বিডিমেট্রোনিউজ ডেস্ক ॥ ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দীনসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন অভিনেত্রী পরীমনি।
সোমবার (১৪ জুন) দুপুরে সাভার থানায় তিনি এ মামলা করেন।
সাভার থানার পরিদর্শক কাজী মাইনুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘পরীমনি বাদী হয়ে মোট ছয় জনের নামে এ মামলা করেছেন। মামলা নম্বর ৩৮।’
তিনি জানান, পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় এর আগে রাজধানীর মিরপুরের রূপনগর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল। যেহেতু ঘটনাটি ঘটেছে সাভার থানা এলাকায়, তাই রূপনগর থানায় করা লিখিত অভিযোগটি সাভার থানায় এনে মামলায় রূপান্তর করা হয়েছে।
বোট ক্লাবে কী ঘটেছিল
এর আগে ফেসবুকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগ জানানোর পর রোববার (১৩ জুন) রাতে সাংবাদিকদের কাছে তার সঙ্গে হওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন পরীমনি।
রাজধানীতে নিজ বাসায় পরীমনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, গত বুধবার (৯ জুন) রাতে পূর্বপরিচিত অমির সঙ্গে বোট ক্লাবে যান তিনি। সেখানে গিয়ে দেখেন নাসিরুদ্দিনসহ চার-পাঁচজন টেবিলে বসে আছেন। তাদের সঙ্গে পরীমনির পরিচয় করিয়ে দেন অমি। টেবিলে দুটি মদের বোতল ছিল। পরীকে মদপানের প্রস্তাব দিলে তা নাকচ করেন তিনি। পরে তাকে কফি খাইতে দেওয়া হয়। তবে, কফির স্বাদ স্বাভাবিক ছিল না। তাই তিনি কফি পান করেননি। এমনকি পরে সরবরাহ করা কোল্ড ড্রিংকসেও কিছু মেশানো হয়েছিল বলে মনে হয় পরীমনির।
তিনি কোল্ড ড্রিংকসও পান করেননি। এতে ক্ষিপ্ত হন নাসিরুদ্দিন। পরীমনি ও তার সঙ্গে থাকা জেমী ওয়াশরুমে যেতে চাইলে পরীকে যেতে বাধা দেওয়া হয়। এমনকি পরীমনি ও জেমী বাসায় যেতে চাইলেও বাধা দেওয়া হয়। নাসিরুদ্দিন পরীমনিকে লাথি মেরে চেয়ার থেকে ফেলে দেন এবং মুখের মধ্যে মদের বোতল ঢুকিয়ে দেন। এতে তার দাঁতের মধ্যে আঘাত লাগে এবং কিছু মদ গলার মধ্যে চলে যায়। এতে তার বুক জ্বালা করে। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীমনি ও জেমী চিৎকার ও কান্না করলে তাদের ধর্ষণ করার হুমকি দেওয়া হয় এবং গালাগালি করা হয়।
ওই রাতেই বনানী থানায় লিখিত অভিযোগ জানাতে গেলে তা গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন পরীমনি।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে পরীমনি
রোববার (১৩ জুন) রাতে পরীমনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাসেও এই অভিযোগ করেন।
বাঁচতে চেয়ে প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি খোলা চিঠি লিখেন পরীমনি। তাতে এই অভিনেত্রী লিখেন, ‘বরাবর, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমি পরীমনি। এই দেশের একজন বাধ্যগত নাগরিক। আমার পেশা চলচ্চিত্র। আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই।’
তবে কে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করেছে তার নাম উল্লেখ করেননি পরীমনি। তবে আইনি পদক্ষেপে নিতে গেলে কেউ তাকে সহযোগিতা করেননি বলেও জানান তিনি। বিষয়টি উল্লেখ করে পরীমনি লিখেন, ‘এই বিচার কই চাইব আমি? কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার? আমি খুঁজে পাইনি গত চার দিন ধরে। থানা থেকে শুরু করে আমি কাউকে পাই না মা। যাদেরকে পেয়েছি সবাই শুধু ঘটনার বিস্তারিত জেনে, দেখছি বলে চুপ হয়ে যায়!’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করে পরীমনি লিখেন, ‘আমি মেয়ে, আমি নায়িকা, তার আগে আমি মানুষ। আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সাথে যা হয়েছে তা যদি আমি কেবল মেয়ে বলে, লোকে কী বলবে এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো (যাদের অনেক নাম এক্ষুণি মনে পড়ে গেল) তাদের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারোর কি করবার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো চুপ কি করে থাকতে পারি মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
বাঁচার আকুতি জানিয়ে পরীমনি লিখেন, ‘আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এতদিনে কখনো আমার এক মুহূর্ত মাকে খুব দরকার এখন, মনে হয়নি এটা। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার মা। মা আমি বাচঁতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও মা।’