জামিনে মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী শেখ আসলাম (সুইডেন আসলাম)।
বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে তথ্য নিশ্চিত করেছেন গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত ৯টায় তিনি ওই কারাগার থেকে বের হন।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে হাজতি (নম্বর-৬৬৩/২০) শেখ আসলামের (৬২) কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী ছিলেন। গতকাল জামিনের কাগজপত্র কাশিমপুর কারাগারে পৌঁছায়। পরে কারা কর্তৃপক্ষ সেই জামিনের কাগজ যাচাই-বাছাই করে রাত ৯টায় তাকে মুক্তি দেয়।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালের ২৩ মার্চ গালিব খুন হন। এ ঘটনায় আসলামসহ ২০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলায় শেখ আসলামের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয়। ১৯৯৮ সালের ৮ এপ্রিল অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।
পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ আসলাম, ২৫ বছর ধরে যার ঠিকানা কারাগার। রাজধানীর ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম সুইডেন আসলাম। একসময় আসলামের পরিবারের বাস ছিল রাজাবাজারে। রাজধানীর ফার্মগেট পার হয়ে রাজাবাজার। সেখানে মধ্যবয়সী কয়েকজন জানালেন, আসলামের গ্রামের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায়। অনেক আগে থেকেই তার বাবা-চাচারা রাজাবাজারে থাকতেন। বাবা রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। আসলামরা দুই ভাই, এক বোন। মা-বাবা মারা গেছেন অনেক আগেই। আসলাম বিয়ে করেছেন দুটি। প্রথম স্ত্রী ইতির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর চাচাতো বোন সিমিকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তার কোনো সন্তান নেই। ছোট ভাই জাকির কলকাতায় থাকেন। কালেভদ্রে দেশে আসেন। ছোট বোন স্বামী-সন্তান নিয়ে তেজতুরীপাড়ায় বাস করেন। আসলামের এক চাচাতো ভাই থাকেন বাড্ডায়।
জানা গেল, আসলামের প্রবল আকর্ষণ ছিল অস্ত্রের প্রতি। কয়েকটি অস্ত্র ছিল তার। এগুলো ভাড়াও দিতেন তিনি। একবার তার ছোট ভাই গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েছিলেন অস্ত্রসহ। ওই ব্যক্তিরাই জানালেন, রাজাবাজারেই আছে আসলামের দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাড়ি। আসলাম গ্রেপ্তার হওয়ার ২৩ বছর পর্যন্ত তার ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। একসময় হাল ছেড়ে বছর দুয়েক আগে আবার বিয়ে করেছেন। আসলামের প্রথম স্ত্রী ছিলেন ইতি। তিনি সুইডেনপ্রবাসী ছিলেন। বিয়ের পর আসলামও সুইডেন গিয়ে কয়েক বছর ছিলেন। সেই সূত্রে তার নামের আগে জুড়ে যায় সুইডেন শব্দটি। একসময় ইতির সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়। জানা যায়, ইতি পরে আত্মহত্যা করেন।
আসলামের বিরুদ্ধে প্রথম হত্যা মামলা হয়েছিল আশির দশকে। রাজাবাজারে নাজনীন স্কুলের ভেতর দিনদুপুরে শাকিল নামের এক কিশোরকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ওই মামলা হয়। শোনা যায়, প্রেমিকাকে উত্ত্যক্ত করার জেরে ঘটেছিল ওই হত্যা। এরপর ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন ঢাকার অন্ধকারজগতে অবৈধ কয়েকটি অত্যাধুনিক অস্ত্রের মালিক।
সুইডেন আসলামের বিরুদ্ধে ২২টি মামলা রয়েছে। যার ৯টিই হত্যা মামলা। একটি বাদে সব মামলায়ই খালাস পেয়েছেন তিনি। তেজগাঁওয়ের যুবলীগ নেতা গালিবকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে করা মামলাটি বিচারাধীন। এ মামলায় জামিন পেয়ে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন শেখ আসলাম।
সুইডেন আসলাম ঢাকার নবাবগঞ্জ থানার ছাতিয়ার এলাকার শেখ জিন্নাত আলীর ছেলে।