সুরিন্দর সুরাইয়া: গত আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে মাত্র সাত দিনে পাঁচখানা পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস লিখে বাংলা সাহিত্যে সাড়া ফেলে দিয়েছেন কবি ও কথাসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ। সেই পাঁচটি উপন্যাস পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন পাঁচটি দেশ থেকে ইতিমধ্যেই ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশ হতে শুরু করেছে।
কানাডা থেকে প্রকাশিত ‘দেশ দিগন্ত’ পত্রিকায় গত ৩১ আগস্ট থেকে প্রতি সোমবার প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক রিয়্যালিটি উপন্যাস— দশচক্র।
ইতালির পালেরমো থেকে প্রকাশিত ‘আর্লি স্টার’ পত্রিকায় ২ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি মঙ্গলবার বেরোচ্ছে স্বাধীনতার আগের এবং পরের সময়কালকে ধরে সত্যি কাহিনিভিত্তিক ধারাবাহিক রিয়্যালিটি উপন্যাস— নমো।
ভারতের কলকাতা থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক টেকটাচ টক’-এ ৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বুধবার প্রকাশিত হচ্ছে ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস— দেবমাল্য।
জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা এবং বাংলাদেশ— এই পাঁচটি দেশ থেকে একযোগে প্রকাশিত ‘শুদ্ধস্বর’ পত্রিকায় ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি বৃহস্পতিবার বেরোচ্ছে ধারাবাহিক সামাজিক উপন্যাস— পাতাদের ঘরবাড়ি।
এ ছাড়াও নরওয়ে থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলা পত্রিকা ‘সাময়িকী’তে গত ৩ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে কল্পবিজ্ঞানভিত্তিক ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাস— মহাশূন্যে জুরান। এই ধারাবাহিকটি প্রকাশিত হচ্ছে একদিন অন্তর।
মাত্র সাত দিনে লেখা পাঁচটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস একই সঙ্গে পৃথিবীর পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে ধারাবাহিক হিসেবে প্রকাশ হওয়াটা বাংলা সাহিত্যে নিঃসন্দেহে একটি বিরল ঘটনা।
শুধু এটাই নয়, এর আগেও বিশ্ব রেকর্ড করেছেন একাধারে কবি, ছড়াকার, নাট্যকার, গল্পকার, গীতিকার, চিত্রনাট্যকার, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক সিদ্ধার্থ সিংহ।
এর আগে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি বই প্রকাশের রেকর্ড ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের। একবার কলকাতা বইমেলায় তাঁর নতুন এবং পুনর্মুদ্রণ মিলিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল মোট ২৩টি বই। সেখানে সিদ্ধার্থ সিংহের একটি বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল এক্কেবারে নতুন ৩২টি বই। সেটা দেখে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বলেছিলেন, তুমি আমাকে উলটে দিলে!
দু’পার বাংলা মিলিয়ে ইতিমধ্যেই তাঁর প্রকাশিত হয়েছে দুশো পঞ্চান্নটি বই, সম্পাদনা করেছেন পাঁচশোর ওপর বাণিজ্য সফল সংকলন, যৌথ ভাবে সম্পাদনা করেছেন লীলা মজুমদার, রমাপদ চৌধুরী, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবতী, শংকর, মহাশ্বেতা দেবী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়, সুচিত্রা ভট্টাচার্য, নবনীতা দেবসেন, রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো যশস্বীদের সঙ্গে।
বাংলা সাহিত্যে ‘রতিছন্দ’ নামে এক নতুন ছন্দের প্রবর্তন করেছেন এবং ২০২০-র জানুয়ারিতে ‘সাহিত্য সম্রাট’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছেন। ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের ১ তারিখ থেকে ৩১ তারিখ পর্যন্ত মোট ৩১ দিনে ২৫১টি পত্রপত্রিকায় কবিতা, গল্প, নাটক, প্রবন্ধ, উপন্যাস এবং বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকার রবিবারের পাতায় প্রচ্ছদকাহিনি মিলিয়ে মোট ৩১১টি লেখা প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নস্যাৎ হয়ে গিয়েছিল তার ঠিক দু’মাস আগে তাঁর নিজেরই গড়া— এক মাসে ১৬৮টি লেখা প্রকাশের বিশ্বরেকর্ড।
কোন কাগজে কী লিখেছেন তার তালিকাও তিনি প্রকাশ করেছিলেন তাঁর ফেসবুক ওয়ালে, পেজে এবং ব্লগে।
কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন, শুকতারা, সন্দেশ, গণশক্তি, আজকাল, মাসিক কৃত্তিবাস, গৃহশোভা, বেহালা বড়িষা সংবাদ, বিবেক ভাষা, মানভূম সংবাদ, বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘খোলা কাগজ’-সহ বিভিন্ন মুদ্রিত পত্র-পত্রিকাকে।
কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন স্টোরি মিরর, বাংলা প্রতিলিপি ডট কম, খাসখবর, সেন্টুর নেটওয়ার্ক, সৃজন সাহিত্য প্রয়াস, বাংলা সাহিত্য, কালিমাটি, সাহিত্যকাল, দৈনিক টেকটাচ টক, দৈনিক বজ্রকণ্ঠ, মল্ল সাহিত্য ই-পত্রিকা, স্টোরি এন্ড আর্টিকেল, এক ফালি চাঁদ, আনন্দকানন, জলাভূমি, নিকোটিন, পরবাস, এবং সইকথা, আলাপী মন, খাসখবর-এর মতো ওয়েব ম্যাগাজিনগুলোকেও।
২০১২ সালে ‘বঙ্গ শিরোমণি’ সম্মানে ভূষিত সিদ্ধার্থ সিংহের জন্ম কলকাতায়। ১৯৬৪ সালে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময়ই তাঁর প্রথম কবিতা ছাপা হয় ‘দেশ’ পত্রিকায়। প্রথম ছড়া ‘শুকতারা’য়। প্রথম গদ্য ‘আনন্দবাজার’-এ। প্রথম গল্প ‘সানন্দা’য়। যা নিয়ে রাজনৈতিক মহল তোলপাড় হয়। মামলা হয় পাঁচ কোটি টাকার। পরে এই গল্প নিয়ে নিয়মিত মঞ্চস্থ হতে থাকে নাটক।
ছোটদের জন্য যেমন মৌচাক, শিশুমেলা, সন্দেশ, শুকতারা, আনন্দমেলা, কিশোর ভারতী, চিরসবুজ লেখা, ঝালাপালা, রঙবেরং, শিশুমহল ছাড়াও বর্তমান, গণশক্তি, রবিবাসরীয় আনন্দমেলা-সহ সমস্ত দৈনিক পত্রিকার ছোটদের পাতায় লেখেন, তেমনি বড়দের জন্য লেখেন কবিতা, গল্প, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ এবং মুক্তগদ্য। লেখেন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রকাশিত পত্রপত্রিকায়।
তাঁর বেশির ভাগ বইই অনুদিত হয়েছে বিভিন্ন ভাষায়। বেস্ট সেলারেও উঠেছে সে সব। ষোলোটি ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন এবং লিখতেও পারেন।
এই মুহূর্তে সম্পাদনা করছেন ‘বেঙ্গল ওয়াচ’-এর সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘সাহিত্যের পাতা’। যেটি প্রকাশিত হয় প্রতি রবিবার। পাশাপাশি কলকাতা সম্পাদক হিসেবে কাজ করছেন আমেরিকার ‘উড়ালপুল’ পত্রিকায়। সামলাচ্ছেন বিশ্ববঙ্গ টিভির সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদনার কাজ।
ভারত, বাংলাদেশ এবং নরওয়ে থেকে প্রকাশিত একমাত্র বাংলা পত্রিকা ‘সাময়িকী’-সহ মোট চারটি মুদ্রিত এবং ওয়েবজিনে প্রত্যেক দিন লেখেন একটি করে দৈনিক কলাম। নিবন্ধ লেখেন দৈনিক যুগশঙ্খ পত্রিকায় প্রায় প্রতি রবিবারই।