নন্দিত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের জন্মদিন

বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ নন্দিত কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের ৭৩তম জন্মদিন আজ। ২০ শতকের ষাটের দশক থেকে সেই যে তার কথন-বয়ানের শুরু, গত ছয় দশকাধিক কাল ধরে তা বাঁকের পর বাঁক পেরিয়ে স্বতশ্চল উচ্ছলতায় কেবলই সমুদ্রাভিসারী হয়ে চলেছে। উৎস থেকে যাত্রা তার নিরন্তর। না, তার কোনো থামা নেই, উল্লম্ফন নেই, আছে শুধু সচেতন অভীষ্ট-বদল। এই ছয়-দশকের সার্বক্ষণিক লেখকপনা তাকে করে তুলেছে আমাদের কালের এক তুলনারহিত সৃষ্টিসাধক, যার কলম থেকে জন্ম নিয়েছে গুচ্ছ গুচ্ছ মনজয়ী ও কালজয়ী সৃষ্টিসম্ভার।

এই প্রখ্যাত নারী ঔপন্যাসিক ১৯৪৭ সালের আজকের এ দিনে জন্মগ্রহণ করেন।  লেখালেখির শুরু ষাটের দশকের মধ্যভাগে, রাজশাহী মহিলা কলেজে পড়ার সময়। সে সময়ের লেখা নিয়ে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে। তার দুটি গ্রন্থ ‘পোকামাকড়ের ঘরবসতি’ ও ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ নিয়ে চলচ্চিত্র এবং কয়েকটি গল্প নিয়ে নাটক নির্মিত হয়েছে।

গল্পগ্রন্থ : উৎস থেকে নিরন্তর (প্রথম গ্রন্থ), জলবতী মেঘের বাতাস, খোল করতাল, পরজন্ম, মানুষটি, মতিজানের মেয়েরা, অনূঢ়া পূর্ণিমা, সখিনার চন্দ্রকলা, এ কালের পান্তাবুড়ি, অবেলার দিনক্ষণ, নারীর রূপকথা, নুনপান্তার গড়াগড়ি, মৃত্যুর নীলপদ্ম ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলো : জলোচ্ছ্বাস (প্রথম উপন্যাস), জ্যোত্স্নায় সূর্যজ্বালা, হাঙর নদী গ্রেনেড, মগ্ন চৈতন্যে শিস, যাপিত জীবন, নীল ময়ূরের যৌবন, পদশব্দ, চাঁদবেনে, পোকা মাকড়ের ঘরবসতি, নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি, ক্ষরণ, কাঁটাতারে প্রজাপতি, খুন ও ভালোবাসা, কালকেতু ও ফুল্লরা, ভালোবাসা প্রীতিলতা, টানাপোড়েন, গায়ত্রী সন্ধ্যা-প্রথম খণ্ড, গায়ত্রী সন্ধ্যা-দ্বিতীয় খণ্ড, গায়ত্রী সন্ধ্যা-তৃতীয় খণ্ড, দীপান্বিতা, যুদ্ধ, লারা, কাঠ কয়লার ছবি, মোহিনীর বিয়ে, আণবিক আঁধার, ঘুমকাতুরে ঈশ্বর, মর্গের নীল পাখি, অপেক্ষা, দিনের রশিতে গিটঠু, মাটি ও শস্যের বুনন, পূর্ণছবির মগ্নতা, ভূমি ও কুসুম, উত্তর সারথি, যমুনা নদীর মুশায়রা, আগস্টের একরাত, গেরিলা ও বীরাঙ্গনা, দিনকালের কাঠখড়, স্বপ্নের বাজপাখি, নিঃসঙ্গতার মুখর সময়, হেঁটে যাই জনমভর ইত্যাদি।

শিশু-কিশোর গ্রন্থসমূহ : সাগর, বাংলা একাডেমি গল্পে বর্ণমালা, কাকতাড়ুয়া, বর্ণমালার গল্প, আকাশ পরী, অন্যরকম যাওয়া, যখন বৃষ্টি নামে, জ্যোত্স্নার রঙে আঁকা ছবি, মেয়রের গাড়ি, মিহিরুনের বন্ধুরা, রংধনু (সম্পাদনা), এক রুপোলি নদী, গল্পটা শেষ হয় না, বায়ান্নো থেকে একাত্তর, চাঁদের বুড়ির পান্তা ইলিশ, মুক্তিযোদ্ধারা, সোনারতরীর ছোটমণিরা, পুটুসপুটুসের জন্মদিন, নীলটুনির বন্ধু, কুড়কুড়ির মুক্তিযুদ্ধ, ফুলকলি প্রধানমন্ত্রী হবে, হরতালের ভূতবাবা, রাসেলের জন্য অপেক্ষা, হোজ্জার পুতুল, নদীর ধারের মেয়েটি।

প্রবন্ধগ্রন্থ : স্বদেশে পরবাসী, ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, একাত্তরের ঢাকা, নির্ভয় করো হে, মুক্ত করো ভয়, ঘরগেরস্থির রাজনীতি, নিজেরে করো জয়, প্রিয় মুখের রেখা, শ্রেষ্ঠ প্রবন্ধ, পথ চলাতেই আনন্দ, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ইত্যাদি। এ ছাড়া রয়েছে তাঁর প্রায় বেশ কিছু সম্পাদিত গ্রন্থ—নারীর ক্ষমতায়ন : রাজনীতি ও আন্দোলন (যৌথ), ইবসেনের নারী, ইবসেনের নাটক ও কবিতা, জেন্ডার বিশ্বকোষ (যৌথ), বাংলাদেশ নারী ও সমাজ (যৌথ), জেন্ডার ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন (যৌথ), সাহিত্যে নারীর জীবন ও পরিসর (যৌথ), জেন্ডার আলোকে সংস্কৃতি (যৌথ), পুরুষতন্ত্র নারী ও শিক্ষা (যৌথ), দক্ষিণ এশিয়ার নারীবাদী গল্প (যৌথ), জেন্ডার ও উন্নয়ন কোষ, ধান শালিকের দেশ (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর পত্রিকা, ২২ বছর), ছোটদের অভিধান (বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত) (অন্যতম সম্পাদক)।

ইংরেজি, হিন্দি, মারাঠি, কানাড়ি, রুশ, মালে, মালয়ালম, ফরাসি, জাপানি, ফিনিশ, কোরিয়ান প্রভৃতি ভাষায় সেলিনা হোসেনের বেশ কয়েকটি গল্প অনূদিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ‘যাপিত জীবন’ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিরন্তর ঘণ্টাধ্বনি’ উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত। শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তার পাঁচটি উপন্যাস এমফিল গবেষণাভুক্ত। ২০০৫ সাল থেকে শিকাগোর ওকটন কলেজের সাহিত্য বিভাগে দক্ষিণ এশিয়ার সাহিত্য কোর্সে তার ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’ উপন্যাসটি পাঠ্যসূচিভুক্ত হয়।

সেলিনা হোসেনের কর্মজীবন শুরু বাংলা একাডেমিতে গবেষণা সহকারী হিসেবে। তিনি বাংলা একাডেমির ‘অভিধান প্রকল্প’, ‘বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প’, ‘বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলি প্রকাশ’, ‘লেখক অভিধান’, ‘চরিতাভিধান’ এবং ‘একশত এক সিরিজ’-এর গ্রন্থগুলো প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন। ২০ বছরের বেশি সময় তিনি ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হন। ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি থেকে অবসর নেন। বর্তমানে শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান পদে কর্মরত।

সাহিত্যে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ একুশে পদক, ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক স্বর্ণপদক, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, আলাওল সাহিত্য পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক সাহিত্য পুরস্কার, অলক্ত পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্রস্মৃতি পুরস্কারসহ বিভিন্ন সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন তিনি।

 (শা.ম.টি সম্পাদিত)

Print Friendly

Related Posts