বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ মাঝে দীর্ঘদিন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। কিছু দিন আগেই তাঁকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। ক্যানসারের চিকিৎসা চলছিলই কিন্তু তার মাঝে বুধবার সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ দক্ষিণ কলকাতায় নিজের বাড়িতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে মারা গেলেন অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯ বছর। তাঁর দুই মেয়ে স্বস্তিকা ও অজপা মুখোপাধ্যায়।
তরুণ মজুমদারের ‘সংসার সীমান্ত’ দিয়ে কেরিয়ার শুরু করেন। তার পর তপন সিংহের ‘রাজা’ ছবি দিয়ে নায়ক হিসেবে তাঁর ডেবিউ হয়। ‘হারমোনিয়াম’, ‘গণদেবতা’-র মতো জনপ্রিয় ছবিতেও অভিনয় করেছেন সন্তু। সিনেমার পাশাপাশি থিয়েটার ও ধারাবাহিেকও কাজ করেছেন। ‘জন্মভূমি’তে তাঁর অভিনীত রতিকান্ত চরিত্রটি আইকনিক। সাম্প্রতিককালে ‘ইষ্টিকুটুম’, ‘জলনূপুর’, ‘কুসুমদোলা’, ‘অন্দরমহল’-সহ অসংখ্য সিরিয়ালে তিনি অভিনয় করেছেন। অসুস্থ হওয়ার আগে ‘নকশি কাঁথা’, ‘মোহর’ ধারাবাহিকে কাজ করছিলেন। ‘মোহর’ করার সময়েই সন্তু নির্মাতা লীনা গঙ্গোপাধ্যায়কে বলেন, তিনি আর পারছেন না। তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক। গত মাস দেড়েক আর কাজ করার মতো শারীরিক অবস্থা ছিল না সন্তুর। তাঁর শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘সাঁঝবাতি’।
মন ভাল নেই টলিপাড়ার। চলে গেলেন কিংবদন্তী অভিনেতা সন্তু মুখোপাধ্যায়। কিছু দিন আগেই প্রয়াত হয়েছেন অভিনেতা এবং প্রাক্তন সাংসদ তাপস পাল। বিষাদের সুর বেজে চলেছে টলিউডের অন্দরে।
অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর প্রথম ফিচার ফিল্ম ‘হেমন্তের পাখি’-র কথা। ওই ছবিতে তাঁর বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সন্তু মুখোপাধ্যায়। পরম বলেন, খুব কাছ থেকে চিনতাম ওঁকে। আমার মায়ের ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ছিলেন সন্তু কাকু। এক সঙ্গে কত আড্ডা দিয়েছি। খেতে খুব ভালবাসতেন। আমুদে, বৈঠকি, মেজাজি মানুষ ছিলেন। খুব খারাপ লাগছে।
‘নক্সিকাঁথা’, ‘জলনূপুর’ , ‘কুসুম দোলা’, ‘ফাগুন বউ’ ধারাবাহিকে সন্তু মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন স্নেহা চট্টোপাধ্যায়। স্নেহার কথায়, একটা বাদশাহী ব্যাপার ছিল সন্তুদার মধ্যে। গাড়ি থেকে নামা কণ্ঠস্বর, অভিনয় সবটাই রাজকীয়। সেই সন্তুদা শুয়ে পড়েছেন দেখে খুব বড় ধাক্কা লেগেছিল। খুব ইয়ার্কিও করতেন। বলতেন, আর কথা বলার লোক কই? এই তো তোরা কয়েক জন।
অভিনেত্রী পায়েল সরকার কেরিয়ারের শুরুতেই অভিনয় করেছিলেন অভিনেতার সন্তু মুখপাধায়ের সঙ্গে। সেই স্মৃতির রেশ টেনে তিনি বললেন, সেই ভাবে কাজের সুযোগ না হলেও, কেরিয়ারের শুরুতে ওঁকে পেয়েছিলাম। খুব খারাপ লাগছে। অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের সবার জন্য।
অভিনেতা শুভাশিষ মুখোপাধ্যায় বলছেন, ৪০ বছরের সম্পর্ক আমাদের। একবার এক নাটকের মঞ্চে আলোকের এই ঝর্ণা ধারা গেয়েছিলেন—আজ সেই গান খুব মনে পড়ছে। এক সময় আমার গলার স্বর থেমে গিয়েছিল, সন্তুদা নিজে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে দিয়েছিলেন, এমন কি নিজেও গিয়েছিলেন সঙ্গে। যাত্রায় যাওয়ার পর যাত্রার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলেন। অসুস্থতা নিয়েও সিরিয়ালে কাজ করতেন।
পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মনে পড়ে যাচ্ছে তাঁর সঙ্গে কাটান মুহূর্তগুলোর কথা। নিজের বাবার সঙ্গেও মিল খুঁজে পাচ্ছেন তিনি। বললেন, বাবা মনে করতেন উত্তম কুমারের পর তিনি বাংলা সিনেমা জগতের সবচেয়ে প্রমিসিং অভিনেতা- মন ভাল নেই তাঁর, একেবারেই।