দুই বিমানবন্দরে তিন বছরে ২৭৩২ কেজি সোনা উদ্ধার

বিডিমেট্রোনিউজ ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুই বিমানবন্দর থেকে গত তিন অর্থবছরে প্রায় ২ হাজার ৭৩২ কেজি সোনা জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর এবং ঢাকা কাস্টমস। জব্দ করা এসব সোনার বাজারমূল্য প্রায় ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা। এই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দাদের সোনা জব্দের ঘটনায় ২৩৪টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে ১৯৯টি মামলায়।

অন্তত ৩০টি অভিযোগপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তাতে সোনা চোরাচালানে জড়িত সংঘবদ্ধ চক্রগুলোর কার্যক্রম, এর প্রধান ব্যক্তি কারা, সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নেই। বেশির ভাগ অভিযোগপত্রের ভাষা প্রায় একই ধরনের। অভিযোগপত্রে সোনা বহনের সময় আটক ব্যক্তিদের বাইরে অন্য কাউকে আসামি করা হয়নি। কার কাছ থেকে সোনা এসেছে, কোথায় যাবে বা কে অর্থের জোগান দিয়েছে—সেই রহস্য বের করতে পারেনি পুলিশ।

ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬৯৯ গ্রাম সোনাসহ ২০১৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর আটক হন কাউছার হামিদ (২৬)। তিন মাস তদন্ত শেষে ৩১ মার্চ ২০১৪ তাঁর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ। অভিযোগপত্রে কাউছারকে চোরাচালান চক্রের সক্রিয় সদস্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই চক্রের অন্য সদস্য কারা বা চক্রের মূল হোতা কে, সে সম্পর্কে কিছুই বলা হয়নি অভিযোগপত্রে।

আবার তদন্তে সন্দেহভাজন কারও নাম পাওয়া গেলেও পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা বের করতে না পারায় সন্দেহভাজনদের ছাড়াই অভিযোগপত্র জমার নজির রয়েছে। ২০১৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিভিল এভিয়েশনের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম দেওয়ানসহ (৩০) তিনজন ১১ কেজি ৩০০ গ্রাম সোনাসহ আটক হন। পরদিন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিমানবন্দর থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তদন্তে এই তিনজন ছাড়া আরও দুজনের নাম সন্দেহভাজন হিসেবে পাওয়া যায়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে সোনা বহনের সময় আটক তিনজনকে আসামি করেই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। এতে সোনা বহনকারী ছাড়া চোরাচালান চক্রের অন্যরা ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে গেছে।

দেশে সোনা চোরাচালানের প্রধান দুটি পথ ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ঢাকা কাস্টমস সূত্র জানায়, গত তিন অর্থবছরে সরকারি এই সংস্থা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১ হাজার ৪৩২ কেজি সোনা জব্দ করেছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ৫৭০ কোটি টাকা। এ ছাড়া একই সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর ঢাকার শাহজালাল ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কেজি সোনা জব্দ করেছে।

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালানের ঘটনায় ২০১৩ সালের জুলাই থেকে গত মার্চ পর্যন্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ২৩৪টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯৫টি মামলা হয়েছে ঢাকার বিমানবন্দর থানায় এবং ৩৯টি মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায়। এসব মামলায় ৩১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাঁদের অধিকাংশই সোনাসহ হাতেনাতে আটক হন।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts