প্রিন্সেস ডায়নার অবয়ব মানসপটে ভেসে উঠলেই যে কারোর নজর কাড়বে তার মনকাড়া সৌন্দর্য। বলা হয়, ‘সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র’। মুখ নয়, রানী এলিজাবেথের এই পুত্রবধূর হৃদয়টাও ছিল সোনায় মোড়া! কেউ বলতেন সুন্দরীদের ‘সুন্দরী’। ‘হাউস অফ উইন্ডসর’-এর চৌকাঠ ডিঙিয়ে তিনি আন্তরিকভাবেই মিশে যেতে চেয়েছিলেন সাধারণ মানুষের মধ্যে।
পুরো নাম ডায়ানা ফ্রান্সেস স্পেন্সার। বিবাহ পরবর্তী নাম ডায়ানা ফ্রান্সেস মাউন্টব্যাটেন-উইন্ডসর। জন্ম ১ জুলাই, ১৯৬১। যুবরাজ চার্লসের প্রথম স্ত্রী এবং ১৯৮১ হতে ১৯৯৭ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের যুবরাজ্ঞী। তার পুত্র রাজপুত্র উইলিয়াম ও হ্যারি, ব্রিটিশ মসনদের উত্তরাধিকারীদের তালিকায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয়।
বিয়ের পর থেকে ১৯৯৬ তে বিবাহ বিচ্ছেদ পর্যন্ত তাকে সম্বোধন করা হত ‘হার রয়াল হাইনেস দি প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স’। এর পরে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের আদেশক্রমে তাকে শুধু ডায়ানা, প্রিন্সেস অফ ওয়েল্স বলে সম্বোধনের অনুমতি দেয়া হয়।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের বধূদের মধ্যে ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন কেবল একজন। প্রিন্সেস ডায়না ও চার্লসের প্রেম ছিল সেরা রোমাঞ্চকর কাহিনী। ডায়নাকে দেখেই তার রূপে মুগ্ধ হয়েছিলেন তৃতীয় চার্লস। চার্লসের দৃষ্টিতে ডায়না পৃথিবীর সেরা সুন্দরী। আর ডায়নার দৃষ্টিতেও প্রিন্স চার্লসই সবচেয়ে আরাধ্য পুরুষ। দুজন দুজনের প্রেমে মজে গেল। সারা বিশ্বে ঝড় উঠল।
রানী এলিজাবেথ প্রথমে এ বিয়েতে অমত করলেও পরে রাজি হয়ে যান। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই ধুমধামের সঙ্গে তাদের বিয়ে হয়ে গেল। বিশ্বের প্রায় ৫০০ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় উপভোগ করল সত্যিকারের এক রাজকীয় বিয়ে। সেই সময় প্রিন্স চার্লসের বয়স ছিল ৩২ আর প্রিন্সেস ডায়ানার বয়স ২০। চরম উৎসাহ-উদ্দীপনা আর আনন্দের জোয়ারে শুরু হলো প্রিন্স চার্লস আর প্রিন্সেস ডায়নার নতুন জীবন। রাজকীয় জাহাজ ব্রিটানিয়াতে চড়ে হানিমুন করলেন তারা। সব ঠিকঠাক মতোই চলছিল। কিন্তু আস্তে আস্তে ফিকে হতে লাগল সম্পর্ক। এর মধ্যে বিয়ের এক বছরের মাথায় ডায়ানা অনুভব করলেন চার্লস তাকে আগের মতো আর ভালোবাসে না।
একান্তে সময় দিতে চায় না। একটু যেন বেশিই ব্যস্ততা দেখাচ্ছে। চাইলেই এড়িয়ে যায়। বিষয়টি এক দিন-দুই দিন করে বেশ ক’দিন ধরে খেয়াল করলেন ডায়ানা। এরপর প্রিন্সকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন এই অবহেলার কী মানে। প্রিন্স তখন এড়িয়ে গেলেন। ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রাজা হিসেবে তার ব্যস্ততার কথা বলে স্ত্রীর ভালোবাসাকে চেপে রাখলেন। আর এসব নিয়ে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে। দুজনেই দুজনকে সন্দেহ করতে থাকলেন। প্রিন্স চার্লসও ডায়ানাকে নিয়ে নানা ঘটনা-রটনার খবর জানলেন।
বিয়ের সাত বছর পর ঘটল মারাত্মক ঘটনাটি। ১৯৮৯ সালের প্রথম দিকে প্রিন্স চার্লসের হাতে এলো একটি টেপ রেকর্ড ক্যাসেট। তাতে দুটি কণ্ঠের সংলাপ। একটি নারীকণ্ঠ, অন্যটি পুরুষ। নারীকণ্ঠটি প্রিন্সেস ডায়ানার। পুরুষকণ্ঠটি জেমস গিলাবের। চার্লস অনুসন্ধান করে জানলেন গিলাব ছিলেন ডায়ানার বিয়ে-পূর্ব জীবনের বয়ফ্রেন্ড। আর এই কথোপকথনটি ওই সময়ের। ক্যাসেট প্রকাশের পর সারা বিশ্বে আলোড়ন ওঠে। এর ছোঁয়া লাগে রাজপ্রাসাদেও। সংসারে ভাঙনের সুর ওঠে। ডায়ানা ও চার্লস আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা থাকার ঘোষণা দেন। এরপর মিসরীয় ধনকুবের দোদি আল ফায়েদের সঙ্গেও জড়ান ডায়ানা। মৃত্যুর সময় তিনি-ই সঙ্গী ছিলেন।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ডায়ানার পরিচিতি যে দানশীলতার জন্য, তা ঢাকা পড়ে যায় বিভিন্ন কেলেঙ্কারীর গুজবে। চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার দাম্পত্য সুখের হয়নি। নব্বুইয়ের দশকে ডায়ানার পরকীয়া প্রেমের কাহিনী সারা বিশ্বের পত্র-পত্রিকায় ছড়িয়ে যায়। চার্লসের বিশ্বাসঘাতকতাসহ নানা কারণে অবশেষে ১৯৯৬তে ঘটে বিবাহ বিচ্ছেদ।
চার্লসের সঙ্গে বাগদানের পর থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত ডায়ানা ছিলেন পৃথিবীর সবচেয়ে খ্যাতিমান নারী। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, এইডস রোগ বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে তার অবদান, ভূমি মাইনের বিরুদ্ধে তার আন্দোলনই বিখ্যাত করেছে তাকে। তার জীবদ্দশায় ডায়ানাকে বলা হত বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী। সমালোচকদের মতে, এই খ্যাতি আর খ্যাতির জন্য প্রচেষ্টাই ডায়ানার জীবনে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যার পরিণতি ফ্রান্সের প্যারিস শহরে ১৯৯৭ সালের গাড়ি দুর্ঘটনা। সেই দিনটি-ই ৩১ আগস্ট। না ফেরার দেশে চলে যেতে হয় তাকে।
প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু আজো রহস্যের চাদরে আবৃত। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যপ্রমাণ বলছে, সড়ক দুর্ঘটনায় বন্ধু দোদি আল-ফায়েদসহ তার মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের হাতে আসা কিছু তথ্য বলছে, হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন আলোচিত এই রাজবধূ। তথ্যসূত্র : বিবিসি, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ (আগষ্ট ১৯, ২০১৩)।
নতুন তথ্যটি বলছে, ডায়ানার হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন এক ব্রিটিশ সেনা। অন্য একটি সেনাসূত্র থেকেই এই গোপন তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্রটির দাবি, সড়ক দুর্ঘটনায় নয়, বরং ডায়ানা তার বন্ধু দোদি এবং গাড়িচালক হেনরি পল হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিলেন। আর এই হত্যাকান্ডের পেছনে এক ব্রিটিশ সেনা দায়ী। ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য সানডে পিপল’ জানিয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র একজন ব্রিটিশ সেনাকে অভিযুক্ত করে সাত পৃষ্ঠার একটি চিঠি লিখেছেন, যেখানে ডায়ানা ও তার বন্ধুর মৃত্যুর পেছনে রাজকীয় ব্রিটিশ বিশেষ বিমান বাহিনীর সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া এক ব্রিটিশ সেনার হাতে ডায়ানা, দোদি ও তাদের গাড়িচালক পল নিহত হয়েছিলেন বলেও একটি তথ্য তাদের কাছে এসেছে বলে জানিয়েছে স্কাই টিভি।
ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। রাজপরিবারের মুখপাত্র এবং ডায়ানার দুই সন্তান প্রিন্স উইলিয়াম এবং হ্যারি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে ডায়ানার হত্যাকান্ডে ব্রিটিশ সেনা জড়িত থাকার তথ্য পুরনো একটি অভিযোগকে আবারো সামনে নিয়ে এলো। এর আগেও অভিযোগ তোলা হয়, ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের হুকুমেই খুন হয়েছিলেন ডায়ানা এবং দোদি যুগল। দোদির বাবা মোহাম্মদ ফায়েদ-ও চেষ্টা করেছিলেন ওই দুর্ঘটনাটিকে হত্যাকান্ড বলে প্রমাণের। কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি ডায়ানার দুই সন্তানের কথা ভেবে ওই প্রচেষ্টায় ক্ষান্ত দেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৯৭ সালের ৩১ আগস্ট প্যারিসের রিজ হোটেল থেকে বের হওয়ার সময় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন প্রিন্সেস ডায়ানা, তার বন্ধু দোদি ও গাড়িচালক হেনরি পল। ধারণা করা হয়, পাপারাজ্জিদের এড়াতে দ্রুত গাড়ি চালাতে গিয়েই দুর্ঘটনার শিকার হয় তাদের গাড়িটি। আর এধারণাটিই এখনো প্রতিষ্ঠিত।
ডায়ানার মৃত্যু-রহস্য তদন্তকারী আদালতের সামনে সাক্ষ্য দানকালে রডনি টার্নার জানান, ১৯৯৭ সালের মধ্য-আগস্টে ডায়ানার সঙ্গে এক আলাপকালে তিনি জানতে পারেন, দোদির সঙ্গে প্রিন্সেস ডায়ানা সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এর দুই সপ্তাহ পরে মারা যান ডায়ানা ও দোদি। অনেকের মতেই পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন ডায়ানা। তবে ডায়ানার মৃত্যু হত্যা নাকি নিছকই দুর্ঘটনা সেটি আজও রহস্যই রয়ে গেছে। দীর্ঘ ১৮ বছরেও যার সুরাহা হয়নি প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু রহস্যের।
সেদিন সড়ক দুর্ঘটনাটি ঘটেছিল মধ্য রাতের একটু পরে। পাপ্পারাজি নামে পরিচিতি নাছোড়বান্দা ফটো সাংবাদিকদের লেন্স থেকে আত্মরক্ষা করার জন্য ডায়ানা এবং দোদি ফায়াদ অনেকটা গোপনে এবং তীব্র বেগে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে এসেছিলেন রিৎজ হোটেল থেকে। গাড়িটির চালকের আসনে ছিলেন হোটেলটির নিরাপত্তা বিভাগের উপ প্রধান হেনরি পল। প্যারিসের পন্ট-ডি-আলমা রোড টানেলে পাড় হওয়ার সময় দুর্ঘটনা ঘটে। দোদি-ডায়ানাকে বহনকারী মার্সিডিজ গাড়িটি ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে আঘাত করে টানেলের ১৩তম স্তম্ভকে। কংক্রিটের এ স্তম্ভের সঙ্গে ধাক্কা খাওয়ার পরিণামে গাড়িটি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে যায়। আর ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান দোদি ও গাড়ি চালক হেনরি পল। ডায়ানা মারা যান এ দুর্ঘটনার কিছু পরেই।
ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাবেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এ দুর্ঘটনায় প্রাণ না হারালে হয়ত এটি একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হতো। কিন্তু মৃত্যুর কয়েকে ঘণ্টার মধ্যেই ডায়নার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা শুরু হয়। এ সব, প্রশ্নের প্রধান লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ রাজপরিবার বিশেষ করে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
মাতাল চালকের কারণেই ডায়নার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়েছে। এ কথা জোর দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে দাবি করেছ ব্রিটিশ প্রশাসন। কিন্তু দুর্ঘটনার বিষয়ে পুরো সত্যি কথা এ বিবৃতিতে দেয়া হয় নি বলেই অনেকেই মনে করেন। তারা মনে করছেন এ দুর্ঘটনায় হয়ত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের গোপন হাত ছিল! তারা বলে থাকেন, দোদির সঙ্গে ডায়ানার সর্ম্পক ব্রিটিশ রাজ পরিবারের কট্টর ভাবমূর্তির প্রতি হুমকিই ছিল। তাই রাজ পরিবার তা মেনে নিতে পারেনি এবং দুর্ঘটনা সাজিয়ে ডায়ানাকে হত্যা করা হয়েছে।
ডায়ানার মৃত্যুকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জবাব এখনও পাওয়া যায় নি। মনে করা হয় এ দুর্ঘটনার পেছনে একযোগে কাজ করেছে ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এমআই ৫ এবং ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
মনে করা হয়, ব্রিটেনের ভবিষ্যৎ রাজার সৎ পিতা হিসেবে একজন মুসলমানকে মেনে নিতে পারে নি ব্রিটিশ রাজপরিবার। মধ্যযুগে এমন ঘটনা ঘটলে সরাসরি ডায়ানার শিরোচ্ছেদ করা হতো।
ডায়ানার সঙ্গে দোদির সম্পর্ক নিয়ে ব্রিটিশ রাজপরিবারের উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গির বিষয়ে নানা স্পর্শকাতর কথা বলেছেন তার বাবা মোহাম্মদ। তিনি মনে করেন, প্রিন্স ফিলিপ কিছুতেই মেনে নিতে পারেন নি যে ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত রাজার সৎপিতা হবেন একজন মুসলমান। রিৎজ হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে দোদি ও ডায়ানা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন বলে দাবি করেছেন মোহাম্মাদ। একই সঙ্গে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথাও ব্যক্ত করেছিলেন তারা।
দুর্ঘটনার দু’দিন পরই ফরাসি পুলিশ দাবি করে, ডায়ানার গাড়ি চালক মাতাল ছিলেন। নির্ধারিত মাত্রার তিনগুণ বেশি মদ পান করেছিলেন সে দিন হেনরি পল। কিন্তু চারদিন পর ফরাসি পুলিশের সে বক্তব্য প্রত্যাখান করেন দোদির পরিবার। তারা নিজেদের বক্তব্যের সমর্থনে নিরাপত্তা ভিডিওর একটি ফুটেজ প্রকাশ করেন। এতে হেনরি পলকে দেখে মনে হচ্ছিল না তিনি মাতাল ছিলেন বা অতিমাত্রায় মদ পান করেছিলেন। এ ভিডিও বেশ বিশ্বাসযোগ্য ছিল। ফরাসি পুলিশের বক্তব্য এতে একবারে ধূলিস্মাৎ হয়ে যায়।
অন্যদিকে ডায়নার গাড়ি চালকের রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে উচ্চ মাত্রায় মদ পাওয়া গেছে বলে জানায় ব্রিটিশ পুলিশ। তাতে বোঝা যাচ্ছে পুরো মাত্রায় মাতাল ছিলেন হেনরি পল। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, পলের রক্তের নমুনায় আলবেনডাজোল নামের একটি ওষুধের উপস্থিতি ধরা পড়েছে বলে ব্রিটিশ পুলিশ দাবি করেছে। কিন্তু পলের চিকিৎসক কখনো ব্যবস্থাপত্রে এ জাতীয় ওষুধের কথা লিখেন নি বলে জানিয়েছেন। অন্যদিকে পল নিয়মিত অ্যকামপ্রোসটেট নামে একটি ওষুধ খেতেন কিন্তু রক্তের নমুনায় এর উপস্থিতি ধরতে পারে নি ব্রিটিশ পুলিশ। সাদা চোখেই ব্যাপারটি রহস্যজনক মনে হবে যে কারো কাছে!
রহস্য রয়েছে মার্সিডিজ বেঞ্চ নিয়েও। দুর্ঘটনার সময়ে ডায়ানা ও দোদি কালো রঙের মার্সিডিজ এস২৮০ গাড়িতে ছিলেন। প্যারিসের একটি কোম্পানি থেকে এ গাড়ি ভাড়া করা হয়েছিল। সে রাতে এ ছাড়া ডায়ানার চড়ার উপযোগী আর কোনো গাড়ি পাওয়া যায় নি। ভাড়া করার আগে এ গাড়িটি চুরি গিয়েছিল এবং ফরাসি পুলিশ পরে এটাকে খুঁজে বের করেছিল। গাড়িটির একটি মাত্র কম্পিউটার চিপ(সিইউ) খোয়া গিয়েছিল। এই চিপের সাহায্যে গাড়িটির গতি, চলার দিক, স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। কেউ কেউ মনে করেন, গাড়িটি চুরি করে তাতে রদবদল ঘটিয়ে নতুন একটি চিপ বসিয়ে দেয়া হয়েছিল। গাড়িটিকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এ ভাবে চিপ বসিয়ে দেয়া হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
সবচেয়ে রহস্যজনক হলো, মার্সিডিজ কোম্পানি কখনোই গাড়িটির ধংসাবশেষ পরীক্ষা করে নি। যদিও মারাত্মক দুর্ঘটনার পর এ জাতীয় পরীক্ষা করার রেওয়াজ প্রচলিত আছে। এ ভাবে পরীক্ষা করে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় সত্যিই কোনো রদবদল করা হয়েছে কিনা তা সহজেই নির্ধারণ করতে পারেন একজন দক্ষ প্রকৌশলী ।
সরকারি নানা বক্তব্য থেকেই জানা গেছে মারাত্মক ভাবে আহত ডায়নাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিতে ৭৫ থেকে ৯৫ মিনিট লেগেছে। প্যারিসের ব্যস্ত মুর্হুতে দুর্ঘটনাস্থল থেকে এ হাসপাতালে পৌঁছাতে বড়জোর ১১ মিনিট লাগে। এ দুর্ঘটনা ঘটেছিল মধ্যরাতের প্রায় নির্জন রাস্তায়। তাই হাসপাতালে পৌঁছাতে এরচেয়েও অনেক কম সময় লাগাটাই তো স্বাভাবিক ছিল!
এ ছাড়া ডায়ানাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স প্যারিসের ন্যাচারাল হিস্টোরি মিউজিয়ামের কাছে থেমে ছিল। অ্যাম্বুলেন্সের লগ থেকে এ কথা জানা গেছে। বলা হয়েছে, ডায়ানার অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠায় এ ভাবে অ্যাম্বুলেন্সকে দাঁড়া করিয়ে রাখা হয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সকে এখানে ১০ মিনিট দাঁড়া করিয়ে রাখা হয়েছিল। অথচ এখান থেকে হাসপাতালে যেতে ৩০ সেকেন্ডের বেশি লাগার কথা নয়। এ ছাড়া, ডায়ানার অবস্থা শোচনীয় হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কাউকে অ্যাম্বুলেন্সে জরুরি তলব দেয়া হয় নি।
দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কথা আগেভাগেই টের পেয়েছিলেন ডায়না? সাবেক বাটলার পল ব্রুররেলের কাছে লেখা চিঠিতে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর পূর্বাভাষ দিয়েছিলেন ডায়ানা। তিনি লিখেছিলেন, ক্যামেলিয়াকে বিয়ের পথ সুগম করার জন্য তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছেন রাণীর স্বামী ( প্রিন্স ফিলিপ)। গাড়ি দুর্ঘটনা, ব্রেক ফেইল বা মাথায় মারাত্মক কোনো আঘাত যেন পায় তার ষড়যন্ত্র চলছে বলে এ চিঠিতে উল্লেখ করেছিলেন ডায়ানা। এর কয়েক মাস আগে বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কঠোর সমালোচনা করেছিলেন ডায়ানা।
অন্যদিকে ফরাসি আইনের বিরোধী হওয়া সত্ত্বেও ডায়নার মরদেহ শীতল হয়ে আসার আগেই তাতে অবৈধভাবে পচনরোধক রাসায়নিক উপাদান মাখান হয়। দেহ ত্বককে যেনো সুন্দর দেখা যায় সে জন্য মৃতদেহের রক্ত বের করে যন্ত্রের সাহায্যে দেহে ঢোকান হতে থাকে কিছু রাসায়নিক উপাদান। ফলে মৃতদেহের সঠিক ময়না তদন্ত কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। অ্যাম্বুলেন্সে করে আহত ডায়ানাকে নিয়ে যাওয়ার পথে তার দেহে কোনো কিছু করা হয়েছিল কিনা এ কারণে তা নির্ণয় করতে পারেন নি চিকিৎসকরা।
এদিকে, যখন ডায়ানার মরদেহে যখন এ উপাদান মাখার কাজ জোরেশোরে চলছে তখন ভিন্ন আরেক নাটক চলছে দুর্ঘটনাস্থলে। দ্রুত ধুয়েমুছে সাফ করা হয় দুর্ঘটনাস্থলকে এবং তা জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। দুর্ঘটনার মাত্র এক ঘণ্টা বা তার চেয়ে একটু বেশি সময়ের মধ্যেই এ কাজটি তড়িঘড়ি করা হয়েছিল। এসব নানা প্রশ্নে ডায়ানার মৃত্যু রহস্যাবৃত হয়ে আছে আজো।