জঙ্গিরা ক্যাপটাগন খায়নি!

বিডিমেট্রোনিউজ হলি আর্টিসানে জঙ্গিদের বর্বর এই আচরণ দেখে অনেকের ধারণা ছিল, জঙ্গিরা আইএস ড্রাগ হিসেবে পরিচিত ক্যাপটাগন খেয়েছিল। গুলশানের হামলার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমেও এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। গুলশানের হলি আর্টিসান বেকারিতে গত ১ জুলাই চরম নৃশংসতা চালায় জঙ্গিরা। ছয় জঙ্গি হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে। রেস্তোরাঁয় ঢুকে জঙ্গিরা প্রথমে এলোপাতাড়ি গুলি করে। পরে কয়েকজনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। অনেককে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। রক্তাক্ত লাশের পাশে বসে জঙ্গিরা খাবারও খেয়েছিল।

 

এরপর জঙ্গিদের শরীরে ক্যাপটাগনের নমুনা রয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হতে আলামত পাঠানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআইর ল্যাবে। এ ছাড়া দেশেও একই ধরনের নমুনা পরীক্ষার জন্য আলামত সংগ্রহ করেন চিকিৎসকরা। ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করে এফবিআই এরই মধ্যে মামলার তদন্ত সংস্থাকে জানিয়েছে, নিহত ছয় জঙ্গির শরীরে ক্যাপটাগনের আলামত পাওয়া যায়নি। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন বাংলাদেশ পুলিশের কাছে আসতে আরও কয়েক দিন লাগতে পারে।

তদন্তের সঙ্গে যুক্ত একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেন। ওই সূত্রটি বলছে, নিহত জঙ্গিদের সম্পদের ব্যাপারে জানতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়া হবে। দেশের বাইরে যার যার কাছ থেকে জঙ্গিরা অর্থ পেত, এ ব্যাপারে নিবিড় তদন্ত শুরু হয়েছে। জঙ্গি অর্থায়নের দেশি-বিদেশি সূত্র পুরোপুরি নিষ্ক্রিয় করতে চান গোয়েন্দারা।

দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, ক্যাপটাগন এক ধরনের বিশেষ ড্রাগ। এটি অ্যামফেটামিন গোত্রের ওষুধ। এটি যারা সেবন করে, তাদের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। সেবনকারীরা একরোখা চিন্তা করে থাকে। ক্যাপটাগন-জাতীয় ওষুধ দেশে নেই। পশ্চিমা দেশগুলোতে আশির দশক থেকে এটি নিষিদ্ধ। শুধু মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে এই ওষুধ সহজে পাওয়া যায়। এই ওষুধ খেলে স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনা থাকে না। সিরিয়া ও ইরাকে আইএস যোদ্ধাদের ক্যাপটাগন দেওয়া হয়। এটি ‘আইএস ড্রাগ’ হিসেবে পরিচিত।

 

গুলশানে হামলায় জঙ্গিদের বর্বরতা ও অমানবিক আচরণ দেখে অনেকের ধারণা ছিল, হয়তো তাদের ক্যাপটাগন খাওয়ানো হয়েছিল। ওই ঘটনার পর দেশি জঙ্গিদের সঙ্গে ক্যাপটাগনের যোগসূত্র থাকার আশঙ্কার বিষয়টি সামনে আসে। তবে এখন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে সেই ধারণা ভুল বলে প্রমাণিত হলো। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হলি আর্টিসানে হামলাকারীদের এমনভাবে ‘মগজধোলাই’ করা হয়েছিল, যা ক্যাপটাগনের চেয়ে কার্যকর। এতে তারা অমানবিক হয়ে ওঠে।

গত বছর ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএসের যোদ্ধারা ক্যাপটাগন ওষুধ সেবন করে। এতে তারা দিনের পর দিন জেগে থাকে। নৃশংসভাবে তারা মানুষ খুন করতে পারে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী একাধিক কর্মকর্তা সিসিটিভির ফুটেজসহ নানা তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে  জানান, বন্দুকধারীরা হেঁটে রেস্টুরেন্টে ঢোকে। ঢুকেই তারা বিদেশি নাগরিক ও বাঙালিদের আলাদা করে। এর পর বিদেশিদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি করতে থাকে। ভয় ও আতঙ্কে অনেকে টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন। রেস্টুরেন্টের ওয়েটাররা বাথরুমে ঢুকে পড়েন। এরপর অস্ত্রধারীরা বাইরে থেকে বাথরুমের দরজা তালাবদ্ধ করে রাখে। রাত সাড়ে ১০টার মধ্যে জিম্মিদের অনেককে নৃশংসভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়। জিম্মিদের সাতজনকে পেছন থেকে ঘাড়ে গুলি করা হয়। তাদের মধ্যে চারজন ইতালির নাগরিক, দু’জন জাপানের ও একজন ভারতের নাগরিক তারুশি জৈন। তারুশির সারা দেহে ৪০টি মতো কোপ ও ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া একজন বাংলাদেশি, একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকসহ ১০ জনের ঘাড়ে ও গলায় চাপাতির কোপ ছিল।

সূত্র : সমকাল

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts