শীতে বিপর্যস্ত উত্তরের জনজীবন

রংপুর প্রতিনিধি: ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনজীবন। এ অঞ্চলের ৭০ লাখ দরিদ্র মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে শীতের হানায়। আকাশ ভেঙে যেন ঝরে পড়ছে হিমজড়ানো ঘণকুয়াশা। অচল হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।

গত ডিসেম্বরের মৃদু ও মাঝারি শৈত্য প্রবাহের পর নতুন বছরের চলতি সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলে ফের মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

সরকারি হিসেবে মোট জনসংখ্যার ৪০ভাগ দরিদ্র। পশ্চাদপদ এই অঞ্চলে দারিদ্র পরিস্থিতি আরও কিছুটা ভয়াবহ। এবারের তীব্র এই শীত গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষের জীবনে নেমেছে দুর্বিসহ কষ্ট।

মঙ্গলবার (৪ জানুয়ারি) সকালে রংপুর নগরীর স্টেশন, শাপলা, মডার্ন মোড়, তাজহাট এলাকা, মেডিক্যাল মোড় ঘুরে ছিন্নমূল মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। এদিনে সকাল ৯টা পর্যন্ত রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার (৩ জানুয়ারি) রংপুরে জেলায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গতকালের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কম।

এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় শৈত্য প্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে রংপুর আবহাওয়া অফিস। দুইদিন ধরেই ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ব্যহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। ঠাণ্ডায় নাকাল হয়ে পড়ছে চরাঞ্চলসহ ছিন্নমূলের অসহায় মানুষেরা। শীতের এ তীব্রতা দুই একদিনের মধ্যে আরও বাড়তে পারে।

এদিকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত চেপে বসেছে তিস্তা, ঘাঘট, দুধকুমার, যমুনেশ্বরী ও করতোয়া নদী বেষ্টিত এলাকাগুলোতে। বেলা গড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় ঠাণ্ডা বাতাস। রংপুর অঞ্চলে বেলা দুপুর নাগাদ সূর্যের দেখা মিললেও উষ্ণতা নেই। এতে জনজীবনে দেখা দিয়েছে ছন্দপতন।

নদী তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের এই হানায় প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ধানের বীজতলাতেও।

রংপুর নগরীর স্টেশন এলাকার আর আমিন শেখ বলেন, আজ রাত থেকে এতো পরিমানে কুয়াশা পড়েছে যে হাঁটলেই চোখের পাতা ও মাথার চুল ভিজে যাচ্ছে। সাথে বাতাসটা একদম আমাদেরকে কাবু করে ফেলেছে।

পীরগাছার দেউতি এলাকার কৃষক মনতাজুর রহমান জিল্লাল বলেন, গত দুই দিন থেকে যে পরিমানে শীত পড়ছে তাতে আমাদের কৃষি কাজ অনেকটা ব্যহত হচ্ছে। ধানের বীজতলা ঘনকুয়াশায় হলুদ রঙ ধারণ করে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’

একই এলাকার ইসমাইল হোসেন নামের এক পথচারী বলেন, বাবা হামরা কৃষক মানুষ পেটের দায়ে পরিবারের জন্য শীতের মধ্যে কাজ করতে বের হওয়া লাগে। শীতে যখন জমিনে খালি পা রাখি মনে হয় মরি গেছি। কিন্তু উপায় নাই কাজ করি খাওয়া লাগবে তাই বের হইছি। এবারের শীতে হাত পা খালি টাটায় মনে হয় অবশ হয়ে গেছে।’

এদিকে গত তিন দিনের শীতে রংপুর মেডিকেলে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে চারগুণ।

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. ফখরুল আলম বলেন, শীত বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করেছে শীত জনিত রোগীর সংখ্যা। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন এরা। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। শীতজনিত কারণে গত চার দিনে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে সাড়ে চারশত শিশু।

আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ একেএম কামরুল হাসান জানান, ডিসেম্বরের শেষে একটি শৈত্য প্রবাহের পর গত এক সপ্তাহ তাপমাত্রার কিছুটা উন্নতি হলেও ফের গতকাল থেকে আবহাওয়া কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দিনে ও রাতের তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলে ঘনকুয়াশার সাথে হিমেল হাওয়াসহ শৈত্য প্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে।

 

Print Friendly

Related Posts