শাহ মতিন টিপু: ঔপন্যাসিক আশুতোষ মুখোপাধ্যায় নামটা অনেকেরই কমবেশি জানা। শরৎ চট্টোপাধ্যায়, ফাল্গুণী মুখোপাধ্যায়, নিমাই ভট্টাচার্য’র মতো এই কথাশিল্পীর বইও সাধারণ বুকস্টলে শোভা পেতো।
তিনি প্রচুর উপন্যাস, ছোট গল্প লিখেছেন। বলা চলে দু’হাতে লিখেছেন। অন্তত শতাধিক উপন্যাস ও ছোট গল্প সংকলন প্রকাশিত হয়েছে তার। প্রথম গল্প ‘নার্স মিত্র’র কাহিনীতেই তৈরী হয়েছিল সিনেমা ‘দীপ জ্বেলে যাই’।
বহু বাংলা, হিন্দি সুপারহিট ছবির কাহিনিকারও তিনি। ভারতীয় বাংলা সুপার-হিট সিনেমা ‘সাত পাকে বাঁধা’, ‘দীপ জ্বেলে যাই’, ‘চলাচল’, ‘পঞ্চতপা’, ‘আমি সে ও সখা’এসব তারই কাহিনী থেকে নির্মিত। আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন আজ।
১৯২০ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা’র বজ্রযোগীনী গ্রামে তার জন্ম| পিতা সরকারি চাকরির কারণে তৎকালীন পশ্চিম ও উত্তরবাংলার অনেক স্কুল-কলেজে পড়াশুনা করেছিলেন | সেই সূত্রে বহু উচ্চ ও মধ্যবিত্ত পরিবার সম্পর্কে খুঁটিনাটি অভিজ্ঞতা ছিলো | চাকরিতে অনীহা ছিলো | প্রথম জীবনে এক-একে ন’টি চাকরিতে প্রবেশ এবং পরিত্যাগের ঘটনা রয়েছে তার জীবনে | শেষে ভারতীয় বাংলা সংবাদপত্র যুগান্তর এর সাহিত্য বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব নেন |
তার লেখার একটা বিশেষত্ব ছিল, তিনি বাড়িতে জলচৌকিতে বসে লিখতেন। তার কন্যা সর্বাণী মুখোপাধ্যায় বাবার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে লেখেন-
‘লেখার জন্য নিজের খাটের ওপর একটা জলচৌকি, এ-ফোর সাইজের রাইটিং প্যাড আর নিজস্ব কয়েকটা কলম ব্যস, আর কিচ্ছু না। তাতেই যা হওয়ার হয়েছে। সরস্বতী পুজোর দিন দেখতাম, প্রতি বছর একটা না একটা গল্প বা উপন্যাসের লাইন লিখত ওই জলচৌকি টেনে নিয়ে। ওটাই ছিল হয়তো বা বাবার অর্ঘ্য। অঞ্জলি দিত পেট পুরে খেয়ে দেয়ে।’
তিনি প্রয়াত হন ১৯৮৯ সালের ৪ মে। বাবার মৃত্যু নিয়ে কন্যা সর্বাণী মুখোপাধ্যায় লেখেন-
‘ঠোঁট দুটো নড়ল শুধু। ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাকে নীল। কিন্তু হাসি হাসি মুখ। ডান চোখের কোণ বেয়ে গড়িয়ে আসা ঠিক এক ফোঁটা জল। শেষ বারের জন্য কথা বলতে চাওয়া আমার বাবা চলে গেল। কথাশিল্পী আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।’
তার নিবিড় বন্ধু ছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। কন্যা সর্বাণী লেখেন-
‘হেমন্তকাকুর সঙ্গে বাবা এতটাই লতায়পাতায় জড়িয়ে ছিলেন, দেখে বোঝার উপায় ছিল না ওরা সহোদর, নাকি বন্ধু? বাবার শেষযাত্রার একটা ছবি চোখে ভাসলে আজও কেমন ভেতর ভেতরে কাঁপুনি লাগে। নিথর বন্ধুর হিম ঠান্ডা কপালে হাত রেখে ফুঁপিয়ে উঠল হেমন্তকাকু, “আমার বেলায় কে আমাকে সী অফ করবে, বলতে পারেন?”
তার কিছু বিখ্যাত উপন্যাস-
বলাকার মন, সাত পাঁকে বাধা, পঞ্চতপা, বাজিকর, লীলাবতি, নগরপারে রূপনগর, কাল তুমি আলেয়া, শতরূপে দেখা, সোনার হরিন নেই, একাল ওকাল, তিন পুরুষ, এক রমণীর যুদ্ধ, আমি সে ও সখা, যার যেথা ঘর, দিনকাল, চেনা মুখের মিছিল, সূর্যস্নান, রক্ত আগুন প্রেম, আলোর ঠিকানা, হঠাৎ সেদিন, তবু কোকিল ডাকে, মালবি মালঞ্চ ইত্যাদি।
তার সৃষ্ট বিখ্যাত বাঙালী কাল্পনিক চরিত্র ‘পিনডিদা’। পিনডিদা’র বেশিরভাগ গল্প শুকতারা ও কিশোর ভারতী পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।
(রাইজিংবিডি ডটকম)