আরিফ চৌধুরী শুভ: ”শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি আকাশে বাতাসে ওঠে রণি… বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ…”
আকাশবাণী কলকাতার ‘সংবাদ পরিক্রমা’ প্রচারিত অংশুমান রায়ের লেখা ১৯৭১ সালের সেই গানটি শতাধিক সুবিধাবঞ্চিত শিশুর কণ্ঠে উচ্চারিত হলো বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকীতে।
১৭ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুরের আদাবরে অবস্থিত অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) এর আয়োজনে নিজেদের মতো করে হেসে খেলে গেয়ে বঙ্গবন্ধুকে উপস্থাপন করেছে শিশুরা। বঙ্গবন্ধু যেন শিশুদের কণ্ঠেই শিশুদের সাথী হয়েই ধরা দিলেন তাদের চোখেমুখে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এএসডি’র নির্বাহী পরিচলক জামিল এইচ চৌধুরী, কর্মসূচি পরিচালক এম এ করিম, ডেভলপমেন্ট অব চিলড্রেন এ্যাট হাই রিস্ক (ডিসিএইচআর) প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউকেএম ফারহানা সুলতানা, প্রকল্প কর্মকর্তা নুর মোহাম্মদ এবং এই প্রকল্পের ৩৪ জন কর্মকর্তাসহ সংস্থার ১২টি সেন্টারের বিভিন্ন শ্রেণির শিশু শিক্ষার্থীরা।
গুল-ই জান্নাতের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে কেক কেটে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ পালনের পরই ভালো ফলাফলের জন্য বিভিন্ন শ্রেণি থেকে ২১ জন শিশুকে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বই উপহার দেয়া হয়।
কোমলমতি শিশুদের কণ্ঠে মুজিবই সময়ের শ্রেষ্ঠ পথ প্রদর্শক সেটিই শোনালো শিশু শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার সুযোগ না পেলে এই শিশুরা হয়তো বাঙালি জাতির স্থপতিকে কোনদিনই জানার সুযোগ পেত না। এএসডি তাদের এই সুযোগটি করে দিয়েছে। তাই এএসডির প্রতি কৃতজ্ঞ শিশুরা। বড়দের পাশাপাশি সুবিধাবঞ্চিত শিশু লামিয়া, নুপুর, জান্নাতুলসহ বেশ কয়েকজন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের জীবন্ত স্বাক্ষী সেদিনের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলেটি এবং বর্তমানে এএসডির নির্বাহী পরিচলক জামিল এইচ চৌধুরীও আজ বয়সের ভারে অনেকটা ন্যুয়ে পড়েছেন সত্য, কিন্তু বঙ্গবন্ধু শব্দটি উচ্চারণ করতে গেলেই তিনি সজীব ও দীপ্ত হয়ে ওঠেন বার বার।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যে বৈষম্যহীন সমাজ কল্পনা করেছেন, সেটি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি আমরা। বঙ্গবন্ধু সুবিধাবঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন যেভাবে, সেভাবে প্রয়োজনে আমার জীবনও আমি উৎসর্গ করবো, কিন্তু আমৃত্যু কাজ করে যাবো।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুইতো বাংলাদেশ হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেন বার বার। সেই ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধু যেন এখনো আমার চোখে বর্তমান। বঙ্গবন্ধুই যেন আমাকে তাড়িত করে প্রতিটি মুহুর্ত।
উল্লেখ্য যে, এএসডি ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশের অবহেলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠি ও নারীদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে নিরালশভাবে। তবে বর্তমানে এই সংগঠনটি শুধু মাত্র ঢাকা শহরের ৩টি স্পটে কাজ করছে। রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বস্তিবাসী শিশুদের জন্য ৬ টা প্রি-স্কুল, পথশিশুদের ডিআইসি-ড্রপ ইন সেন্টার ৩টি এবং কর্মজীবী শিশুদের জন্য ৩টি লার্নিং এন্ড রিক্রিয়েশন সেন্টার রয়েছে। মোট ১২টি সেন্টার পরিচালনায় জড়িত রয়েছে ৩৪ জন কর্মকর্তা। জার্মানীর ‘ব্রেড ফর দ্যা ওয়ার্ল্ড’-এর আর্থিক সহযোগিতায় ডেভলপমেন্ট অব চিলড্রেন এ্যাট হাই রিস্ক (ডিসিএইচআর) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে এএসডি।
সকাল সাড়ে ১১ টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানটি শেষ হয় বেলা ১টায়।