ঢাকা, ১২ ডিসেম্বর: চলতি বছরের জুলাই ও আগস্টে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় যারা চোখে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছিলেন তাদের বেশির ভাগই নানা মানসিক রোগে ভুগছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট পরিচালিত এক গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুনতাসির মারুফ বুধবার (১১ ডিসেম্বর) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইওএইচ) আয়োজিত এক কর্মশালায় এ গবেষণার ফল তুলে ধরেন।
মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ৫৫ জন পুরুষের উপর ওই গবেষণা চালায়, যাদের বেশিরভাগই ২২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থী এবং এখন চোখের চিকিৎসায় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছেন। এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল আহতরা বিষণ্ণতা, উদ্বেগ বা মানসিক চাপ – এই তিনটি মানসিক রোগে কী মাত্রায় ভুগছেন তা পরীক্ষা করা।
গবেষণায় দেখা গেছে, আহতদের মধ্যে প্রায় ৭৫ শতাংশ হালকা থেকে গুরুতর বিষণ্নতায় ভুগছেন এবং তাদের মধ্যে ২৫ শতাংশের অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর স্তরে পৌঁছেছে।
এতে আরও দেখা গেছে, ৫০ শতাংশেরও বেশি ভুক্তভোগী হালকা থেকে গুরুতর উদ্বেগে ভুগছেন এবং ২০ শতাংশের বেশি অত্যন্ত গুরুতর উদ্বেগের সঙ্গে লড়াই করছেন এবং প্রায় ৬০ শতাংশ মানসিক চাপে ভুগছেন।
অরবিস ইন্টারন্যাশনালের সহযোগিতায় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট জুলাই আন্দোলনে আহতদের দৃষ্টিশক্তি ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ কর্মশালার আয়োজন করে, যেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান।
তিনি বলেন, বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সরকার সবকিছু করবে। তিনি আরও বলেন, “সরকার আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার জন্য কাজ করছে… আমরা আপনাদেরকে আপনাদের দাবি মোতাবেক সব ধরনের চিকিৎসা দেব।”
বিশেষ সহকারী বলেন,সরকার খরচ নিয়ে উদ্বিগ্ন নয় এবং আহতদের সর্বোত্তম চিকিৎসা দেওয়ার জন্য যেখানেই নেওয়া দরকার সেখানে নেওয়া হবে। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ১০ জনকে থাইল্যান্ডে ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
অধ্যাপক সায়েদুর রহমান বলেন, ডাটাবেজ চূড়ান্ত করতে বিলম্ব হওয়ায় জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের নিহত ও আহতদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির প্রক্রিয়া এখনো শেষ হয়নি।
তিনি বলেন, সরকার সাড়ে নয় হাজার থেকে ১০ হাজার আহতের নাম পেয়েছে এবং এখন পর্যন্ত তাদের অর্ধেকের তথ্য যাচাই করা সম্ভব হয়েছে। “যাচাই শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি এবং পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।”
আহতদের স্বীকৃতি ও পুনর্বাসনের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবির প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, সরকার কোনো বিতর্ক এড়ানোর জন্য একটু সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছে।
সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, এনআইওএইচ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ নেতৃস্থানীয় হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আগত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের একটি প্যানেল কর্মশালায় উপস্থিত আহতদের প্রশ্নের জবাব দেন।
আহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রশ্নের জবাবে প্যানেল সদস্যরা বলেন, তারা আহতদের শরীরে থাকা সকল বুলেট অপসারণের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন, তবে কিছু এখনও রয়ে গেছে। তারা আশ্বস্ত করেন যে, গুলিগুলো তাদের কোন ক্ষতি করবে না।
কর্মশালায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. সাইদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর, এনআইওএইচ-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী এবং অরবিস ইন্টারন্যাশনালের কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মুনির আহমেদ।
মো. সাইদুর রহমান তার বক্তৃতায় স্বীকার করেন যে আহতদের মধ্যে কেউ কেউ যে মানসিক আঘাতের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তা কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় মানসিক সহায়তা পাননি। তিনি আশ্বস্ত করেন যে, এখন থেকে তারা প্রয়োজনীয় সহায়তা পাবেন।
সচিব বলেন, আন্দোলনে আহতদের তথ্য-উপাত্ত চূড়ান্ত হওয়ার পর তাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হবে।
মো. আবু জাফর বলেন, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন এবং আহত হয়েছেন তাদের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য সরকার যথাসাধ্য চেষ্টা করবে।
ডা. মুনির তার বক্তৃতায় বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য সাধারণত বাংলাদেশে তার প্রাপ্য গুরুত্ব পায় না। “তবে আজকের কর্মশালা একটি ব্যতিক্রম। মানসিক স্বাস্থ্যকে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আমাদের কী উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে তা আমাদের খতিয়ে দেখতে হবে।”
সাঈদ রুমি/ঢাকা