কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পদ্মা নদীর চর থেকে মিলন হোসেন (২৪) নামে এক যুবকের খণ্ডিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। লাশের ৯টি খণ্ড পৃথক ৬ জায়গায় পুঁতে রাখা হয়েছিলো।
শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে সদর উপজেলার হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ সংলগ্ন পদ্মার চর থেকে লাশের টুকরোগুলো উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, চাঁদার দাবিতে বহিস্কৃত হওয়া কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি এস কে সজিবের নেতৃত্ব এই হত্যাকাণ্ড। পুলিশ সজিবসহ ৫ জনকে আটক করেছে।
নিহত মিলন হোসেন দৌলতপুর উপজেলার পূর্ব বাহিরমাদি গ্রামের মাওলা বক্সের ছেলে। তিনি পরিবার নিয়ে কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং ই ব্লকের ভাড়া বাসায় থাকতেন।
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) পলাশ কান্তি নাথ জানান, গত ৩১ জানুয়ারি (বুধবার) সকালে মিলন বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। ঐ দিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী মুমো খাতুন কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির প্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। মুঠোফোনের একটি কল লিস্টের সূত্র ধরে প্রথমে মিলনের এক বন্ধুকে আটক করা হয়। তার স্বীকারোক্তিতে জানা যায় আরেকবন্ধু সজিবের নেতৃত্বে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। পরবর্তীতে গতকাল শুক্রবার বিকেলে অভিযান চালিয়ে সজিবসহ আরো চারজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মিলনকে হত্যা করে তার লাশ টুকরো করে নদীর চরে পুতে রাখার বিষয়টি স্বীকার করে। এরপর শুক্রবার দিবাগত রাত ২টার দিকে তাদেরকে নিয়ে হাটশ হরিপুর ইউনিয়নের কান্তিনগর বোয়ালদহ পদ্মা নদীর চরে অভিযানে যায় পুলিশ। রাতভর অভিযান চালিয়ে নদীর চরের ৬টি স্থান থেকে মিলনের খন্ডিত লাশ উদ্ধার করা হয়। এছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র বাঁধ বাজার এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।
তিনি আরো জানান, জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, টাকার দাবিতে মিলনকে হত্যা করা হয়েছে। জড়িতরা সবাই একে অপরের পরিচিত। মিলন বাড়ি থেকে অনলাইনে কাজ করতো। নিখোঁজের দিন তাকে মুঠোফোনে ডেকে হাউজিং এলাকার একটি বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। ঐদিন রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। এরপর লাশ গুম করার সুবিধার্থে ধারালো অস্ত্র দিয়ে লাশ টুকরো টুকরো করে নদীর চরে পুতে রাখা হয়েছিলো। আর এই পুরো হত্যাকাণ্ডটির নেতৃত্ব দিয়েছে তারই বন্ধু সজিব। এর সাথে অন্য কোন ঘটনা আছে কিনা তা নিয়ে আরো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এস কে সজিব কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি ছিলেন। কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরের অভিযোগে তাকে বহিস্কার করা হয়। সেই মামলায় জেল খেটেছে সে। এছাড়া তার নামে চাঁদাবাজিসহ বেশ কিছু মামলাও রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাউজিং এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছে, সজিবের নামে অনেক অভিযোগ রয়েছে। তার নেতৃত্বে একটি কিশোর গ্যাং পরিচালিত হয়। মিলন নামে যাকে হত্যা করা হয়েছে সেও তাদের মতোই ছিলো। তাদের কাজ ছিলো ছেলে মেয়েদের ব্লাক মেইল করে চাঁদা দাবি করা।