বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ যুক্তরাজ্যের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া এক নারী চিত্রশিল্পীকে ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। কৌশলে ওই নারীকে প্রথমে বড় অঙ্কের আর্থিক পুরস্কারের প্রলোভন ও পরে মানি লন্ডারিংয়ের মামলার ভয় দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারকরা।
এ ঘটনায় গত শুক্রবার ঢাকার খিলক্ষেত ও লেক সিটিতে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচজন নাইজেরিয়ান ফুটবলার। বাকি দুজন বাংলাদেশি।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. কাউসার আহমেদ, রাইসুল ইসলাম আসাদ, ওগোখোয়া ওনোচি (৩২), মরিস (৩৪), ওবিনা (৩৫), হ্যানরি ওরফে শর্ট হ্যানরি (২৪), এন্থনি কেজিতো অ্যারেঞ্জি (২৬)।
সোমবার দুপুরে রাজধানীর সিআইডির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম।
মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, পেশায় চিত্রশিল্পী নাদিরা আক্তার যুক্তরাজ্যের একটি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন। প্রতারক চক্র এ তথ্য সংগ্রহ করে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার কর্মকর্তা পরিচয়ে নাদিরা আক্তারকে ফোন করে বলে, ‘আমি ইংল্যান্ড থেকে বলছি। তুমি ইংল্যান্ডে প্রতিযোগিতার জন্য যে ছবি পাঠিয়েছ সেটা পুরস্কার পেয়েছে। তোমার পুরস্কার পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
পরে শামীমা রহমান নামের একজন নাদিরা আক্তারকে ফোন দিয়ে বলে, ‘আমি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বলছি। আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে। এখানে ৩ লাখ পাউন্ড আছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ পার্সেলটি স্ক্যান করে পাউন্ড দেখে আটকে দিয়েছে। পার্সেলটি ছাড়িয়ে নিতে অনেক টাকা লাগবে।
এরপর থমাস কিং নামের আরেকজন নাদিরা আক্তারকে ফোন করে জানায়, সে তার নামে যে পার্সেল পাঠিয়েছে তা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ আটকে দিয়েছে এবং মামলা হয়েছে। পার্সেলটিতে ৩ লাখ পাউন্ডসহ আরো মূল্যবান উপহার আছে। পার্সেলটি যেকোনোভাবে ছাড়িয়ে আনতে বলে থমাস কিং। প্রয়োজনে টাকা খরচ করতে বলে সে।
নাদিরা আক্তারকে দফায় দফায় থমাস কিং এবং শামীমা রহমান ফোন দিয়ে পার্সেল ছাড়িয়ে নিতে টাকা দিতে বলতে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকা ও বিভিন্ন দামি উপহারের জন্য টাকা খরচ করার জন্য নাদিরা আক্তারও সম্মত হন। থমাস ও শামীমার কথা বিশ্বাস করে পার্সেল ডেলিভারি নিতে তাদের দেওয়া ব্যাংক হিসাব নাম্বারে প্রথমে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা দেন নাদিরা আক্তার।
প্রথম দফা টাকা পাওয়ার পর পার্সেল ছাড়াতে থমাস ও শামীমা আরো টাকা চান। পরে নাদিরা আক্তার আরেকটি ব্যাংক হিসাব নাম্বারে ২ লাখ টাকা পাঠান। এরপরও পার্সেল হাতে না পেলে নাদিরা আক্তার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ৩ কোটি টাকার পার্সেল এত অল্প টাকায় ছাড়িয়ে নেওয়া যাবে না। আরো টাকা লাগবে। পার্সেলটি ছাড়িয়ে নিলে অবৈধ উপায়ে পার্সেলটি আনার বিষয়ে মামলাতে ফেঁসে যেতে পারেন বলে ভয় দেখিয়ে নাদিরা আক্তারকে দ্রুত টাকা দিতে বলে।
নাদিরা আক্তার মামলার ভয়ে এবং কোটি টাকার পুরস্কারের প্রলোভনে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে মোট ১ কোটি ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ওই চক্রকে দেন। এরপর তিনি পার্সেল না পেলে থমাস কিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে থমাস কিং দিতে পারবে না বলে জানায়।
থমাস কিং নাদিরা আক্তারকে জানায়, ‘অনেক ঝামেলা হয়ে গেছে, পার্সেলটি আর দেওয়া যাবে না। তার সাথে যোগাযোগ করতেও নিষেধ করে। পরে যোগাযোগ করলে পরিনাম ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেয় সে। তখন নাদিরা আক্তার বুঝতে পারেন, তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর তিনি গত বছরের ১০ অক্টোরব বনানী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম আরো বলেন, প্রথমে অবস্থাসম্পন্ন একজনকে টার্গেট করে চক্রটি। পর্যায়ক্রমে টার্গেটের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করা শুরু করে তারা। এরপর নাইজেরিয়ানরা নিজেদেরকে ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান বলে পারিচয় দেয়। পাশাপাশি ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান নাগরিকদের ছবি ব্যবহার করে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে ভিকটিমের সাথে বন্ধুত্ব তৈরি করে বিশ্বস্ততা অর্জন করে প্রতারণা করে। প্রতারকদের সঙ্গে বাংলাদেশি সহযোগীদের কাজ হলো ব্যাংক হিসাব বানানো; যার মাধ্যমে ভিকটিমরা টাকা দেবে।
চক্রটির মূলোৎপাটনে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের তদন্ত অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান মোল্ল্যা নজরুল ইসলাম।