কোনো কিছু দিয়ে ভারতের অবদান শোধ করা যাবে না: গওহর রিজভী
বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ জমকালো আয়োজনে ঢাকায় মোড়ক উন্মোচন করা হলো বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান এ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন।
শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিকেল ৩টা থেকে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।বাংলাদেশ-ভারতের জাতীয় সংগীত দিয়ে সূচনা হওয়া অনুষ্ঠান শেষ হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে।
এদিন দুই দেশের শিল্পীদের নানা পরিবেশনা ও বিশিষ্টজনদের মুখে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আলোচনায় বুঁদ ছিল দর্শকে ঠাসা পুরো মহামিলনায়তন। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা থেকে প্রকাশিত বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে আন্তর্জাতিক স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীনের সময় ভারতের অবদান পরিশোধ হবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধে তারা আমাদের যেভাবে সহায়তা করেছেন। দীর্ঘ সময় তাদের দেশে আমাদের কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছেন। আমরা কোনো দিন আগরতলার কৃতজ্ঞতা ভুলব না। কোনো কিছু দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করা যাবে না।
প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজক পর্যদের আহ্বায়ক রেজাউল হক চৌধুরী মুশতাকের সভাপতিত্বে স্মারক উন্মোচন অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ছিলেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
এ সময় আগরতলা থেকে আগত বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক স্মারক গ্রন্থের সম্পাদক ড. দেবব্রত দেবরায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মশতবর্ষ উদযাপন জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, সম্মানিত অতিথি হিসেবে কবি অসীম সাহা, ড. আশীষ কুমার বৈদ্য, নিয়তি রায় বর্মণ প্রাবন্ধিক, রবীন্দ্র পরিষদের সম্পাদক কবি কল্যাণ গুপ্ত প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের শরণার্থী ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ত্রিপুরাবাসী ছিল পরম আশ্রয়স্থল। এক সময় শরণার্থী আর ত্রিপুরার জনগণ সমান হয়ে গিয়েছিল। তখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছিল। সেক্ষেত্রে ত্রিপুরার সরকার শরণার্থীদের কল্যাণে ত্রিপুরাবাসীর ওপর কর আরোপ করেন। অনেকে তাদের বাড়ির এক অংশ ছেড়ে দিয়েছিলেন। এভাবে গড়ে ওঠে বাংলাদেশ-ত্রিপুরার সম্পর্ক। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করছে ত্রিপুরাবাসী। স্বাধীনতার এতদিন পরও ভালোবাসার বন্ধন অটুট রেখেছে; বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছে। আসলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যেন চিরস্থায়ী হয়, সেটিই আমার কামনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষে আন্তর্জাতিক স্মারক গ্রন্থের সম্পাদক ড. দেবব্রত দেবরায় বলেন, ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশের ভাষা ও সংস্কৃতি একই। রাজনৈতিক কারণে দুটি দেশ আলাদা হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ হাসলে আমরা হাসি, বাংলাদেশ কাঁদলে আমরা কাঁদি।
তিনি আরও বলেন, ভারত-বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ত্রিপুরার রয়েছে অসামান্য অবদান। সে একইভাবে ত্রিপুরা রাজ্যও সেই সম্পর্ক ধরে রেখেছে। স্বাধীনতার মহান নায়ক বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে বিরাট উদ্যোগ নিয়েছে ত্রিপুরাবাসী। এ উপলক্ষে প্রকাশ করেছে ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ স্মারক গ্রন্থ।
তিনি আরও বলেন, আগামী দুই বছর সমগ্র বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপন করবে। আমরা ভারতবাসীও দুই বছর বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্যোগ নিয়েছি।
আগামী ২২ ডিসেম্বর ভারতের যাবদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের তৃতীয় কর্মসূচি পালন করা হবে। ১৪ মার্চ দিল্লিতে চতুর্থ কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া আসাম, শিলচর, ছত্রিশগড়েও এ কর্মসূচি পালন করা হবে।
এ অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু জন্মশতবর্ষ আর্ন্তজাতিক স্মারক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠান আয়োজক পর্ষদের সদস্য সচিব ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু, কবি আসলাস সানী, অনুষ্ঠানের মিডিয়া ও প্রচার উপ-কমিটির সদস্য সচিব প্রভাষ চৌধুরী, সদস্য রীতা আক্তার, আবু আলী, অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটির আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম মুনির, সদস্য সচিব মাহবুবা লাকি, অনুষ্ঠান সমন্বয় উপ-কমিটির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম বিপ্লব, অর্থ উপকমিটির সদস্য সচিব বাপ্পী রহমান, আগরতলার অধ্যাপক ড. মুজাহিদ রহমান, আইনজীবী রাখাল মজুমদার , ড .প্রণতি মোদক, রঞ্জিত কুমার সাহা প্রমুখ।