আমেরিকার মনুষ্যরোবট
ডাকপিয়নগুলোও সরকারী সৈনিকের মতো বেরসিক। অচেনা যাত্রীর মতো একেকদিন একএকজন আসে। সন্ধ্যায়, গোপনে নিঃশব্দে গাড়ির দরজা খোলে পার্সোনাল মেইলবক্সে রেখে যায় কারেন্টবিল, টেলিফোনবিল, ওয়াসাবিল, ওয়াইফাইবিল। তারা কি জানে না, শীত কি আনন্দের না কি বেদনার। গৃহকর্তা জবুথবু বিল পরিশোধের তাড়নায় ছুটে যান কাজে, কাজের মাঝেই তিনি আবিষ্কার করেন, তিনি মানুষ নন, মানুষের মতোই দেখতে, তিনি আমেরকিার মনুষ্যরোবট…।
ছোট ছোট ভালোবাসা নিয়ে জলের সাঁকোতে ঘুরে
ডলার পাউন্ডের প্রলোভনে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা মানুষের স্বপ্ন ও আশা ধূসর রঙের। মাঝে মাঝে পার্কে আসা সি-গাল গুলো মনে করিয়ে দেয় কতদিন চড়–ইপাখি দেখি না, বুলবুলি দেখি না। অব্শ্য ঝিঙেফুলের গল্প কিংবা মটরশুটি সিমের গল্প অথবা হলুদশর্ষের গল্প ওরা কখনই শুনেনি। কবিতা পড়েনি শীতের, কবিতা পড়েনি বর্ষার কিংবা বসন্তের। চেরিফুলের মৌসুমে ওরা ঘুরে বেড়ায় সি বিচে, নদীতে, জলাশয়ে অথবা হাইওয়ে ধরে ছুটে যায় দূরের পথে কিংবা আকাশপথে বলাকায়। নীলখামে তারা প্রেমপত্র লিখে না। দীর্ঘ ভালোবাসার চেয়ে, প্রতিদিন ছোট ছোট ভালোবাসা নিয়ে জলের সাঁকোতে আনন্দযাপন করে। প্রতিদিন নতুন নতুন গল্প নির্মাণে ওরা সুখি হয়ে ওঠে। এখানে নাতিশীতোষ্ণ হৃদয়ের দীর্ঘ ভালোবাসা পড়ে থাকে পাথর বিষণ্নতায়।
বুলবুলি পাখিটা বুকের ভেতরে
স্বপ্ন কখনো পুরনো বা ফুরিয়ে যায় না; যেনো তার শুরু আছে শেষ নেই! স্বপ্ন নিয়ে বুকের আশা নিয়ে প্রতিদিন সন্ধ্যা নামে এই দেশান্তরী চোখের নির্জনতায়। ধূসর পান্ডুলিপি পেরিয়ে রাফখাতার ক্যানভাসে আলোর গল্প নির্মাণে ছুটে চলা এই দিনগুলি একদিন পৌঁছে যাবে গ্রামের মেঠোপথে, ক্ষেতের আলপথে, কুড়েঘরের আঙ্গিনায় এবং নিজস্ব শহরে নগরে বন্দরে। স্বদেশের লেজদোলানো সেই বুলবুলি পাখিটাই যে সবচেয়ে প্রিয় হয়ে আছে বুকের ভেতরে!
শিউল মনজুর। মেরীল্যান্ড। আমেরিকা।
জন্ম : এক ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৫।
শিউল মনজুর কবিতা লিখেন গল্প লিখেন ছড়া ও প্রবন্ধও লিখেন। তবে কবি বলেই তাকে সম্বোধন করা হয়। তার গ্রন্থ সংখ্যা ১৫টি। তার মধ্যে ১০টি কবিতার বই। বইগুলো হচ্ছে, তিনফর্মা দীর্ঘশ্বাস, আমার প্রার্থনা, দূরের চিত্র কাছের চিত্র, সুরমা গাঙের বাসন্তি নাও, শোনো বীথি কানে কানে বলি, শাদা পাতা শাদা চোখ, পাতা শিশিরের অভিধান, সবুজ পাতার জংশনে, পাখিতীর্থের আন্তঃনগর, মমতার পৃথিবী ও জোনাকিরা। দুটি গল্প বই রয়েছে। একটির নাম তোমার জন্যে মাধবী এবং অন্যটির নাম হচ্ছে, কবি ও প্রেমিকা। ছড়া বই দুটির নাম যথাক্রমে খেলাধুলা হইচই বেশি করে পড় বই এবং ফুলবালিকার রঙিন ছাতা। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে প্রথমে সাংবাদিকতা ও পরে অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। কৈশোর থেকে লেখালেখি শুরু করলেও আশি দশকের শেষদিকে এসে ঢাকার পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। এখন দেশে বিদেশের প্রিণ্ট মিডিয়া, ইলেকট্রিক মিডিয়াসহ বিভিন্ন কাগজে কবিতা গল্প ছড়াসহ নানা বিষয়ে লেখা উপহার দিয়ে বিপুল সংখ্যক পাঠককে মায়ার বাঁধনে জড়িয়ে রেখেছেন। তার কবিতার বাগানে ছড়িয়ে আছে প্রগতি চেতনার গান, দেশাত্মবোধ, মানবিকতা ও নারী পুরুষের চিরন্তন চাওয়া পাওয়ার মৌলিক আকাঙ্খা এবং এক গ্রন্থ থেকে আরেক গ্রন্থে সময়ের পরিবর্তনগুলো সৃষ্টি করেছেন নানা মাত্রায়। তার গল্পের ভেতরেও অগ্রসর পাঠকেরা খুঁজে পান মুক্তিযদ্ধের রঙ, সমকালীন জীবনবোধ ও হৃদয় অনুভুতির অভিজ্ঞান। এই মেলাতেও তার দুটি বই বের হবার কথা রয়েছে। এ ছাড়া শিউল মনজুর তরুণ বয়সে সম্পাদনা করতেন তুমি ও তৃণলতা নামের দুটি কাগজ। এই মাহেন্দ্রক্ষণে কবির সুস্থতা ও দীর্ঘায়ু কামনা করি।