই প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে ট্রেনে আগুনের ঘটনা নিয়ে ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদের দাবি, বিএনপি এই নাশকতা চালিয়েছে। এর তথ্য-প্রমাণও তারা পেয়েছেন।
বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা কি না-তা খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি নিহতদের আত্মার মাগফিরাত করেছেন এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।
এদিকে ঢাকা থেকে সারাদেশে ছেড়ে যাওয়া ২১ জোড়া ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে সবগুলো লোকাল, মেইল ও কমিউটার ট্রেন। শনিবার সকালে কমলাপুর রেল স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার এ তথ্য জানিয়েছেন।
মাসুদ সারওয়ার বলেন, শনিবার ও রোববার এই দুই দিন ট্রেনগুলা বন্ধ থাকবে।