নবীনগরে চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ নিহত ২, শোকের ছায়া : গ্রেফতার ১

জ.ই বু্লবুল : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীসহ দুজনকে গুলি করে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের নাটঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে গত শুক্রবার রাতে।

নিহত দুজন হলেন নাটঘর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ছেলে এরশাদুল হক (৩৫) ও তার সহযোগী নান্দুরা গ্রামের সন্তোষ সরকারের ছেলে বাদল সরকার (২৫)। এরশাদুল ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বাবার পরিবর্তে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়ে তিনি এলাকায় জনসংযোগ করছিলেন।

এরশাদুলের বাবা আবুল কাশেম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তার অভিযোগ, ‘অসুস্থতার কারণে আমি এবার নির্বাচন না করার কথা জানিয়েছিলাম। নাটঘর ইউপিতে আমার ছেলেসহ আওয়ামী লীগের দুজন ও বিএনপির দুজনসহ মোট ছয়জনের এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়ার কথা হচ্ছিল। আমার ছেলে গত ১৫-২০ দিন ধরে জনসংযোগ শুরু করেছিল। ছেলে এলাকায় জনপ্রিয় ছিল। এর জন্যই অন্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা তাকে গুলি করে হত্যা করেছে।

গত ২৮ নভেম্বর নবীনগর উপজেলার ২১টির মধ্যে ১৩ ইউপিতে ভোট হয়েছে। বাকি আটটিতে এখনো নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়নি। তবে সম্ভাব্য প্রার্থীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পুলিশ ও পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে এরশাদুল তার সহযোগী বাদল সরকারকে নিয়ে নাটঘর ইউনিয়নের কুড়িঘর বাজারের পাশে ওয়াজ মাহফিলে যান। সেখানে তিনি ভোটের জন্য সবার কাছে দোয়া চান। ফেরার পথে মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন বাদল এবং তার পেছনে এরশাদুল বসা ছিলেন। রাত ১০টার দিকে উপজেলার মহেশ সড়কে রাস্তায় চারটি মোটরসাইকেলে করে আটজনসহ ১৫-১৬ দুর্বৃত্ত তাদের ঘেরাও করে গুলি শুরু করে। বাদল গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই মারা যান। গুরুতর আহত এরশাদুলকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয়রা। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সেখানে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। রাত দেড়টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

নিহত এরশাদুলের স্ত্রী সুমি বেগম বলেন, ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে তিনি সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই দেখি খবর আসছে আমার স্বামীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনায় জড়িত সন্দেহে শনিবার ভোরে উপজেলার কুড়িঘর গ্রাম থেকে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে ঘটনার পরপর উপজেলার নান্দুরা গ্রামে হুমায়ুন কবির ও জামাল মিয়ার বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাতেই হুমায়ুন কবির, জামাল মিয়া ও তাদের পরিবারের লোকজন গা ঢাকা দিয়েছেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রশিদ বলেন, ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে নিহত এরশাদুলের চাচাতো ভাইকে প্রতিপক্ষের লোকজন হত্যা করে। ওই ঘটনায় এরশাদুল বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের পেছনে এটাও কারণ হতে পারে!

ছবি: নিহত এরশাদুল হকের স্ত্রীর আহাজারি, নির্বাক মা।

Print Friendly

Related Posts