বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ পবিত্র কোরআন নাজিলের শুভ সূচনার রাতকে আল্লাহ তা’য়ালা মহিমান্বিত বা বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ রাত হিসেবে অভিহিত করেছেন। আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর বা মহিমান্বিত রজনী। লাইলাতুল ক্বদরে আল্লাহপাক মানবজাতির পথ প্রদর্শনকারী কিতাব পবিত্র আল কোরআনকে লওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীর মানুষের জন্য হযরত জিবরাইলের তত্তাবধানে ঊর্ধ্বাকাশের বাইতুল ইজ্জতে নাজিল করেন। পরবর্তীতে সময়ে সময়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর পবিত্র কোরআন নাজিল হয় দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে।
সূরা ক্বদরে আল্লাহপাক বলেছেন, নিশ্চয়ই আমি পবিত্র কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল ক্বদর বা ক্বদরের রাতে। হে মুহম্মদ, আপনার কি জানা আছে ক্বদরের রাত কি? ক্বদরের রাত হচ্ছে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম একটি রাত। মহানবী (সা.) বলেছেন, তোমরা রমজান মাসের শেষ ভাগে পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর তালাশ করো।
হাদিসের ভাষ্য মতে, রমজান মাসের শেষাংশের যে কোনো বিজোড় রাত অর্থাৎ ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ২৯-এর মধ্যে যে কোনো রাতই লাইলাতুল ক্বদর। এ জন্য রমজান মাসের শেষ ১০ দিনে ইতেকাফের বিধান রাখা হয়েছে যাতে ইতেকাফকারীরা সহজেই লাইলাতুল ক্বদর পেতে পারে এবং এর ফজিলত লাভ করতে পারে।
আলেম সমাজের অধিকাংশের মতে, ২৭ রমজানের রাতই পবিত্র লালাইতুল ক্বদর। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.)-এর বর্ণনা মতে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর যুগে কিছু সাহাবী ২৭ রমজানের রাতকে লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে স্বপ্ন দেখেছিলেন। একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমাকেও তোমাদের মতো ২৭ তারিখ রাতকেই লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে স্বপ্ন দেখানো হয়েছে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ২৭ রমজানের রাতকেই লাইলাতুল ক্বদর হিসেবে গণ্য, মান্য ও পালন করা হয়। ধর্মীয়ভাব-গাম্ভীর্যের সঙ্গে রাতটি পালিত হয়। রাতভর নামাজ, দোয়া-দরূদ, জিকির-আজকার পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদির মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ এই রাতটি অতিবাহিত করেন। এ বিশেষ রাতে মসজিদগুলোতে মুসল্লীদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
পবিত্র কোরআনের বর্ণনামতে, ক্বদরের রাতে আল্লাহর নৈকট্যশীল ফেরেশতারা হযরত জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে পৃথিবীময় ঘুরে বেড়ান। তারা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল মানুষের প্রতি সালাম ও বিশেষ বার্তা প্রদান করেন।
আল্লাহপাক বলেছেন, ফেরেশতারা জিবরাইলের নেতৃত্বে এই রাতে পৃথিবীতে নেমে আসে এবং ফজর পর্যন্ত শান্তির বার্তা বিতরণ করেন। বর্তমানে বিশ্বময় যে অশান্তি ও হানাহানি বিরাজ করছে তাতে এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন শান্তি এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই বিবেচনায় আজকের রাতটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সহজেই অনুমেয়। শান্তি প্রদানের মালিক আল্লাহপাক। তিনি আজ রাতে ফেরেশতাদের মাধ্যমে শান্তির বার্তা বিতরণ করবেন। এই সুযোগ বিশ্ব মুসলিমের জন্য এক বিশেষ ও বিরল সুযোগ। ধর্মপ্রাণ মানুষেরা এ রাত অতিবাহিত করেন ক্ষমা প্রার্থনা ও বিশ্বমানবতার কল্যাণ কামনা করে।
উল্লেখ্য, এ রাত ছাড়া শতায়ু মানুষের পক্ষেও এত ফজিলত আর কোনো কিছুর মাধ্যমেই অর্জন করা সম্ভব নয়। কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ আছে, যারা রমজান মাস এবং লাইলাতুল ক্বদর পেল, অথচ গোনাহ মাফ করাতে পারল না, তারা বড়ই হতভাগ্য। প্রতিটি মুসলমানের উচিত, হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এই রাতের ফজিলত কাজে লাগিয়ে আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভ করা।
যারা দশদিন ইতেকাফে আছেন তারা ছাড়া অন্য মুসলমানদের উচিত ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯-এর রাতগুলোতে কমপক্ষে ২ রাকাত নফল নামাজ পড়া বা ২/৪ টাকা হলেও দান করা কিংবা তিনবার কুল হুয়াল্লাাহ সুরাটি পাঠ করা। এতে যে রাতেই শবে কদর হোক, যেহেতু একজন তিনটি আমল প্রতি বিজোড় রাতেই করেছে তাই সে হাজার মাস আমল করার সওয়াব পাবে। যা হিসাব করলে দেখা যায় প্রায় ৮৪ বছরের সমান। এটি কারো পক্ষেই খুব কঠিন নয়।