উত্তরায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও প্রভাবশালীদের প্রভাব, জনদূর্ভোগ 

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ গত ১ যুগ ধরে ঢাকা সিটি করপোরেশনের অনুমতি নিয়ে রাজধানীর উত্তরা ১০ সেক্টরের আংশিক এলাকার বর্জ্য ব্যস্থাপনার কাজ করে আসছে একতা সেবা ক্লিন সার্ভিস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ওই এলাকার দুই হাজার বাড়িতে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ফি বাবদ এই সার্ভিস দিয়ে আসছে এই প্রতিষ্ঠানটি। সম্প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালীদের নজর পড়েছে এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উত্তরা ১০ নং সেক্টর কল্যান সমিতি নামে একটি সংগঠন করে ওই প্রভাবশালীরা। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সিটি করপোরেশন তাদেরকে আংশিক এলাকায় কাজ করার অনুমতি দেয়। বাকি আংশিক এলাকায় গত এক যুগ ধরে একতা সেবা ক্লিন সার্ভিস কাজ করে আসছে। কিন্তু সিটি করপোরেশনের নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পুরো সেক্টরেই এই কাজ করছে কল্যান সমিতি। এমনকি সিটি করপোরেশন নিধার্রিত ফি’য়ের পরিবর্তে ইচ্ছে মাফিক তারা প্রতিটি বাড়ি থেকে এই কাজ বাবদ ২৫০ টাকা করে নিচ্ছে। পাশাপাশি এই কল্যান সমিতির কর্মচারীদেরকে ময়লা দিতে ওই এলকার বাসিন্দাদের বাধ্য করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

এছাড়া পুরনো প্রতিষ্ঠান একতা সেবা ক্লিন সার্ভিসকে এখান থেকে বিতাড়িত করতে ওই প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মারধর করে বর্জ্য পরিস্কারের গাড়ি নিয়ে আটকে রাখে কল্যান সমিতির নিরাপত্তা প্রহরীরা। একই সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানটির মালিক জাহাঙ্গীরকে নানা ধরনের হুমকি ধমকি দিয়ে আসছে তারা। সম্প্রতি কয়েকটি বর্জ্য পরিস্কারের ভ্যান আটক করে রাখে কল্যান সমিতি নিরাপত্তা প্রহরীরা। পরে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে একতা সেবা ক্লিন সার্ভিসের ভ্যানগুলো উদ্ধার করে। এরপর উত্তরা পশ্চিম থানায় এসব বিয়ষ উল্লেখ করে একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। যার নম্বর ৯৮৭। পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করা হয়।

কল্যান সমিতির এসব কর্মকান্ডে ভূক্তভোগীর স্বীকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, এসব অব্যবস্থাপনার কারনে বাড়ি বাড়ি ময়লার স্তুপ জমে আছে। এর ফলে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। সিটি করপেরেশনের উচিত বিসয়টি দ্রুত সুরাহা করা।

এ বিষয়ে জানতে উত্তরা ১০ নং সেক্টর কল্যান সমিতির সেক্রেটারি মো. ইনসাফ আলীর সাথে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ের অজুহাত দেখিয়ে বলেন, এ বিষয়ে আপনি স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে যোগাযোগ করেন। অথবা পরে এক সময় আমার অফিসে আসেন।

এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর আফসার উদ্দিনের সাথে তার মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনিও মিটিংয়ে ব্যাস্ত আছেন বলে ফোন রেখে দেন।

জানতে চাইলে একতা সেবা ক্লিন সার্ভিসের স্বত্বাধিকারী ও মানবাধিকার কর্মী মো. জাহাঙ্গীর বলেন, আমি প্রায় এক যুগ ধরে এই এলাকার বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ করে আসছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধশত কর্মচারী এই সেবা দিয়ে আসছে। গত ১৪ ফব্রুয়ারী আমাদের কর্মচারীদের মারধর করে ময়লা পরিস্কারের ভ্যান আটক করে নিয়ে যায় কল্যাণ সমিতির নিরাপত্তা কর্মীরা। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা এসে তা উদ্ধার করে। কল্যান সমিতি আমাদেরকে বলছে কাজ করতে হলে তাদের নিয়ন্ত্রনে কাজ করতে হবে। অথচ সিটি করপোরেশন আইনে সাব- কণ্ট্রাক্টে কাজ করার কোন নিয়ম নেই। বর্তমানে কল্যান সমিতির নিজস্ব কোন জনবল নেই। তারা সবাইকে সাব-কণ্ট্রাক্টের মাধ্যমে বিভিন্ন জনকে কাজ ভাগ করে দিচ্ছে।

এমন অভিযোগ স্থানীয় ইনোভেশন ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মতিউর রহমানেরও। তিনি বলেন, আমিও বেশ কিছু বছর ধরে এই কাজ করে আসছি। আমিও এই ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমি এ বিষয়ে থানায় একাধিক জিডি করেছি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা জানান, আমাদের কাছে একটি অভিযোগ এসেছে। একতা সেবা ক্লিন সার্ভিস সিটি করপোরেশনের অনুমতিপ্রাপ্ত। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts