দুটি ক্যাচের সঙ্গে একটি রান আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া। সেসব কাজে লাগিয়ে নিউজিল্যান্ডের লিড।
মনে হচ্ছিল, আরও একবার বুঝি এলো দীর্ঘশ্বাসের পালা। কিন্তু এই দিনটি অন্যরকম। এই ম্যাচটি আলাদা। ম্যাচের পর ম্যাচ ধারহীন বোলিংয়ে যাকে নিয়ে ছিল সমালোচনা, সেই ইবাদত হোসেন চৌধুরি জ্বলে উঠলেন আগুনে বোলিংয়ে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন এমন এক জায়গায়, যেখান থেকে জয় খুব নাগালেই!
মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিনের খেলা শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৩০ রানের লিড বাদ দিলে নিউজিল্যান্ডের রান এখন কার্যত ৫ উইকেটে ১৭!
দুটি সহজ সুযোগ দিয়েও বেঁচে যাওয়া রস টেইলর খেলছেন ১০০ বলে ৩৭ রানে। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট সিরিজ খেলতে নামা অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানই বাংলাদেশের সামনে মূল বাধা।
উইকেটে তার সঙ্গী রাচিন রবীন্দ্র, যিনি বেড়ে উঠেছেন টেইলরকে ‘আইডল’ মেনে। নিউ জিল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের শেষ জুটি এটিই।
প্রথম ইনিংসের ১৩০ রানের ব্যবধান যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুচিয়ে দিল কিউইরা, উইকেট আছে তাদের ৮টি। রান এক পর্যায়ে ছিল ২ উআকেটে ১৩৬। ক্রিজে তখন থিতু টেইলর, ম্যাচে দ্বিতীয়বার ফিফটি ছুঁয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন উইল ইয়াং। ওই রানেই দুই ওভার মিলিয়ে ৭ বলের মধ্যে ইয়াংসহ ৩ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় পুরোপুরি ঘুরিয়ে দেন ইবাদত।
চা-বিরতির আগে ৯ ওভারের টানা স্পেলে ২৩ রান দিয়ে তার উইকেট ছিল ১টি। শেষ সেশনে অসাধারণ এক স্পেলে ৭ ওভারে ১৫ রানে নেন ৩ উইকেট।
সব মিলিয়ে ১৭ ওভারে ৩৯ রানে তার শিকার ৪টি। আগের ১০ টেস্টে তার উইকেট ছিল মাত্র ১১টি। ক্যারিয়ারে এই প্রথম পেলেন চার উইকেট। ২০১৩ সালের পর বাংলাদেশের প্রথম পেসার হিসেবে পাঁচ উইকেট নেওয়ার সম্ভাবনাও এখন উজ্জ্বল।
সকালে ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৪৫৮ রানে। এ দিন ২০.২ ওভার খেলে যোগ করতে পারে ৫৭ রান।
ব্যাটিং খুব ভালো না হলেও বোলিংয়ে শুরুটা ভালো করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডকে সহজে রান দেননি বোলাররা। প্রথম ইনিংসে ভালো বোলিং করেও উইকেট না পাওয়া তাসকিনের হাত ধরে মেলে প্রথম সাফল্য।
কেন উইলিয়ামসনের অনুপস্থিতিতে এই সিরিজে কিউইদের অধিনায়ক টম ল্যাথাম ব্যর্থ এবারও। ছেড়ে দিতে পারতেন এমন বাড়তি লাফানো বল আড়াআড়ি ব্যাটে ডিফেন্স করার চেষ্টায় তিনি টেনে আনেন স্টাম্পে।
আরেক ওপেনার ইয়াং ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়ে ছিলেন সাবধানী। রান করার চেয়ে উইকেটে পড়ে থাকার দিকেই ছিল তাদের বেশি মনোযোগ। এক প্রান্তে ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখেন অফ স্পিনার মিরাজ। আরেক প্রান্তে ইবাদতের স্টাম্প তাক করে করা বোলিং পরীক্ষায় ফেলে ব্যাটসম্যানদের। তিনিই কনওয়েকে বিদায় করে ভাঙেন দ্বিতীয় জুটির প্রতিরোধ।
গুড লেংথ বল ডিফন্সে করার চেষ্টায় ঠিক মতো পারেননি কনওয়ে। আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ায়। বাংলাদেশ রিভিউ নিলে দেখা যায়, ব্যাট কানা ছুঁয়ে প্যাডে লেগে আসা ক্যাচ সামনের দিকে ঝাঁপিয়ে মুঠোয় জমান সাদমান ইসলাম। ম্যাচে এটি তার পঞ্চম ক্যাচ, প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন চারটি।
বাংলাদেশের সফল রিভিউ ও সাদমানের দুর্দান্ত ক্যাচের পর তুমুল করতালির মধ্যে ক্রিজে আসেন টেইলর। তাকে বেশ ভোগান ইবাদত।
এর মধ্যেই মিরাজের বলে কনওয়ের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে আসা ক্যাচ গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন। সে সময় ৩১ রানে ছিলেন কিউই ওপেনার।
মিরাজের বলেই ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ দিয়ে ১৭ রানে বেঁচে যান টেইলর। বল সরাসরি নিজের দিকে এলেও মুঠোয় জমাতে পারেননি সাদমান। ২৯ রানে অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় টেইলরকে রান আউট করতে পারেননি ইবাদত।
তিনিই পরে ভাঙেন ১৭৫ বল স্থায়ী ৭৩ রানের জুটি। ভেতরে ঢোকা লেংথ বল পুল করতে চেয়েছিলেন ইয়াং। ব্যাটে খেলতে পারেননি, বল আঘাত হানে অফ স্টাম্পের উপরের দিকে।
নতুন ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলস প্রথম বলে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে বাঁচলেও বিদায় নন পরের বলেই। দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টাম্প এলোমেলো করে দেন ইবাদত।
নিজের পরের ওভারেই তিনি নেন আরেকটি উইকেট। অফ স্টাম্পের অনেকটা বাইরে পড়ে ভেতরে ঢোকা বল ব্যাটে খেলতে পারেননি টম ব্লান্ডেল। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দেওয়ার পর টিকতে পারেননি তিনি রিভিউ নিয়ে।
ইবাদত ও বাংলাদেশ দল তখন টগবগ করে ফুটছে। তবে চ্যালেঞ্জিং বাকি সময়টা নিরাপদে কাটিয়ে দেন টেইলর ও রবীন্দ্র।
শেষ দিনে তাদের অপেক্ষায় আরও বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশের সামনে হাতছানি অভাবনীয় এক জয়ের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ৩২৮
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: (আগের দিন ৪০১/৬) ১৭৬.২ ওভারে ৪৫৮ (ইয়াসির ২৬, মিরাজ ৪৭, তাসকিন ৫, শরিফুল ৭, ইবাদত ০*; সাউদি ৩৮-৪-১১৪-২, বোল্ট ৩৫.২-১১-৮৫-৪, জেমিসন ৩৫-১১-৭৮-১, ওয়্যাগনার ৪০-৯-১০১-৩, রবীন্দ্র ২৮-৪-৬৭-০)