সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিডনি কেনা বেচার সংঘবদ্ধ চক্রের প্রধান হোতাসহ পাঁচজনকে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। আটককৃতরা ফেসবুক পেজের মাধ্যমে মানবদেহের কিডনিসহ নানাবিধ অঙ্গের অবৈধ ট্রান্সপ্লান্টেশনের সঙ্গে জড়িত। এসময় কিডনি দাতাদের চারটি পাসপোর্ট, ভিসা সম্পর্কিত বেশকিছু কাগজপত্র, পাঁচটি মোবাইল ও দেশি বিদেশি মুদ্রা জব্দ করা হয়।
সোমবার মধ্যরাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত র্যাব-২, ৫ ও সদর দপ্তর যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে জয়পুরহাট ও রাজধানীর নর্দা থেকে তাদের আটক করা হয়। আটককৃতরা হলেন- হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের মো. ফুরুক মিয়ার ছেলে চক্রের হোতা মো. শাহরিয়ার ইমরান আহম্মেদ, কুমিল্লার মনোহরগঞ্জের মো. আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. মেহেদী হাসান, চাঁদপুর শাহরাস্তির মো. আমিনুল হকের ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম, জয়পুরহাটের বুহুতি গ্রামের মৃত ইসাহাক আলীর ছেলে মো. আব্দুল মান্নান ও কালাই’র দুধাইল নয়াপাড়ার মো. তমিজ মন্ডল ভুট্টুর ছেলে মো. তাজুল ইসলাম।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই চক্রে ১৫-২০ জন সদস্য তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করে। প্রথম দল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিডনি প্রয়োজন এমন বিত্তশালীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। দ্বিতীয় দল প্রথম দলের চাহিদা অনুযায়ী দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রলোভন দেখিয়ে গরিব ও অভাবী মানুষ যোগার করে ঢাকায় নিয়ে আসে। তৃতীয় দল ডোনারদের ল্যাব পরীক্ষা করিয়ে কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে ভারত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এই চক্রের সঙ্গে ভারতের একটি চক্র পারস্পরিক যোগসাজশে ডোনারকে এয়ারপোর্ট অথবা স্থলবন্দরে রিসিভ করে। পরে তারা কিডনি নেওয়া এবং ডোনারদের দেশে ফেরত পাঠানোর কাজ করে।
আটককৃতরা কিডনি কেনাবেচা করে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে বলে স্বীকার করেছে। প্রতিটি কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য তারা রোগীদের কাছ থেকে ১৫ হতে ২০ লাখ টাকা নিত। ডোনারকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা দিবে আশ্বস্ত করে অগ্রিম দুই লাখ টাকা দিত। কিডনি নেওয়া হয়ে গেলে প্রতিশ্রুত অর্থ না দিয়ে নানাবিধ ভয়ভীতি দেখাত। বাকি টাকা তারা ভাগ-ভাটোয়ারা করে নিত।
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ইমরান ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ কিডনি ও লিভার পেশেন্ট চিকিৎসা সেবা’ এবং ‘কিডনি লিভার চিকিৎসা সেবা’ নামে দুটি পেজের এডমিন। মান্নান ডোনারদের রাজি করায়। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইনে ৬ টির বেশি মামলা আছে। তাজুল মান্নানের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সাইফুল ও মেহেদী ডোনারদের ভারতে পাঠানোর জন্য কাগজপত্র তৈরি করেন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।