‘যে জলে আগুন জ্বলে’র কবি’র ৭৩-এ পা

শাহ মতিন টিপু

 

আজ ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র কবি হেলাল হাফিজের জন্মদিন। কবিতাই তার বড় পরিচয়। তার কাব্যের শিরোনামের মতো কবিতার অনেক শব্দমালাতেও রয়েছে আগুনের উত্তাপ। ‘নিউট্রন বোমা বোঝ/মানুষ বোঝ না’- এটিও তার কবিতার লাইন।

আবার মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত- ‘এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়’- এই চরণ দু’টির জনক তিনি।

এই জীবন্ত কিংবদন্তির জন্ম ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায়। বাবা খোরশেদ আলী তালুকদার ছিলেন শিক্ষক। মা কোকিলা বেগম। মাত্র তিন বছর বয়সে মা হারানো ছেলেটির মন একসময় কবিতার আঁতুড় ঘর। যেখান থেকে সৃষ্টি হয় কালজয়ী সব কবিতার লাইন। ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে ছিলো তার। কিন্তু ডাক্তার হলে পড়াশোনার চাপে আর কবিতা লিখতে পারবেন না বলে ডাক্তারিতে ভর্তি হননি। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে।

৭৩-এ পা রেখেছেন, তিনি এখন বয়সের ভারে নুব্জ্য। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সদস্য এই কবিকে আগে নিয়মিত ক্লাবে দেখতে পাওয়া গেলেও এখন আর দেখা যায়না।

‘যে জলে আগুন জ্বলে’ হেলাল হাফিজের সেরা সৃষ্টি। জানা যায়, ১৭ বছর কবিতার লেখার পর ১৯৮৬ সালে এই বইটি তিনি প্রকাশ করেন। বইয়ের প্রায় সবগুলো কবিতাই তিনি লিখেছেন ঢাকা প্রেস ক্লাব লাইব্রেরিতে বসে। লেখার ব্যাপারে তিনি খুবই খুঁতখুঁতে। প্রায় তিনশ’ কবিতা থেকে মাত্র ৫৬টি কবিতা তিনি বাছাই করেন ‘যে জলে আগুন জ্বলে’র জন্য।

এরপর বইটির ৩৩টিরও বেশি সংস্করণ হয়েছে। ২৬ বছর পর ২০১২ সালে আসে তার দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ কবিতা একাত্তর।

হেলাল হাফিজ আজীবন কবিতাই লিখে গেছেন। প্রেমে পড়েছেন অসংখ্য নারীর। তার কবিতায় ব্যবহার করা নাম হেলেন, হিরণবালা, সাবিতা মিস্ট্রেস সবই বাস্তবের রমণী। তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে তিনি লিখেছেন, “ভালোবেসেই নাম দিয়েছি ‘তনা’/মন না দিলে ছোবল দিও তুলে বিষের ফণা।”

আসলে তার কবিতায় লাইনে লাইনেই ছড়িয়ে আগুনের স্ফুলিঙ্গ। যেমন-

‘আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।/অলৌকিক কিছু নয়/ নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি/তোমার স্পর্শেই আমার উদ্ধার।’

আবার ফেরিওয়ালা কবিতায়,

‘কষ্ট নেবে কষ্ট/হরেক রকম কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট! /লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট/পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট/আলোর মাঝে কালোর কষ্ট/মালটি-কালার কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট।/ঘরের কষ্ট পরের কষ্ট পাখি এবং পাতার কষ্ট/দাড়ির কষ্ট/চোখের বুকের নখের কষ্ট/একটি মানুষ খুব নীরবে নষ্ট হবার কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট।‘

আবার-

‘কে আছেন? / দয়া করে আকাশকে একটু বলেন-/সে সামান্য উপরে উঠুক/ আমি দাঁড়াতে পারছি না।’

আবার-

‘তুমি আমার নিঃসঙ্গতার সতীন হয়েছো! / জলের আগুনে পুড়ে হয়েছি কমল,/কী দিয়ে মুছবে বলো আগুনের জল।’

২০১৩ সালে হেলাল হাফিজকে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়।

 

Print Friendly

Related Posts