বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক তিনি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম ট্রফি জয় হয়েছে তার হাত ধরে। নেতৃত্বের শেষ ম্যাচটি জিতলে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক হিসেবে পূরণ করবেন জয়ের ফিফটি। আবার আক্ষেপও থাকার কথা অনেক। বেশ কটি ফাইনালে হার, হৃদয় ভেঙে যাওয়া কিছু পরাজয়!
বিদায় বেলায় প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মেলাতে চাইলেন না মাশরাফি মুর্তজা।
শেষ ম্যাচের আগের দিন সকালে তার মনে হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে।বুহস্পতিবার দুপুরে অনুশীলনে মাঠে এসে নিয়ে ফেলেছেন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নেতৃত্বের পথচলার ইতি!
বিসিবির কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজের নাম সরিয়ে নিয়েছেন কিছুদিন আগে। নেতৃত্ব থেকে সরে যাওয়ার ভাবনাও মাশরাফি মুর্তজার মনে দোলা দিচ্ছিল কিছুদিন ধরেই। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জুড়ে চলেছে সেই দোলাচল।
কিছুদিন আগে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান বলেছিলেন, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের পর বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে নেতৃত্ব পুনর্বিবেচনা করা হবে। তবে সেই বিবেচনাতেও মাশরাফিরই দায়িত্বে থাকার সম্ভাবনা ছিল প্রবল।
আগামী অক্টোবরে শেষ হবে সাকিব আল হাসানের নিষেধাজ্ঞা। এই সিরিজের পর সাকিবের ফেরা পর্যন্ত বাংলাদেশের ওয়ানডে আছে কেবল পাকিস্তানে একটি, মে মাসে আয়ারল্যান্ড সফরে তিনটি। সাকিবকে পরবর্তী অধিনায়ক ধরে যদি অপেক্ষা করে বোর্ড, তাহলেও এই চার ম্যাচের জন্য নতুন অধিনায়ক খোঁজার কথা নয়।
বোর্ডের নানাসূত্র থেকে জানা গেছে, অন্তত পাকিস্তান সফরে মাশরাফিকেই রাখা হতো অধিনায়ক।
তবে মাশরাফি অত হিসাব-নিকাশ করেননি। কারও সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকেননি। সকালে ভাবনা মাথায় এসেছে। মাঠে এসে বোর্ড সভাপতিকে জানিয়েছেন সিদ্ধান্তের কথা।
বিদায় ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বললেন, গতকাল পর্যন্ত মনে সংশয় থাকলেও শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দ্রুতই।
“সত্যি বলতে আমি এত ভাবাভাবি করিনি। সবাই চাচ্ছে ২০২৩ বিশ্বকাপের জন্য নতুন অধিনায়ক আনার সময় হয়েছে। আমি মনে করি আমারও ভাবা উচিত ছিল। ভাবার চেষ্টা করেও আমি আসলে এত ভাবতে পারিনি। আজকে সকালে মনে হয়েছে, ‘ইটস এনাফ!”
গত বিশ্বকাপের পর থেকেই তাকে নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে অনেক। আমজনতা অনেক সংবাদমাধ্যমই শুধু নয়, বোর্ড কর্তারাও নানা সময়ে বলেছেন নানা কথা এমনকি বোর্ড সভাপতি পর্যন্ত বলেছেন বিভ্রান্তিকর অনেক কথা। সবকিছু মিলিয়ে মাশরাফির মনে অভিমানের মেঘ জমে ওঠা অস্বাভাবিক নয়।
তবে হাসি দিয়ে এসব ভাবনা উড়িয়ে দিলেন মাশরাফি।
“আমি অনেক আগেই বলেছি যে অভিমান বা রাগ করা বা ক্ষোভ দেখানো…(হাসি) আসলে কার ওপর দেখাব? এসব জিনিস থাকে না তা নয়, অনেকের থাকে। আমি সত্যি বলছি, এরকম কিছু না। আমাকে একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। মানা বা না মানা, ভালো-মন্দ সবকিছু নিয়েই তো এগিয়ে আসতে হয়েছে এই পর্যন্ত।”
বিদায় বেলায় বাংলাদেশের সফলতম অধিনায়ক বললেন-
“আমার ক্যারিয়ারটাই তো অনেক আগে শেষ হয়ে যেতে পারত। যতটুকু পেয়েছি আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া যে এতটুকু আসতে পেরেছি। প্রাপ্তির বিষয়ে একজন খেলোয়াড়ের পক্ষে বলা খুব কঠিন। অপ্রাপ্তিটা খুব সহজেই বলতে পারা যায়। সুতরাং, অনেক অপ্রাপ্তি আছে, কিন্তু সেটাও দিন শেষে আমার কাছে প্রাপ্তি। কারণ একই প্রবাহে কখনোই জীবন চলে না। ভালো-খারাপের ভেতর দিয়ে যেতে হয়।”
“আমার ক্ষেত্রেও ওটাই হয়েছে। তবে সত্যি বলতে বলবো যে আমি এই দায়িত্বটাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে পালনের চেষ্টা করেছি। এখন প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি তো আসলে আপনারা-সমর্থকরা ভালো জানেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে এটা খোঁজার চেষ্টা করিনি কখনও।”