আরিফুল ইসলাম, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের বাসাইলে ৯ দিনপর জানা গেল এমপি’র অনুষ্ঠান এবং পরের দিন অপর এক অনুষ্ঠানের মধ্যাহ্ণ ভোজে সহায়তাকারী বাসাইল উপজেলা কৃষি অফিসের পিয়ন মোঃ দুলাল হোসেন মিয়া (৫১) করোনা রোগী।
গত ১৬ জুন (মঙ্গলবার) পিয়ন মোঃ দুলাল হোসেন মিয়া করোনার উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন। তার করোনা আক্রান্তের বিষয়টি ২৬ জুন (শুক্রবার) দুপুরে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফিরোজুর রহমান নিশ্চিত করেন।
গত বুধবার (২৪ জুন) উপজেলা কৃষি অফিসের আয়োজনে উপজেলা হলরুমে আয়োজিত স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) অনুষ্ঠানে করোনা আক্রান্ত দুলাল হোসেন উপস্থিত হয়ে কোরআন তেলাওয়াত ও কৃষকদের মাঝে সবজি বীজ বিতরণে সহযোগিতা করেন। পরদিন বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) দুপুরে উপজেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কৃষকদের প্রশিক্ষনের অনুষ্ঠান হয়। এ অনুষ্ঠানে শেষে কৃষি অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ বিভূতি ভূষণ সরকার ও জেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ইসমাইল হোসেনসহ অতিথিদের মধ্যাহ্ণ ভোজের বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করেন করোনা আক্রান্ত রোগী দুলাল হোসেন।
জানা যায়, গত ১৬ জুন পিয়ন মোঃ দুলাল হোসেন মিয়া করোনার উপসর্গ নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দেন। এসময় তাকে বাসায় আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হলেও সে নিয়মিত অফিসে যাতায়াত করেন। নমুনা দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ না করে ২৪ জুন উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কাজে সহযোগীতা করেন। এই অনুষ্ঠানে এমপি এ্যাডঃ জোয়াহেরুল ইসলামের (ভিপি জোয়াহের) ছা্ড়াও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী অলিদ ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামছুন নাহার স্বপ্না, কাশিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা রাজিক, কাঞ্চনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুন-অর-রশিদ খান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তারসহ অর্ধশতাধিক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। একই ভাবে ২৫ জুন উপজেলা কৃষি অফিস আয়োজিত কৃষক প্রশিক্ষন অনুষ্ঠানেও তিনি মধ্যাহ্ণ ভোজের কাজে সহযোগিতা করেন।
দীর্ঘ ৯দিন পর ২৫ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে দুলাল হোসেনের করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে। বিষয়টি জানাজানি হলে ওই দুইটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত নেতাকর্মী, অফিসার ও কৃষকদের মাঝে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে। কৃষি অফিসের এমন কাজে সচেতনমহলে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বইছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজুর রহমান বলেন, ‘গত ১৬ জুন কৃষি অফিসের পিয়ন দুলালের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সেসময় তাকে তার বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি আইসোলেশনে না থেকে নিয়মিত অফিস করেছেন। বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) রাতে তার রিপোর্টে করোনা পজেটিভ এসেছে।’
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজনীন আক্তার বলেন, তার নমুনা দেয়ার বিষয়টি আমার জানা ছিল না। ২৫ জুন (বৃহস্পতিবার) রাতে হাসপাতাল থেকে ফোন করে দুলালের করোনা পজেটিভের বিষয়টি জানানো হয়। এখন দুলালকে তার বাড়িতে আইসোলেশনে থাকার জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামছুন নাহার স্বপ্না বলেন, বুধবার উপজেলা হলরুমের অনুষ্ঠানে কৃষি অফিসের পিয়ন দুলাল উপস্থিত ছিল। কৃষি অফিস লকডাউনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এছাড়াও ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে তার সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের যার যার বাড়িতে আইসোলেশনে রাখার ব্যবস্থা করা হবে।