গরমে ধুকছে চিড়িয়াখানার হরিণ

শিরিন সুলতানা কেয়া: টানা তীব্র তাপদাহের কারণে মানুষের পাশাপাশি স্বস্তিতে নেই প্রাণিকূল। রাজশাহীর শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় থাকা শতাধিক হরিণ রীতিমতো ধুকছে গরমে।

কর্তৃপক্ষ বলছেন, রোদ থেকে রক্ষায় হরিণের শেডের ভেতরে ছাদসহ আলাদা শেড করে দেওয়া হয়েছে। রোদের সময় হরিণেরা সেখানে আশ্রয় নিয়ে ভাল থাকছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিণের শেডের পুরো এলাকাটিতেই পড়ছে কড়া রোদ। ভেতরে পশ্চিমপ্রান্তে লম্বালম্বি একটি শেড করা হয়েছে। তবে পূর্বমুখী এই শেডে প্রায় সারাদিনই রোদ পড়ে। সেখানে রোদের কারণে হরিণদের থাকা কষ্টকর হয়ে পড়ে। মাখখানে আরেকটি গোলাকার নতুন শেড করা হয়েছে। এর ছাদ দেওয়া হয়েছে টিনের। ফলে সেখানেও তাপের নিচে হরিণদের ছায়ায় আশ্রয় নিতে হয়। ধু ধু মাঠের মতো ভেতরের অংশটা ফাঁকা। গাছের কোনো ছায়া নেই। ভেতরে ছোট একটিমাত্র গাছ দেখা গেছে। তার নিচে হরিণেরা আশ্রয় নিতে পারে না। ফলে এই তাপদাহে হরিণদের ত্রাহি অবস্থা।

তীব্র তাপদাহের মধ্যে পানি পান করতে গিয়েও স্বস্তি মেলে না। শেডের ভেতরেই কংক্রিটের গোলাকার একটি পানি খাওয়ার জায়গা করেছে কর্তৃপক্ষ। তবে এটিও পড়েছে রোদের মধ্যে। ফলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এই পানি গরম হয়ে ওঠে। বর্তমান পরিস্থিতিতে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সব সময় পাম্পটি চালু রাখছে যেন পানি ঠাণ্ডা থাকে। সব সময় পানির পাম্প চালু রাখার কারণে অতিরিক্ত পানি উপচে পড়ে একটি নালা দিয়ে চলে যাচ্ছে।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন পরিচালিত এই চিড়িয়াখানায় এক সময় বাঘ, সিংহ, অজগর, বানর, হনুমান, ময়ূর, গাধা, ময়না, টিয়া, বেবুনসহ নানারকম পশু-পাখি ছিল। ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। করোনার সময় চিড়িয়াখানা বন্ধ হয়ে গেলে ভেতরে উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। এরপর হরিণ, পুকুরের দুটি ঘড়িয়াল, কবুতর, আর কিছু পাখি ছাড়া অন্য প্রাণিগুলো বিভিন্ন চিড়িয়াখানা ও পার্ককে অনুদান দেওয়া হয়। এছাড়া কিছু পশুপাখি বিক্রি করা হয়। কিছু উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এখন ভেতরে পশু-পাখির খাচার জায়গায় করা হচ্ছে খাবারের দোকানপাট।

বর্তমানে চিড়িয়াখানায় শুধু ১২০টি হরিণ, দুটি ঘড়িয়াল, কিছু কবুতর এবং পাখি রয়েছে। তীব্র গরমের কারণে ঘড়িয়াল দুটি পানির ওপরে আসছে না। কবুতর আর পাখিগুলোর অবশ্য থাকার জায়গা পুরো পুকুর ঘিরে করা খাচায়। ছায়ায় ঘেরা সে স্থানটি ঠাণ্ডা। কিন্তু কষ্টে আছে হরিণেরা।

তবে গরমের কারণে কোনো হরিণ অসুস্থ হয়ে পড়েনি বলে দাবি চিড়িয়াখানার সুপারভাইজার শরিফুল ইসলামের। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভেটেরিনারি সার্জন আছেন। তিনি মাঝে মাঝে এসে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। কোনো হরিণ অসুস্থ দেখা যায়নি। সবগুলোই ভাল আছে।’

ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই গরমে হরিণগুলোকে সুস্থ রাখতে ভেতরে ছাদ দেওয়া শেড করা হয়েছে। ভেতরে গাছও লাগানো হয়েছে ছায়া দিতে। তবে গাছ এখনও বড় হয়নি। গাছ বড় হলে সুবিধা পাওয়া যাবে। পর্যাপ্ত ঠাণ্ডা পানি সরবরাহ করা হচ্ছে যেন হরিণগুলো গরমের মধ্যেও সুস্থ থাকে। এখনও পর্যন্ত কোন সমস্যা দেখা যায়নি।’

আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গত রোববার রাজশাহীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে যায় ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। বৃহস্পতিবার তা ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে। এরপর শুক্রবার তাপমাত্রা ওঠে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পরদিন শনিবার ও রোববার তাপমাত্রা গিয়ে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে দাঁড়ায়। সোমবার তাপমাত্রা কিছুটা কমে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামে।

 

Print Friendly

Related Posts