শাহ মতিন টিপু
কোন দেশেতে তরুলতা/সকল দেশের চাইতে শ্যামল?/কোন দেশেতে চলতে গেলেই/দলতে হয় রে দূর্বা কোমল?/কোথায় ফলে সোনার ফসল,/সোনার কমল ফোটে রে!/সে আমার বাংলাদেশ,/আমাদেরই বাংলা রে!
আবার- কুকুর আসিয়া এমন কামড়/দিল পথিকের পায়/কামড়ের চোটে বিষদাঁত ফুটে/বিষ লেগে গেল তাই। /ঘরে ফিরে এসে রাত্রে বেচারা/বিষম ব্যথায় জাগে,/মেয়েটি তাহার তারি সাথে হায়/জাগে শিয়রের আগে। /বাপেরে সে বলে র্ভৎসনা ছলে/কপালে রাখিয়া হাত,/তুমি কেন বাবা, ছেড়ে দিলে তারে/তোমার কি নাই দাতঁ?/কষ্টে হাসিয়া আর্ত কহিল/“তুই রে হাসালি মোরে,/দাঁত আছে বলে কুকুরের পায়ে/দংশি কেমন করে?”/কুকুরের কাজ কুকুর করেছে/কামড় দিয়েছে পায়,/তা বলে কুকুরে কামড়ানো কিরে/মানুষের শোভা পায়?
আবার- ইলশে গুঁড়ি! ইলশে গুঁড়ি/ইলিশ মাছের ডিম/ইলশে গুঁড়ি ইলশে গুঁড়ি/ দিনের বেলায় হিম/কেয়াফুলে ঘুণ লেগেছে,/ পড়তে পরাগ মিলিয়ে গেছে,/মেঘের সীমায় রোদ হেসেছে/ আলতা-পাটি শিম্/|ইলশে গুঁড়ি হিমের কুঁড়ি,/ রোদ্দুরে রিম ঝিম/হালকা হাওয়ায় মেঘের ছাওয়ায়/ ইলশে গুঁড়ির নাচ,/ ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে/ নাচছে ইলিশ মাছ।
বাংলা কবিতার পাঠকের অতিচেনা এসব কবিতার স্রষ্টা সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষার যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই তাকে ছন্দের যাদুকর নামে আখ্যায়িত করেছিলেন।
এই ছন্দের যাদুকরের শততম প্রয়াণ দিবস আজ। ১৯২২ সালের ২৫ জুন তিনি মাত্র ৪০ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।
বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় কবি ও ছড়াকারের জন্ম ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার নিমতা গ্রামে। বাবা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক।
সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১) পাস করেন। কিন্তু পরে বিএ পরীক্ষায় অকৃতকার্য হন।
সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে সত্যেন্দ্রনাথ মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন।
বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান।
১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। তার স্বল্প সময়ের জীবনে ১২টির উপর কাব্যগ্রন্থ রচনা করেছেন। এরমধ্যে সবিতা (১৯০০), সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), কুহু ও কেকা (১৯১২) বেলা শেষের গান (১৯২৩) উল্লেখযোগ্য।
রাইজিংবিডি.কম