রাজনীতি ll আহসান ওয়াহিদ এর গল্প

মোবাইলের রিং টোন বাজতে বাজতে শেষ হয়েছে। একবার নয়, দুই দুইবার। সাত সকালে যে-ই ফোন করুক, কল রিসিভ করার কোন সুযোগ থাকে না মাহির। এমনিতেই সময়মতো অফিসে যাবার একটা তাড়া থাকে; এর মধ্যে বাথরুম সারো, গোসল করো, নাস্তা খাও। এত্তোসব ঝামেলার মাঝে ফোন ধরার সময় কই? আবার অনেক উজবুকেরও অপ্রয়োজনীয় কল আসে। আপনি কে বলছেন, এটা কোন জায়গা- ইত্যাদি সব উদ্ভট কথা জানতে চায়। প্রথম দিকে দুয়েকদিন অপরিচিত নাম্বারের কল রিসিভ করে মেজাজ খারাপ হয়েছিল। এরপর থেকে সকালে অফিসে যাবার সময় কল আসলে মোবাইলের দিকে ফিরেও তাকায় না মাহি। তবে গাড়িতে বসে কে কল দিলো চেক করে শেষে প্রয়োজন মনে করলে ব্যাক করে। কিন্তু আজ আর সেই সুযোগ পায় না। গাড়িতে উঠে বসতে না বসতেই কলটি আবার আসে। স্ক্রিনে উঠে আছে বন্ধু মুতার নাম। মুতা মানে মুতালিব। মাহির পুরোনো ঘনিষ্ট বন্ধু। তবে যোগাযোগ নেই অনেকদিন। চট্টগ্রাম না কোথায় যেন কাস্টমসের অডিট ডিপার্টমেন্টে চাকরি করে। বনশ্রীতে একটা একতলা রেডিমেড বাড়ি কিনেছে। কেনার সময় সহযোগিতা করেছিল মাহি।

কিরে, ফোন ধরিস্ না ক্যান? বড় অফিসার হয়ে গেছস্ নাকি?
মুতালিবের খোঁচামারা কথায় কান দেয় না মাহি। জিজ্ঞেস করে, কেমন আছিস দোস্ত?
আছি ভালো। তুই কেমন?
ভালো।
আমি পাঁচ দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি। তোর সঙ্গে একটা জরুরি আলাপ ছিল। রাতে বাসায় আসতে চাই, সময় দিতে পারবি?
মাহি বলল, অবশ্যই। তুই আসার সময় একটা কল দিস্। আমার অফিস থেকে ফিরতে অনেক সময় দেরি হয়।
মুতালিবের জরুরি আলাপটি এরকম-

বাড়িটি একটি হাউজিং প্রোপার্টির প্লট। প্লটটির পেছনে একটি বিরাট জনবহুল এলাকা। এলাকার লোকজন প্রজেক্টের ভেতর দিয়ে চলাচলের জন্য মুতালিবের কাছে দুই ফুট জায়গা ছেড়ে দেয়ার অনুরোধ করেছিল। দুই ফুট ছেড়ে দিলে আট ফুট প্রশস্তের একটি গলি দিয়ে লোকজনের চলাচলে সুবিধা হয়। তখন এলাকার মুরুব্বীদের অনুরোধে মুতালিব দুই ফুট ছেড়ে দিয়ে দেয়াল নির্মাণ করে। এটি তিন বছর আগের কথা। মাহিও জানে। কিন্তু এখন আবার নতুন করে সমস্যা দেখা দিয়েছে, আরো দুই ফুট ছাড়তে হবে। এবার আর এলাকার মুরুব্বীরা আসেনি। মুতালিবের প্লটের ঠিক পেছনেই বিরাট একটা জায়গা কিনেছে কোন এক হাউজিং কোম্পানি। মাল্টিস্টেরিড বিল্ডিং বানাবে। রাস্তা প্রশস্ত না হলে ফ্যাট বিক্রি হবে না। সুতরাং কমপে বারো ফুটের রাস্তা তাদের চাই। কিন্তু তারা সামনে নেই, আছে এ ঘটনার নেপথ্যে। সরকার দলীয় চ্যাংড়া ছেলেপেলেরা এটা নিয়ে শোরগোল করছে। দু’তিনবার টেলিফোনে হুমকি পর্যন্ত দিয়েছে। এলাকার লোকজনের অসুবিধা হচ্ছে। একটা এ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে পারে না, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারে না। সুতরাং দেয়াল ভেঙে দিয়ে হলেও রাস্তা বড় করতে হবে।

মুতালিব আপে করে বলল, দ্যাখ তো দোস্ত, কি একটা সমস্যায় পড়লাম! বাড়িটা কেনার সময় একবার ছাড়লাম, এখন আবার
মাহি বলল, ওয়াল ভাঙা কি এত সহজ? মামলা মোকদ্দমা হবে না?
কিন্তু মামলা কার নামে করব? তাছাড়া আমি এখানে থাকিনা।
এক কাজ কর, তুই ঐ এলাকার কমিশনারের কাছে যা।
মুতালিব বলল, গিয়েছিনা মনে করছস্? আমারতো মনে হয় সেও এটার সাথে জড়িত। বলেছে এলাকার জনগণের ডিমান্ড। আমাকে বলেছে ক্যাচাল না করে দেয়ালটা ভেঙে দেয়ার জন্য।
মাহি অবাক হয়ে বলল, বলিস্ কি!
তো কি! তোর কাছে এজন্যেই তো এসেছি, এখন কি করা যায়?

মাহি আঁতিপাতি করে কি করা যায় এর একটা উপায় বের করার চেষ্টা করে। এলাকার এসব চেলাচামুণ্ডাদের শায়েস্তা করতে হলে পুলিশ কিংবা আর্মির বড় কর্তা কিংবা মতাধর বড় রাজনৈতিক লিডারের প্রয়োজন। মাহি কিংবা মুতালিব যদি এধরণের একজন হতো তাহলে কোনো কথা ছিলো না। অথবা মাহি কিংবা মুতালিবের ঘনিষ্ট আত্মীয়দের মধ্যে এমন কেউ থাকতো তাহলেও হতো। যেমন কুকুর তেমন মুগুর মারতে পারলে কুকুরগুলো ধারে কাছেও ঘেঁষতো না! কিন্তু কী করা যায়, চিন্তিত মাহি পরদিন সন্ধ্যার পর এলাকার ওষুধের দোকানের মালিক রহমানের সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে কথাটি পাড়ে। রহমান লোকটা বেশ আলাপি। বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়, মাহিদের এলাকায়। ব্যাংকের বড় অফিসার হিসেবে মাহিকে যথেষ্ট মান্য করে। সময় পেলে এই রহমানের দোকানেই মাঝে মধ্যে আড্ডা দেয় মাহি।

রহমান বলল, মাহি ভাই, আপনি একদমই চিন্তা করবেন না; বলছেন যখন ব্যবস্থা একটা করাই লাগবো। আপনের বন্ধুর সমস্যা মানে আমাদেরও সমস্যা। আপনে আলম ভাইরে চিনেন না?

কোন আলম ভাই? মাহি চিনতে পারে না।
আরে, সলিমাবাদের আলম ভাই। কেন, উনি তো গতবার এমপি ইলেকশনের জন্য দলের নমিনেশন চেয়েছিলেন। বড় নেতা।

সলিমাবাদের আলম ভাইয়ের নাম মাহি জীবনেও শোনেনি। ধন্দে পড়ে সে। আবার ভাবে গ্রামে তার যাতায়াত খুবই কম। বাঞ্ছারামপুর স্কুল থেকে এসএসসি পাশের পর বাবা-মা’র সঙ্গে সেই যে ঢাকা এসেছে, তারপর যাওয়া হতো কালেভদ্রে। দুই-তিন বছরে একবার, এমন। বাবা মারা যাওয়ার পর এখনতো বলতে গেলে প্রায় যাওয়াই হয় না। ফলে আলম ভাই নামের কেউ নেই এটা সে নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তাছাড়া রহমান যখন বলছে থাকতেও পারে, হয়তো তার জানা নেই। সুতরাং মাহি আলম ভাইকে চেনে, আবার চেনেও না- এ দুয়ের মাঝখানে থেকে আস্তে করে বলল, আচ্ছা।

রহমান বলল, উনার অনেক মতা, আমার সাথে তার ভালো সম্পর্ক। এইতো সেদিন তার মা’র মৃত্যু বার্ষিকীতে গুলশানের বাড়িতে গিয়েছিলাম মিলাদে। খুবই ভালো মানুষ, এলাকার লোকজনের জন্য তার অনেক টান। চলেন, আপনেরে নিয়া যাই তার অফিসে। কি করে তখন দেখবেন।
আলম ভাইয়ের অফিস মতিঝিলে। অফিস আর লোকজনের আনাগোনায় বোঝা যায় তিনি দলের ডাকসাইটে নেতা, রহমানের সাথে সম্পর্কও ভালো। তাকে ফ্রি পাওয়াই মুশকিল। অনেকণ বাইরে অপোর পর রহমান মাহিকে পরিচয় করিয়ে দিতেই তাকে সসম্মানে চেয়ারে বসতে দিয়ে কফির অর্ডার করেন। তারপর সমস্যার কথা জানতে গিয়ে বাড়ির লোকেশন কোথায়, এখন কমিশনার কে, কারা এসব ঝামেলার যোগান দিচ্ছে, ইত্যাদি সব বিশ্লেষণ করে লাউড স্পিকারে ফোনে কথা বলেন একজনের সঙ্গে।

আলম ভাই হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে, ভাই স্লামালিকুম, বলেন।
শাহিন, তুমি কি তোমার এলাকার কোন খবর রাখো না?
ক্যান, কী হইছে ভাই?
তোমার ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা আমার নির্বাচনি এলাকার ভাই, তার বাড়ির দেয়াল কারা নাকি ভাইঙ্গা রাস্তা বড় করতে চাইতেছে।
ভাই, আমি তো ব্যাপারটা জানি না। উনাকে আমার সঙ্গে দেখা করতে বলেন।
ঠিক আছে, তোমার সঙ্গে দেখা করবে। উনার যাতে কোন সমস্যা না হয়, তুমি বিষয়টা দেখ।
বলেই মোবাইলটা টেবিলে রেখে আলম ভাই মাহিকে বললেন, আপনাদের ওয়ার্ড কমিশনার শাহিনের সাথে আজই দেখা করেন। আশা করি যা করার সে করবে।

মুতালিবের বাড়িটা শাহিন কমিশনারের ওয়ার্ডের একেবারে শেষ প্রান্তে। এর ঠিক পেছন থেকেই শুরু হয়েছে মনসুর কমিশনারের ওয়ার্ড। তার সঙ্গেই কথা বলেছিলো মুতালিব। রহমান বলল, আলম ভাই ঠিক জায়গায়ই নক্ করেছেন। আমি বলছি না এলাকার মানুষের জন্য উনার অনেক দরদ। মাহি ভাই দেখবেন, এখন এর একটা বিহিত হবে।

আলম ভাই শাহিন কমিশনারের সাথে দেখা করার কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু দেখা করার ইচ্ছে হচ্ছে না মাহির। তবুও মুতালিবের কারণে যেতে হয়। একেবারেই জুনিয়র একটি ছেলে। সরকার দলীয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। রেপুটেশন ভালো ছিল না; তথাপিও এলাকার ছেলে, ভোট দিতে হয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার কিছুদিন পরই তাকে নতুন রূপে দেখতে পায় এলাকার লোকজন। আলাদীনের চেরাগের মতো দৃশ্যমান সম্পদের পাহাড় দেখে এলাকাবাসীর কেউ কেউ নিরবে কানাঘুষা করে। অনেকে আবার বাহবা দেয়, রাজনীতিতে টিকে থাকতে হলে এসবের কিছু কিছু করতেই হয়। দিন বদলে গেছে, শুকনো কথায় এখন আর চিড়ে ভিজে না। এখনকার দিনে সৎ কিংবা মহৎ এসবের দাম নেই; শক্তিই হলো আসল, উৎস কোন বিষয় নয়। তবে মাহিদের মতো আমজনতার এসব নিয়ে ভাবার কোন অবকাশ নেই। এরজন্য সরকারের অনেক এজেন্সি আছে, দেখভালের দায়িত্ব তাদের।

শাহিন কমিশনারের অফিস-কাম-বাসা কাছেই, হেঁটে গেলে মাহিদের বাসা থেকে পাঁচ মিনিটের পথ। মাহি কখনোই যায়নি কমিশনারের অফিসে। যায়নি, মানে যাওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে এলাকার কমিশনার সরকারের স্থানীয় প্রতিনিধি, আমজনতার কাছে এর গুরুত্ব অন্যরকম।
রাস্তার প্রায় উপরেই কমিশনারের অফিস। ভেতরে কি একটা সরকারি অনুদানের অর্থ ডিস্ট্রিবিউশনের লিস্ট তৈরির কাজ হচ্ছে। চ্যাংড়া পোলাপানে ঠাসা। এদের পাশ কাটিয়ে অতি সন্তর্পনে মাহি আর মুতালিব কমিশনারের চেম্বারে ঢোকে।

আরে ভাই আপনে? মাহিকে দেখেই বলে শাহিন।
একটা কাজ ছিল, তুমি বোধ হয় ব্যস্ত। ঠিক আছে, তাহলে কাল আসিৃ
না না, অসুবিধা নাই। এই তোরা এখন সর; ভাইদের বসতে দে। টেবিলের সামনে বসে থাকা ছেলেদের চেয়ার ছাড়ার হুকুম করে শাহিন আবার মাহিকে বলল, তা ভাই, আপনাকেতো দেখিইনা! সেই কবে ভোটের সময় একবার বাসায় গিয়েছিলাম, তখন দেখা হয়েছিল।
মাহি বলল, হ্যাঁ। সময় পাই না। তাছাড়া প্রয়োজন হয়নি বলে আসিনি।
ঠিক আছে, এখন কি জন্য এসেছেন?

মাহি পূর্বাপর ঘটনার সমস্ত বিবরণ দেয়ার পর শাহিন বলল, আলম ভাই আমাকে ফোন করেছিলেন। যাক, আমার এরিয়া, মুনসুর আঙ্কেল এখানে মাথা ঢোকাচ্ছে কেন? রাখেন, দেখছি আমিৃবলেই মোবাইল হাতে নিয়ে কল দেয়।

মুনসুর কমিশনারের সাথে বেশ জোর গলায়ই কথা বলে শাহিন। কিন্তু কথপোকথনে যা বোঝা যায়, মুনসুর কমিশনার শাহিনের কথা মানছেনই না। তার এলাকা হলেও জনগণের সুবিধার জন্য রাস্তা মুতালিবকে ছাড়তেই হবে। কিন্তু মুতালিব আবার শাহিন কমিশনারের কাছে গিয়েছে, এটা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেন মুনসুর কমিশনার। এতদিন ভেবেছিল আলোচনা করে বুঝিয়ে সুঝিয়ে জায়গাটা ছাড় করাবে, এখন মুতালিবের সাথে আর কোন কথাই বলবে না। কারো কোনো কথাও শুনবে না। ওয়াল ভাঙবে আগে, তারপর অন্য কথা! শেষমেষ শাহিন বলল, আঙ্কেল, এখনই ওয়াল ভাঙবেন না। আমি দেখা করব আপনার সঙ্গে, তারপর দুইজনে মিলে সিদ্ধান্ত যা নেয়ার নেব।

এবার শাহিন ফোন রেখে মাহিকে বলল, ভাই, আপাতত ওয়াল ভাঙা বন্ধ। আমরা বসব, তারপর দেখা যাক।
মুতালিব উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, কিন্তু ওরা তো কোন কথাই শুনছে না। যদি দলবল নিয়ে এসে ভেঙে ফেলে আবার?

এবার শাহিন কমিশনার একটু রাগত স্বরে বলে উঠে, আরে ভাই, আমিতো বলে দিয়েছি, দেখেন না কি করে! আর যদি ভাঙ্গতে আসে আমাকে ফোন করবেন, আমি নিজে যাব।

এরপর ভেতরে ভেতরে কি হচ্ছে মাহি কিংবা মুতালিব তার কিছুই জানে না। তারা অপো করছে শাহিন কমিশনার কবে, কখন মুনসুর কমিশনারের সঙ্গে দেখা করে। কিন্তু আদতে ঢাকা শহরের এই দুই কমিশনার কি একে অন্যের সঙ্গে তাদের মতো তুচ্ছ একটি ব্যাপার নিয়ে কখনো দেখা করবে, না দেখা করার মতো সময় তাদের আছে? অবশ্য দেখা করতে পারে, আবার নাও করতে পারে। হয়তো ফোনে ফোনেও তারা আলাপ সেরে নিতে পারে। তারা হলেন নেতা মানুষ, মুতালিবদের মতো ভুক্তভোগীদের কথা চিন্তা করার সময় কি তাদের হিসাবে আছে? অথবা দুই কমিশনারের টেলিফোনিক আলাপের ভেতরে অন্য কোনো রাজনীতি লুকিয়ে আছে কিনা তাই-বা কে জানে?

কিছুটা নির্ভার, আবার কিছুটা উদ্বেগের দোলাচালে আবিষ্ট মুতালিব ছুটি শেষে চট্টগ্রাম ফিরে যায়। এর মধ্যে কোন এক সকালে অফিসে গিয়েই সংবাদ পায়, গতরাতে দশ-বারোজন চ্যাংড়া গোছের ছেলেপেলে শাবল আর হামানদিস্তা দিয়ে ধুমধাম করে বাড়ির দেয়াল ভাঙার কাজ সেরে ফেলেছে। বাড়িটি এখন অরক্ষিত অবস্থায় আছে। দুঃসংবাদটি শাহিন কমিশনারকে ফোনে জানানোর চেষ্টা করে মুতালিব। কিন্তু সে সুযোগও পায় না সে। যখনই ফোন করে, কমিশনার সাহেবের মোবাইল থেকে কখনো বন্ধ কিংবা কখনো ব্যস্ত থাকার ম্যাসেজ আসে। #

Print Friendly

Related Posts