ফাঁদ
এই গলিপথে আর হেঁটো না মানুষ
অন্ধকারই নয় এইখানে পাতা আছে জীবনের ফাঁদ
এক অঙ্গ, কন্ঠ ভিন্ন নারী ও পুরুষ
অতি মানবের হাতে ঘুমাইছে চাঁদ!
এই মেঠো পথে আর নেমোনা স্বজন
রক্তখেকো জোঁক দেখো করে কিলবিল
আমাদের সব উঠোনে দুবলা আর বন
উড়ছে আকাশ জুড়ে শবখেকো চিল!
পাখিছানা মন
সময় পালকে মুখ লুকোতেই কবিতা মাতাল
পাখিসন্ধ্যায় চোখ মেলতেই মায়াবী উড়াল
মুগ্ধ দু’ঠোঁটে গ্লাস ছোঁয়াতেই পৃথিবী পকেটে
এই দ্বান্দ্বিক কবিতা পাড়ায় কার যাওয়া-আসা?
বাণিজ্য পাড়া উঁকিঝুঁকি মারে তাও তুমি জ্ঞাত
মাতাল পর্দা: ঝাকুনি ছোঁয়ায় খ্যাতি-প্রলোভন
কণ্ঠনালির বারান্দা জুড়ে ক্যামেরা হাঁটছে
এই সন্ধ্যার জোনাকি-আকাশে কার ছুটোছুটি?
মায়ার ঝরনা ছুঁয়ে গেল মেঘ বিস্ময় ভরে
সন্ন্যাস ভেঙে অভিলাষী মন ছোবেনা ও চুল
মোমের পুতুল নাচে কি তোমার বারান্দা জুড়ে
কবিতা জানে না ব্যাংকিং রীতি হায় বিলকুল!
তবুও কাব্য রোদনপুরের ভরা সন্ধ্যায়
দ্বান্দ্বিক ঠোঁটে পাখিছানা মন
ডাক দিয়ে যায়…
পথ পরিক্রমা
কিছু পথ হাঁটি কিছু পথ বাকি
কিছু পথ রাখি ব্যাংকে
কিছু পথ ভাঙি কিছু পথ মাঙি
কিছু পথ মাপি র্যাঙ্কে।
কত পথ গেলে তার দেখা মেলে
কত পথ শেষে আশ্রয়
কত পথ যেচে কত পথ সেচে
কত পথ হবে সাশ্রয়
কত পথ ঘুমে কত পথ জেগে
কত পথ আছে গড়া ঋণে
কত পথ ধামে কত পথ রামে
কত পথ জল-মীনে
কত পথে আছে স্বপ্ন ছড়ানো
কত পথে জাল-ধন্ধ
পথ ভুলে পথে জীবনের রথে
পথের আলোতে অন্ধ…
আগুন কানাই
আগুনের দিকে তাকাতেই ধ্যান টের পাই। ছায়াছন্ন পাহাড়-ঝরনার
মত জল-জোছনায় শরীর ভেজাই আর তামাটে নিঃশ্বাসে তামাক
আনন্দ গিলি হরিদ্রাভ-বৃক্ষালির রোদ সম্মোহনে।
পৃথিবীর মানুষেরা অন্ধকার খেতে খেতে আলোর স্বাদটাকেই
বেমালুম ভুলে যেতে বসেছে যখন আমি তখনই আপেল আনন্দে
গোপিনীদের জরতী সভায় সূর্যের বয়স সম্পর্কিত প্রভাষণ দিতে দিতে
পথ গিলে ফেলি…। তিরিশ পেরোনো মখমল চোখগুলো উদ্ভাসনার
মোহন-বিনয় ঝেড়ে আমারই শব্দ সুষমিত প্রভাষণের তারিফ জুড়ে
দিতেই বুজরুকি জ্ঞানে আমি অদৃশ্য বারান্দাতেই বিলীন
হয়ে যাই। টের পাই ব্রীড়ানত কতিপয় আধবুড়ো চোখ
ধ্যান ভেঙে আমারই রাতটানা পথে অবাক ধ্যানের মত শূন্যে মিলায়।
সজ্ঞানে বিভক্তি মেনে আগুনকে কানে কানে বলি
চলি, গুডবাই বিংশতি আগুন, আমি তোর ভাই।
এত যে কথার গল্প…
প্রভাতেই শেষ হয় মায়ার আসর; দুপুরে নূপুর
স্নানে যায় প্রজাপতি! কথারা পুকুর…
গৃহস্থ সংসারে আমি-ই গাবুর একা দাঁড়িয়ে সটান
কথার র্কপুরে এই ডুবি এই ভাসি নেইক আসান
কুয়াশায় পথ ভুলে কখনো বা চলে যাই ধুধু—সাহারায়
চোখের চিহ্ন থেকে সাহস কুড়াই ফের আদি পাহারায়…
এত যে কথার গল্প, মাঠে-বাসে-উদ্যানে এত ফিসফাস
সাহস হারালে আর থাকে না কিছুই—বলে ইতিহাস
অর্ঘ্য
(কবি আসাদ চৌধুরী, পরমাত্মীয়েষু)
আপনাকে খুঁজতে গিয়ে সমুদ্রের ভাষাই অনুবাদ হয়ে গেছে কাল
মুগ্ধতার যাবতীয় শিল্পসুষমাসহ সটান দাঁড়িয়ে আছে
রূপবতী বোন আমার– ধানি বরিশাল
দুপুরের রংধনু রঙিন ঘুড়িগুলো ওড়ায় কত যে স্বপ্ননাটাই
খিলি পানে দৃশ্যমান বিগত শৈশব। হোচিমিন দাঁড়ি ছুঁয়ে পালাই পালাই…
‘তখন সত্যি মানুষ ছিলাম’ এমন পদ্য আর ‘তবক দেয়া পান’
ভুতুড়ে সভায় আছি। ডুবে আছি– প্রিয়মুখ, বাঁচান! বাঁচান!