মহাস্থানগড়ে সাধু সন্ন্যাসিদের মিলনমেলা

প্রাচীন পুণ্ড্রবর্ধনের রাজধানী বগুড়ার মহাস্থানগড়ে মিলন মেলায় মিলিত হয়েছিল হাজারো সাধু ও পুণ্যার্থী। অন্যরকম এক জেগে উঠেছিল প্রাণের স্পন্দন। প্রতি বছর বৈশাখের শেষ বৃহস্পতিবার এই মিলনমেলা বসে মহাস্থানগড় মাজার প্রাঙ্গণে।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ মে) ছিল সেই বিশেষ দিন। মহাস্থানগড়ে বি‌ভিন্ন স্থা‌নের বি‌ভিন্ন ত্ব‌রিকার সাধু সন্ন্যাসিরা তা‌দের ত্ব‌রিকার গান বাজনা ক‌রে আনন্দ উদযাপনে মেতে ওঠেন। এ দিন প্রতি বছর মহাস্থান মাজা‌রে প‌বিত্র ওরস মাহ‌ফিল অনু‌ষ্ঠিত হয়। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির জন্য শাহ সুলতান বলখি (রহ.)-এর মাজারে অবস্থান নিলেও সাধু ও বাউলরা অবস্থান নেন পাশের হজরত বোরহান উদ্দিন (রহ.) মাজার, পশ্চিম পাশের আমবাগান ও উত্তরপাশের আবাসিক এলাকার মাঝে। এছাড়া মাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের মাঠসহ পুরো মহাস্থান এলাকায় বসে মেলা।

বাউল-সাধু-সন্ন্যাসি কেন্দ্রিক এই মেলায় পিতলের বালা, মোটা পুথি ও পাথরের মালা, হুক্কা, একতারা, দোতারা, বাঁশের বাশি, বাউলদের তবলা, জুরির দোকানপাট বেশি বসে। এছাড়া মেলায় স্থানীয় প্রসিদ্ধ খাবার মহাস্থানের কটকটি ভক্তদের কাছে জনপ্রিয়। কটকটি বিক্রি হয় প্রচুর পরিমাণে। এবারও সে রকম দৃশ্যই দেখা গেলো।

মেলায় ঘুর‌তে আসা শেরপুর উপজেলার হাসান সানী বলেন, এটি একটি অন্য রকম মেলা। সাধারণত এতো বেশি সাধু সন্ন্যাসি অন্য কোন মেলায় দেখা যায় না। বাউল এবং ত্বরিকার গান ভালো লাগে যে কারণে তিনি দুপুরের পরেই মেলায় এসেছেন। ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন এসব ভক্ত আশেকানদের। তাদের ত্বরিকার গান এবং নাচ উপভোগ করছেন। রাত অবধি তিনি এসব উপভোগ করেন।

আরেফিন, হামিম, লিটনসহ কয়েক বন্ধু বগুড়া শহর থেকে মেলায় এসেছেন। তারা জানালেন, প্রতি বছরই তারা মেলায় আসেন। এসব সাধু সন্ন্যাসিদের সাথে সময় কাটান। ভালো লাগে তাদের।

গাইবান্ধা থেকে আসা লিটন ফকির জানান, গুরু ভক্তি ও আধ্যাত্মিক সাধনার জন্য এসেছি। শুধু আশেপাশের জেলাই নয়, সারাদেশসহ ভিন দেশ থেকেও অনেকে এসেছেন।

মহাস্থানগড়ের বাসিন্দা ইলিয়াস মিয়া জানান, শতাব্দীর পর শতাব্দী থেকে এ আয়োজন হয়ে আসছে। তবে ঠিক কবে বা কেন এ মেলার শুরু হয়েছিল কেউই নিশ্চিত নয়। প্রতিবছর পরিবারের ছোটদের নিয়ে ঘুরতে মেলায় আসি তাই এবারও এসেছি।

গতকাল মাজার এলাকায় অবস্থিত নাসির কটকটি ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মো. রঞ্জু ইসলাম জানান, মেলা উপলক্ষে প্রচুর বেচা বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ৯০ মন বিক্রি করেছি। এবার এর থেকে বেশি হবে আশাকরি। মাজারের আশে পাশে এবার বসেছিল অন্ততঃ দুইশো কটকটির দোকান। এসব দোকানে প্রতিবছর কোটি টাকার বেশি কটকটি বিক্রি হয় ।

মহাস্থান মাজার মসজিদ কমিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহেদুর রহমান জানান, মূলত বৈশা‌খের শুরু থে‌কেই সাধু সন্ন্যাসিরা দেশের বি‌ভিন্ন জায়গা থে‌কে মহাস্থা‌নগ‌ড়ের বি‌ভিন্ন স্থা‌নে অবস্থান নেন। মেলা উপলক্ষ্যে তাদের ঢল নামে। এর পাশাপাশি মেলায় দর্শনার্থীদেরও ঢল নামে। এবারও অসংখ্য সাধু সন্ন্যাসি মেলায় এসেছেন।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts