নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) অনুমোদন দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কমিশনের ৭২৯তম নিয়মিত সভায় ওয়ালটন শেয়ারের কাট-অব প্রাইস ৩১৫ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মো: সাইফুর রহমান সাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।
এদিকে দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ইপিএস নিয়ে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ওয়ালটন। প্রসপেক্টাসে উল্লিখিত আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ওয়ালটনের শেয়ার প্রতি মুনাফা বা ইপিএস ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা। নিট সম্পদ মূল্য বা এনএভি ২৪৩.১৬ টাকা। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ অর্থবছরের ইপিএসের বিবেচনায় ওয়ালটন ৮ম স্থানে রয়েছে। এমনকি বহুজাতিক বার্জার পেইন্টস ও গ্রামীণফোনের চেয়েও ওয়ালটনের ইপিএস বেশি।
এদিকে এনএভি’র বিবেচনায় তালিকাভুক্ত দেশী-বিদেশী ৩৫৮টি কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে শীর্ষ ৫-এ রয়েছে ওয়ালটন। এছাড়া, প্লেসমেন্ট বিতর্ক ছাড়াই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে যাচ্ছে ওয়ালটন। প্লেসমেন্ট শেয়ার না থাকায় হঠাৎ করে ফ্রি ফোট শেয়ার সংখ্যা বাড়ার সুযোগ নেই।
ওয়ালটনের কোম্পানি সচিব পার্থ প্রতীম দাশ জানান, এখন নিয়ম অনুযায়ী আইপিও প্রসপেক্টাস প্রকাশের পাশাপাশি আইপিও সাবস্ক্রিপশন ও লটারি অনুষ্ঠিত হবে। লটারিতে বিজয়ী আবেদনকারীদের মধ্যে শেয়ার বন্টন করা হবে এবং শেয়ার বিনিয়োগকারীদের হিসাবে জমা করবে সিডিবিএল। এরপর স্টক এক্সচেঞ্জে ওয়ালটনকে তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি শেয়ার লেনদেন শুরুর দিন নির্ধারণ করবে বিএসইসি।
ওয়ালটনের নির্বাহী পরিচালক উদয় হাকিম বলেন, এতোদিন ওয়ালটন একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিলো। এখন দেশের সাধারন বিনিয়োগকারীও মালিকানায় যুক্ত হবেন। তার প্রত্যাশা, ওয়ালটনে বিনিয়োগ করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা লাভবান হবেন এবং ওয়ালটনের অন্তর্ভূক্তি দেশের পূঁজিবাজারে ইতিবাচক ধারার সৃষ্টি করবে। আইপিও অনুমোদনের জন্য সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন, বিনিয়োগকারীদের বিভিন্ন সংগঠন এবং সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
দেশের পুঁজিবাজারে সর্বপ্রথম ডাচ পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত নিলাম বা বিডিং প্রক্রিয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে ওয়ালটন শেয়ারের কাট-অব প্রাইস ৩১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এই দরে ওয়ালটনের শেয়ার কিনবেন বিডিংয়ে অংশ নেওয়া যোগ্য বিনিয়োগকারীরা। আইন অনুসারে, আইপিও’তে কাট-অব প্রাইসের ১০ শতাংশ কমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার ইস্যুর বিধান রয়েছে। তবে, ুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ ও দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে আরো ১০ শতাংশ ছাড় দিয়েছে ওয়ালটন। ফলে, কাট-অব প্রাইসের ২০ শতাংশ কমে প্রতিটি শেয়ার ২৫২ টাকায় ইস্যু করবে ওয়ালটন।
বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ১০০ কোটি টাকার তহবিল উত্তোলন করবে ওয়ালটন হাই-টেক। এর মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৬০ কোটি ৯৬ লাখ ৫৭ হাজার ৮০৫ টাকা এবং সাধারন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ৩৯ কোটি ৩ লাখ ৪২ হাজার ১৯৫ টাকা সংগ্রহ করবে। সংগৃহীত তহবিল থেকে ৬২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যবসা স¤প্রসারণে, ৩৩ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ ও ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়ে আইপিও পরিচালনাবাবদ ব্যয় করা হবে। ওয়ালটন হাই-টেকের ইস্যু ব্যবস্থাপকের দায়িত্বে রয়েছে এএএ ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট।
ইপিএস বিবেচনায় তালিকাভুক্তির শুরুতে আইপিও বিনিয়োগকারীরা ওয়ালটনের শেয়ার দর তুলনামূলক কমে পাবেন।শেয়ারবাজারে শীর্ষে থাকা সর্বশেষ অর্থবছরে রেকিট বেনকিজারের ইপিএস হয়েছে ১৩১.০৬ ইপিএস টাকা। এরপরে ম্যারিকো বাংলাদেশের ৮৪.০১ টাকা, গ্লাক্সোস্মিথকাইনের ৮১.৮৩, লিন্ডে বিডির ৮০.৯৩ টাকা, বাটা সুর ৭২.৭৯ টাকা, বিট্রিশ আমেরিকান টোব্যাকোর ৫১.৩৭ টাকা ও রেনেটার ৪৬.৬৩ টাকা। এরপরেই রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্তির পথে থাকা ওয়ালটন। এ কোম্পানির ইপিএস ৪৫.৮৭ টাকা। বাজারে ওয়ালটনের সমান ও বেশি ইপিএস থাকা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন ৬৯৩.২০ টাকা শেয়ার দরে রয়েছে বাটা সু।
প্লেসমেন্ট বিতর্ক থেকেও দূরে রয়েছে ওয়ালটন। সেজন্য পরিশোধিত মূলধনবাবদ ওয়ালটনের উদ্যোক্তা /পরিচালকদের কাছে থাকা ৩০০ কোটি টাকার শেয়ারের পুরোটাই ৩ বছরের জন্য লক-ইন করা থাকবে। অর্থাৎ, বাজারে ওয়ালটন শেয়ারের লেনদেন শুরুর ৩ বছরের মধ্যে উদ্যোক্তা/পরিচালকরা তাদের কাছে থাকা শেয়ার বিক্রি করবেন না।