খানমাইনউদ্দিন, বরিশাল: অনুসন্ধানে উঠে এসেছে র্যাব পরিচয়ে যারা চাঁদাবাজী করেছে তাদের কয়েকজনের নাম। তবে এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় র্যাব বা পুলিশের কাছে কোন ধরনের অভিযোগ কেউ করেনি বিধায় প্রশাসনিক এ্যাকশনে যেতে পারছেনা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, একটি গোষ্ঠির ইন্ধনে পুলিশ সদস্যের নেতৃত্বে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করে। এর পিছনে কাজ করেছে দুটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যকার বিরোধ। জানা গেছে, বেবীলন ডায়াগনস্টিক সেন্টার যারা পরিচালনা করেন তাদের মধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী ছাড়া অধিকাংশরা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিয়মিত চিকিৎসক বিধায় কোথাও অভিযোগ দিতে অনিচ্ছুক। একই সাথে ওই দিনের ঘটনার নেপথ্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল করায় ব্যাকফুটে তারা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেবীলন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে র্যাব পরিচয় দিয়ে যিনি অভিযানের নামে চাঁদাবাজিতে নেতৃত্ব প্রদান করেন তিনি বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের নতুন বাজারস্থ বগুড়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত। তার নাম হাবিব। হাবিব নিজেকে কনস্টেবল দাবী করে বলেছেন, বদলী আদেশের প্রেক্ষিতে তিনি ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় যোগদান করেছেন।
১৯ ফেব্রুয়ারির কথিত অভিযানের বিষয়ে বলেন, তার আত্মীয়ের রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ে ভুল করায় বিষয়টি কেন ঘটেছে জানতে গিয়েছিলেন। আত্মপক্ষ সর্মথনে পুলিশের এই সদস্য বলেন, যেহেতু আত্মীয়ের চিকিৎসায় ভুল করেছে সেহেতু তা জানতে চাওয়া তো তার নাগরিক অধিকার। বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক দক্ষিণের কাগজ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক হৃদয়
অর্থ আদায়ের প্রশ্নে বলেন, সেখান থেকে কোন টাকা আদায় করা হয়নি। তাহলে পত্রিকায় যে জরিমানা বাবদ ২০ হাজার টাকা আদায়ের কথাপ্রকাশ পেয়েছে তার জবাবে হাবিব বলেন, ওটা পত্রিকা কর্তৃপক্ষ ডায়াগনস্টিক সেন্টারটিকে ভূয়া প্রমাণের জন্য বাড়িয়ে লিখেছে। যে আত্মীয়ের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ভুল হয়েছে তার বাড়ির ঠিকানা ও নাম জানতে চাইলে তা জানাতে রাজি হননি তিনি। যদিও কনস্টেবল হাবিব, প্রথমে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে নিজেকে পুলিশ সদস্য স্বীকার করেননি। তিনি নিজের নাম উজ্জল বলেছেন এবং বিদেশে কর্মরত ছিলেন। সম্প্রতি দেশে ফিরেছেন এবং বর্তমানে ঢাকায় ব্যবসা করেন বলে জানান।
তবে তার মোবাইল ফোন নাম্বার দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমো’তে খুঁজে পাওয়া যায় এমডি. হাবিব নামের আইডি। এই বিষয়টি তাকে অবহিত করার পর স্বীকার করেন তিনি হাবিব। হাবিব ঢাকায় বদলী হয়েছেন দাবী করলেও তিনি মূলত পিরোজপুরে বদলী হয়েছেন। (২৭ ফেব্রুয়ারি) পিরোজপুর জেলা পুলিশে সংযুক্ত হবেন।
অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, এই ঘটনায় ঝালকাঠির বাসিন্দা উজ্জ্বল নামের এক মধ্যবয়সী যুবক সম্পৃক্ত। আরও সম্পৃক্ত রয়েছেন, বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক দক্ষিণের কাগজ পত্রিকার ফটো সাংবাদিক হৃদয়।
হৃদয় জানান, তিনি ঘটনা সর্ম্পকে কিছুই জানতেন না। পত্রিকার নির্বাহী সম্পাদক এস. সালাউদ্দিন তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের বেবীলন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যেতে বলেন। সেখানে প্রশাসন অভিযান পরিচালনা করছেন। অভিযানের ছবি তুলে আনতে বলেন।
ওদিকে একসময়ে বরিশাল বার্তা পত্রিকায় কাজ করতেন এমন পরিচয় দিয়ে কাজী পলাশ নামে অপর একজন জানান, পুলিশ সদস্য হাবিবের নেতৃত্বে বেবীলন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রক্তের ভুল রিপোর্ট নিয়ে উচ্চবাচ্য হচ্ছিল তখন আমি গিয়ে উপস্থিত হই। তার দাবী, তার একজন স্বজনের রিপোর্ট সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন তিনি।
এছাড়া হাবিবের সাথে থাকা আরও দুই যুবককে শনাক্ত করা যায়নি। তবে অনুসন্ধানী সূত্র বলছে, উল্লেখিত নামের ব্যক্তিরা সকলেই এই চাঁদাবাজির সাথে যুক্ত ছিলেন। শনাক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে ইতিমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থা কাজ শুরু করেছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রসঙ্গত, ১৯ ফেব্রুয়ারি বেবীলন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে র্যাব পরিচয়ে অভিযানের নামে চাঁদাবাজি করে একদল যুবক। তারা রোগীর শরীরের রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ভুল করাকে কেন্দ্র করে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের জিম্মি করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করে। চাঁদাবাজির এই ঘটনাটিকে র্যাবের অভিযান আখ্যা দিয়ে পরের দিন অর্থাৎ ২০ ফেব্রুয়ারি বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক আজকের পরিবর্তন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে।
সেখানে র্যাবের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করা হয় মর্মে দাবী করা হলেও র্যাব-৮ এর কোম্পানী কমান্ডার মেজর সোহেল রানা প্রিন্স জানিয়েছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি র্যাব থেকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কোন অভিযান পরিচালনা করেননি তারা।