দেশের তিন পার্বত্য জেলার মধ্যে একটি পার্বত্য জেলা বান্দরবান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চ আঁকাবাঁকা পথ আর উঁচুনিচু সবুজ পাহাড়, মেঘ, নদী, জলপ্রপাত, ঝর্ণার মিলনে অপূর্ব সুন্দর এই জেলা। শীতের মৌসুমে পাহাড়ের সৌন্দর্য বেড়ে যায়। ভোরের কুয়াশায় স্নাত পাহাড়ের প্রকৃতি সহজেই কেড়ে নেয় ভ্রমণপিপাসুদের মন।
পাহাড়কন্যা খ্যাত বান্দরবানে রয়েছে প্রচুর দর্শনীয় স্থান। এ কারণে জেলাটি ভ্রমণপিপাসুদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে।
এ সময়ে বান্দরবানের তিন উপজেলা রোয়াংছড়ির দেবতাখুম ও থানচির রেমাক্রি, নাফাখুম ও আমিয়াখুম, রুমার কিওক্রাডং, বগালেক এইসব পর্যটন কেন্দ্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও বান্দরবানের নীলাচল, মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, শৈলপ্রপাত ঝর্ণা, প্রান্তিক লেক, চিম্বুক পাহাড়, নীলগিরি, লামা উপজেলার মিরিঞ্জা ভ্যালি, আলীকদম উপজেলার মারাইতং পাহাড় ও আলী গুহা ভ্রমণে কোনো বাধানিষেধ নেই। এ পর্যটন স্পটগুলোর প্রতিটিই আকর্ষণীয়। সঙ্গতকারণে মৌসুম এলেই এসব স্থানে ঢল নামে পর্যটকদের।
যেসব স্থানে ভ্রমণে যেতে পারবেন-
নীলাচল:
নীলাচল বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ায় সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত। নীলাচলের চারপাশ পাহাড় দ্বারা সজ্জিত। নীলাচল থেকে ছবির মত আঁকা পাহাড়ি শহর বান্দরবান দেখা যায়, পাখির চোখে উঁচু নিচু পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে পাহাড়িদের পাড়া, কোথাও বিস্তীর্ণ দিগন্তের মেঘের ভেলা। এমন মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে পারেন পর্যটকরা।
যেভাবে যাবেন: জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জিপ, মাহিন্দ্রা, সিএনজি দিয়ে নীলাচল যেতে পারবেন। অথবা কেরাণীহাতগামি লোকাল বাসেও যেতে পারবে এ ক্ষেত্রে বান্দরবান-চট্টগ্রাম প্রধান সড়ক থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পাহাড়ে উঠতে হবে।
গোল্ডেন টেম্পল :
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র চার কিলোমিটার দূরে কানাই পাড়া এলাকায় অবস্থিত গোল্ডেন টেম্পল । এ বৌদ্ধ মন্দিরে ৫৭ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বৌদ্ধ মূর্তি রয়েছে। যা এ গোল্ডেন টেম্পলের প্রধান আকর্ষণ। এ বৌদ্ধ মন্দিরটি কারুকার্যে ভরপুর। ছোট্ট পাহাড়ের উপর নির্মিত এ বৌদ্ধ মন্দির দেখতে হাজারো পর্যটক আসেন। এক দিকে যেমন বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়, অন্যদিকে পর্যটকদের জন্য হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র।
যেভাবে যাবেন : জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জিপ, মাহিন্দ্রা, সিএনজি দিয়ে যেতে পারবেন। অথবা কেরাণীহাতগামি লোকাল বাসেও যাওয়া যায়।
মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স :
চারিদিকে উঁচুনিচু পাহাড় আর মাঝে টলটলে স্বচ্ছ পানির লেক। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য যেন লুকিয়ে আছে এই পর্যটন কেন্দ্রে। এখানে সবুজ প্রকৃতি, লেকের স্বচ্ছ পানি আর পাহাড়ের চূঁড়ায় চড়ে দেখতে পাবেন ঢেউ খেলানো বান্দরবানের নয়নাভিরাম দৃশ্য। পাহাড়ে পাহাড়ে ঘুরে বেড়াতে পারেন। লেকের উপর দিয়ে চলে গেছে আকর্ষণীয় ২টি ঝুলন্ত সেতু। মেঘলায় চিত্তবিনোদনের বিভিন্ন উপকরণের মধ্যে রয়েছে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, প্যাডেল বোট ও কেবল কারে রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা যে কেউ নিতে পারেন।
যেভাবে যাবেন : জেলা শহরের বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জিপ, মাহিন্দ্রা, সিএনজি দিয়ে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে যেতে পারবেন। অথবা কেরাণীহাতগামি লোকাল বাসে ৭ কিলোমিটার গেলেই প্রধান সড়কের পাশেই দেখা মেলবে মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স। অথবা কেরাণীরহাট থেকেও লোকাল বাসে চড়ে মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে আসতে পারবেন।
প্রান্তিক লেক :
পাহাড় আর অরণ্যে ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় প্রান্তিক লেক ৬৫ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। ২০১৩ সালে সরকার এই পর্যটন এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। এখানে রয়েছে প্রায় ২৫ একর আয়তনের প্রাকৃতিক জলাশয় বা পাহাড়ি লেক। বিভিন্ন প্রজাতির গাছগাছালিতে ভরপুর লেকের চারপাশ। রয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ, পিকনিক স্পট, বিশ্রামাগার, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, ট্রি-টপ অ্যাডভেঞ্চার, জিপ-লাইন ট্রলি (জিপলাইনার), কিডস কর্নার ও সৌরবিদ্যুৎ চালিত বোট। প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে লেক থেকে ধরা যায় মাছ। এছাড়া রাতে তাঁবু টাঙিয়ে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন : বান্দরবান জেলা শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে হলুদিয়া হয়ে প্রান্তিক লেকে যেতে হয়। শহরের বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদের গাড়ি, জিপ, মাহিন্দ্রা, সিএনজি দিয়ে যেতে পারবেন।
চিম্বুক পাহাড় :
বান্দরবান জেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এটি বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম পর্বত। চান্দের গাড়ি দিয়ে চিম্বুক ভ্রমণের সময় এর চারপাশের নয়নাভিরাম প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। দর্শনার্থীরা যখন এই জায়গা থেকে নিচের দিকে তাকায়, তারা মেঘের ভেলা দেখে অবাক হয়ে যায়। নীলগিরি পর্যন্ত যেতেই চিম্বুক এলাকায় টাইটানিক ভিউ পয়েন্ট, ডাবল হ্যান্ড ভিউ পয়েন্টে মনমুগ্ধকর মেঘের মিতালি খুব কাছে থেকে দেখা যায়। সাধারণত একই সড়কে হওয়ায় পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা একসঙ্গে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে থাকেন।
শৈলপ্রপাত :
মিলনছড়ির এই জলপ্রপাতটি থানচি বাস স্টেশন থেকে থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এর অত্যন্ত ঠাণ্ডা এবং স্বচ্ছ পানিতে প্রচুর পাথর দেখা যায়। ঝর্ণাটি স্থানীয়দের জন্য বিশুদ্ধ পানির একটি বড় উৎস। জলপ্রপাতের বাইরে একটি ছোট্ট বাজারও রয়েছে যেখানে পর্যটকরা বম সম্প্রদায়ের তৈরি তাঁতের পণ্য এবং স্থানীয় নারী-পুরুষেরা আনারস, পেয়ারা, জাম্বুরাসহ নানান রকমের পাহাড়ে উৎপাদিত ফল কিনতে পারেন। এখান থেকে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সংগ্রামী জীবন গভীরভাবে অবলোকন করা যায়। বান্দরবানের অন্যতম আকর্ষণ চিম্বুক পাহাড় ও নীলগিরির পথের পড়ে শৈলপ্রপাত। তাই নীলগিরি ভ্রমণের গাড়ি মাঝ পথে থামিয়ে এই ঝর্ণা দেখে নেওয়া যায়।
নীলগিরি :
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪ হাজার ফুট উপরে অবস্থিত নীলগিরি। বাংলাদেশের অন্যতম একটি উঁচু শৃঙ্গ। পুরো এলাকাটি মেঘে ঢেকে থাকার কারণে দর্শনার্থীরা নীলগিরিকে মেঘের দেশ বলে থাকেন। নীলগিরির সূর্যোদয়ের মুহূর্তটি এবং কুয়াশাচ্ছন্ন সকাল যে কোনো পর্যটককে চমকে দিতে পারে। মনোরম হেলিপ্যাড নীলগিরির সবচেয়ে আকর্ষণীয় জায়গাগুলোর একটি। এই পর্যটন এলাকাটির রক্ষণাবেক্ষণায় দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর বান্দরবান ব্রিগেড।
যেভাবে যাবেন : বান্দরবান জেলা শহর থেকে চাঁদের গাড়ি, মাহিন্দ্রা, জিপ, সিএনজি দিয়ে যাওয়া যায়। তবে দুই থেকে চারজন হলে কম খরচে যেতে চাইলে সিএনজি বা মাহিন্দ্রা নিতে পারেন। একটা চাঁদের গাড়িতে প্রায় ১২ জন পর্যটক ভ্রমণে যেতে পারে। সাধারণত একই সড়কে হওয়ায় পর্যটকরা চিম্বুক, নীলগিরি, মিলনছড়ি, এবং শৈলপ্রপাত ঝর্ণা একসঙ্গে দেখার জন্য গাড়ি ভাড়া করে থাকেন।
লামা মিরিঞ্জা ভ্যালি :
মিরিঞ্জা ভ্যালি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৬০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এখানে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি। সবুজ প্রান্তর যেখানে মিশে যায় মেঘের ভেলায়। এখানে ইচ্ছে করলেই ছোঁয়া যায় মেঘ। প্রকৃতি এই এলাকাটিকে সাজিয়েছে আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে। আকাশকেও মনে হয় বেশ কাছে। রাতে শহরের আলো যেন সৌন্দর্যকে আরো বৈচিত্র্যময় করে তোলে।
মিরিঞ্জা ভ্যালিতে পর্যটকেরা পাহাড়িদের জুম ঘরের আদলে বানানো অনেক জুমঘর বা মাচাংঘরে রাত্রিযাপন করার সুবিধা রয়েছে। এছাড়া তাবু টাঙ্গিয়েও রাত্রিযাপনে সুযোগ রয়েছে। মিরিঞ্জা ভ্যালি থেকে সূর্যোদয়ের সাথে মেঘের মিতালির দৃশ্য যে কারো মন ছুয়ে যাবে।
যেভাবে যাবেন : বান্দরবান শহর থেকে ৮৬ কিলোমিটার ও কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলা হতে ২৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লামা উপজেলা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে। মিরিঞ্জা ভ্যালি, আলীকদম মারাইতং পাহাড় ও আলী গুহা একই সড়কে হওয়ায় এইসব পর্যটন কেন্দ্রে যেতে হলে কক্সবাজার চকরিয়া উপজেলার বাসস্ট্যান্ডে থেকেই যেতে হয়। চট্টগ্রাম অথবা ঢাকা থেকে চকরিয়ায় নেমে আলীকদম ও লামাগামী বাসে করে যেতে হয়। সরাসরি ঢাকা থেকে আলীকদম বাস হলে লামা মিরিঞ্জা ভ্যালি এলাকায় নামলেই দেখা যাবে লামা মিরিঞ্জা ভ্যালি।
ব্যাক্তি মালিকানায় মিরিঞ্জা ভ্যালিতে ছোট ছোট মাচাংঘরের সাথে একটি ছোট রেস্টুরেন্টও রয়েছে। ওখান থেকে খেয়ে নিতে পারবেন। অবথা কি কি খাবেন অর্ডার করলে প্রয়োজনে রুমে এসে খাবার দিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে মিরিঞ্জা ভ্যালিতে।
আলী গুহা বা আলী সুরঙ্গ :
পার্বত্য জেলা বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা সদর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরেই মাতামুহুরী-তৈন খাল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকা দুই পাহাড়ের চূঁড়ায় অবস্থিত। এটি প্রাকৃতিক ভাবে সৃষ্ট, ঝিরি থেকে প্রায় ৫০ ফুট উপরে এই গুহা। তৈন খাল থেকে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মত ঝিরির পথে যেতেই দেখা যাবে আলী গুহা। এখানে তিনটি গুহা রয়েছে। দ্বিতীয় গুহায় এক প্রান্তে ঢুকে অন্য প্রান্তে বের হওয়া যায়। এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতেই এক অন্যরকম রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবে। প্রকৃতির এই গুহাকে ঘিরে রহস্যের শেষ নেই।
যেভাবে যাবেন : আলীকদম বাজার অথবা পান বাজার থেকে টমটম বা অটোরিকশা করে গেলে ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে তৈন খাল ব্রিজ পৌঁছাতে। এরপর স্থানীয় গাইডের সাহায্যে ১০-২০ মিনিট ঝিরির পথ ধরে হাঁটতে দেখা যাবে আলী সুরঙ্গ। এ আলী সুরঙ্গ দেখতে হাতে বেশি সময় নিয়েও যেতে হয় না। হাতে দুই ঘণ্টা সময় থাকলেই আলীকদম বাজার থেকে ঘুরে আসতে পারবেন।
মারাইতং পাহাড় :
পাহাড়ের চূড়ায় বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার মারাইতং জাদি পাহাড়। মারাইতং সমুদ্রপৃষ্ঠ ১৬৬৫ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এখান থেকে যতদূর দৃষ্টি যায় শুধু পাহাড় আর পাহাড়। সে সব পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ম্রো, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের জনবসতি। নিচে এঁকেবেঁকে বয়ে চলেছে মাতামুহুরী নদী। মারাইতং পাহাড়ে রয়েছে বিভিন্ন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর বসবাস। এদের মধ্যে ত্রিপুরা, মারমা ও ম্রো জনগোষ্ঠী। এই পাহাড়ের নিচে থাকে মারমারা আর পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে ম্রোদের পাড়া। পাহাড়ের ঢালে ঢালে তাদের বাড়ি। এ পাহাড়ের পর্যটকরা যায় তাঁবু টাঙ্গিয়ে রাত্রিযাপন করে সূর্যোদয়ের সাথে মেঘের লুকোচুরি দেখতে। এ পাহাড়ের বিশেষত্ব হলো সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দুইটাই দেখা যায়। একই সাথে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত দেখতে বেশ চমৎকার।
যেভাবে যাবেন : ঢাকা আলীকদম সরাসরি বাসে এসে আবাসিক নামক এলাকায় নামতে হবে অথবা আলীকদম বাসস্ট্যান্ড থেকে টমটম, চাঁদের গাড়ি আবাসিক নামক এলাকায় আসতে হবে। এরপর পাহাড়ে সর্বোচ্চ চূড়া পর্যন্ত উঠতে হবে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পাহাড়ি পথ। ট্রেইলের শুরু থেকে একদম চূড়া পর্যন্ত পুরোটাই খাড়া রাস্তা। পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে মোটামুটি ১ থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগবে।
মারাইতং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে কি খাবো এমন চিন্তা সবারই থাকে। মারাইতং পাহাড়ের চূড়ায় একটি ছোট্ট দোকান রয়েছে। ওই দোকানদারের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিবেন রাতে কি খাবেন, সকালে কি খাবেন। অথবা আবাসিক এলাকায় কয়েকটি খাবার হোটেল রয়েছে তাদের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিবেন কি খাবেন। রাত্রিযাপনের জন্য তাঁবু বলে রাখতে হবে। এর জন্য জনপ্রতি ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া গুনতে হবে।
বান্দরবানে কোথায় থাকবেন:
বান্দরবান ভ্রমণে গিয়ে কোথায় থাকবেন, কোথায় পাবেন সাশ্রয়ী হোটেল-এমন নানা বিষয় আগেই জেনে যাত্রা শুরু করেন অনেক পর্যটক। ভ্রমণপ্রিয় এসব মানুষের জন্য কিছু হোটেলের তথ্য।
বান্দরবান জেলা শহরেই রয়েছে হোটেল সারওয়ার, হোটেল পর্বত, হোটেল পূরোবী, হোটেল থ্রিস্টার, হোটেল ফোরস্টারসহ বহু আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলের কয়েকটিতে মাত্র ৫০০ টাকা ভাড়া দিয়েও থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ভালো মানের কক্ষ চাইলেও ভাড়া দুই থেকে তিন হাজার টাকার মধ্যে। এসব হোটেলে সরাসরি গিয়েই কক্ষ ভাড়া নেওয়া যায়।
জেলার শহরে প্রবেশমুখে মেঘলায় রয়েছে পর্যটন মোটেল। এই মোটেলে ন্যূনতম ১ হাজার ৬০০ টাকা দিয়েই মেলে কক্ষ। বেশি ভাড়ার কক্ষও রয়েছে। পর্যটন মোটেলে কক্ষ বুকিং দিতে মুঠোফোনে ০১৮১৬১৫০৩৬৩ নম্বরে যোগাযোগ করতে হবে।
মেঘলা এলাকায় রয়েছে বেসরকারি পর্যটন কেন্দ্র হলিডে ইন। পাহাড়, হ্রদের পাশে গড়ে ওঠা এই রিসোর্ট পর্যটকদের কাছে খুবই জনপ্রিয়। হলিডে ইনের কটেজের ভাড়া শুরু হয়েছে আড়াই হাজার থেকে। ০১৭৭৭৭৬৫৭৮২ নম্বরে কল করে কক্ষ বুকিং দেওয়া যায়।
জেলা শহরের বাসস্টেশন এলাকায় অবস্থিত হোটেল হিলভিউ। জেলার সবচেয়ে বেশি পর্যটকের ভিড় হয় এই হোটেলে। সারা বছর ধরেই হোটেলটি জমজমাট থাকে। এ হোটেলে কক্ষ রয়েছে ৯০টি। হোটেলে কক্ষের ন্যূনতম ভাড়া দুই হাজার টাকা। ০১৭৯০৮৪২৭৭৭ নম্বরে কল দিয়ে কক্ষ ভাড়া নেওয়া যাবে।
জেলা শহর থেকে চার কিলোমিটার দুরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে মিলনছড়ি হিলসাইড রিসোর্ট। এই রিসোর্ট থেকে সবুজ বনাঞ্চল, পাহাড় ও সাঙ্গু নদের মনোরম দৃশ্য দেখা যায়, যা দেখে পর্যটকদের মনে প্রশান্তি আসে। হিলসাইড রিসোর্টের কটেজেও দুই হাজার টাকার মধ্যেই থাকা যায়। তবে আছে বেশি ভাড়ার কিছু কক্ষও। বুকিংয়ের জন্য মুঠোফোন নম্বর-০১৭৩০০৪৫০৮৩।
আলীকদম উপজেলায় উপজেলার পাশেই রয়েছে হোটেল ‘দামতুয়া ইন’ ও নয়াপাড়া এলাকায় রয়েছে মারাইতং রিসোর্ট। এই দুই আবাসিক হোটেলে দুই হাজার টাকার মধ্যে থাকা যায়। তবে আছে বেশি টাকার ভাড়ার কক্ষও। বুকিংয়ের জন্য মুঠোফোন নম্বর- ০১৮২৯৬৭১৮৩৩
এছাড়া আলীকদম উপজেলায় পান বাজার এলাকায় রয়েছে সরকারি রেস্ট হাউস। এখানে ৮০০-১৫০০ টাকার মধ্যে তিন-চারজন থাকা যায়। বুকিংয়ের জন্য নম্বর-০১৭৯১৩০০৫৮৫
বান্দরবান গেলে কি খাবেন :
পার্বত্য বান্দরবানে মার্মা, চাকমা, ত্রিপুরা, ম্রো, বম, খেয়াং, খুমীসহ ১১টি সম্প্রদায়ের বসবাস। পর্যটকেরা পাহাড়ে ঘুরতে যান তাদের অনেকেই পাহাড়ি খাবার খেতে পছন্দ করেন বা স্বাদ নিতে চায়। তাদের জন্য মুন্ডি। মুন্ডির সাথে নানান রকমের লাংসো ও পাহাড়ি পিঠা পাওয়া যায়। এটি মারমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। তবে শুধু এ এলাকার মানুষই নয়, এখানে আসা পর্যটকদের খাবারের মূল আকর্ষণও মুন্ডি। এ খাবারের রয়েছে অন্য রকম স্বাদ। বান্দরবান গেলে কেউ এ খাবারের স্বাদ নিতে ভুল করেন না।
দুপুরে বা রাতে ভাতের সাথে রাখতে পারেন ব্যম্বু চিকেন, বাঁশকুড়ল, জুমের চালকুমড়া সাথে ছোট চিংড়ি রান্না, টকফল, টকপাতা, মরিচ তোযাসহ নানান জাতের পাহাড়ি খাবার। জুম্মো রেস্টুরেন্ট, বোমাংঠং রেস্টুরেন্ট, তোযা, লভিয়েত, শৈ শৈ ক্যাফে নামে বান্দরবান মধ্যম পাড়া ও উজানি পাড়ায় অনেকগুলো পাহাড়িদের খাবার হোটেল রয়েছে। ওইসব খাবার হোটেলে গেলেই দেখা মিলবে পাহাড়ি রেসিপির নানা পদের খাবার।