কবি নির্মলেন্দু গুণের সাতাত্তরে পা

সাজেদুর আবেদীন শান্ত

কবি নির্মলেন্দু গুণের ৭৭তম জন্মদিন আজ। পুরো নাম নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণ চৌধুরী। চিত্রশিল্পী হিসেবেও অন্য একটি পরিচয় রয়েছে তার। কবিতার পাশাপাশি তিনি গদ্য ও ভ্রমণ কাহিনীও লিখে থাকেন।

১৯৪৫ সালের ২১ জুন তিনি নেত্রকোণার বারহাট্টায় জন্মগ্রহণ করেন। তার সুখেন্দুপ্রকাশ গুণ এবং মা বীণাপাণি।

নির্মলেন্দু গুণ শিক্ষার শুরুতে বারহাট্টার করোনেশন কৃষ্ণপ্রসাদ ইন্সটিটিউটে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে দুই বিষয়ে লেটারসহ প্রথম বিভাগে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৬৪ সালে আইএসসি পাস করেন ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে। ঢাকা বোর্ডের ১১৯ জন প্রথম বিভাগ অর্জনকারীর মাঝে তিনিও ছিলেন একজন। নির্মলেন্দু গুণের বাবা চাইতেন, ছেলে ডাক্তারি পড়ুক। কিন্তু তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে সুযোগ পেলেও ভর্তি হতে পারেননি।

মেট্রিক পরীক্ষার আগেই নেত্রকোণা থেকে প্রকাশিত ‘উত্তর আকাশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয় নির্মলেন্দু প্রকাশ গুণের প্রথম কবিতা ‘নতুন কাণ্ডারী’। তার কবিতায় মূলত নারীপ্রেম, শ্রেণি-সংগ্রাম এবং স্বৈরাচার বিরোধিতা বেশি প্রকাশ পেয়েছে। ১৯৭০ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন কবি। এ গ্রন্থের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে লেখা ‘হুলিয়া’ কবিতাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে এবং পরবর্তীতে এর উপর ভিত্তি করে তানভীর মোকাম্মেল একটি পরীক্ষামূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন। এছাড়াও তার ‘স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি দেশের মাধ্যমিক পর্যায়ের পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত।

নির্মলেন্দু গুণের প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’, ‘কবিতা, অমীমাংসিত রমণী’, ‘দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী’, ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’, ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’, ‘দূর হ দুঃশাসন’, ‘চিরকালের বাঁশি’, ‘দুঃখ করো না, বাঁচো’, ‘আনন্দ উদ্যান’, ‘পঞ্চাশ সহস্র বর্ষ’, ‘প্রিয় নারী হারানো কবিতা’, ‘শিয়রে বাংলাদেশ’, ‘ইয়াহিয়াকাল’, ‘আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি’, ‘বাৎস্যায়ন’, ‘রক্ষা করো ভৈরব’ ইত্যাদি। ‘আপন দলের মানুষ’ শিরোনামে রয়েছে তার একটি গল্পগ্রন্থ। এ ছাড়া লিখেছেন ‘সোনার কুঠার’ নামের একটি ছড়াগ্রন্থ। ‘আমার ছেলেবেলা’, ‘আমার কণ্ঠস্বর’ ও ‘আত্মকথা ৭১’ শিরোনামে রয়েছে তিনটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ।

কবি ১৯৮২ সালে বাংলা একাডেমি, ২০০১ সালে একুশে পদক এবং ২০১৬ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার অর্জন করেন।

জন্মদিনে কবির দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী

Print Friendly, PDF & Email

Related Posts