১৬২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শাবির শিক্ষার্থীরা

‘আমরণ অনশনে’ বসার ১৬২ ঘণ্টা পর অনশন ভাঙলেন শাবির আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় অনশনে বসেন তারা৷ বুধবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল ১০টা ২১ মিনিটে হামিদা আব্বাসী নামের এক অনশনরত শিক্ষার্থীকে পানি পান করিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অনশন ভাঙান ড. জাফর ইকবাল।

অনশন শুরুর পর গত ৭ দিনে দফায় দফায় শিক্ষকেরা তাদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেছেন, তবে তারা রাজি হননি।

এর আগে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী ড. ইয়াসমিন হকের অনুরোধে বুধবার ভোর ৫টার দিকে তারা অনশন ভাঙার ব্যাপারে সম্মত হন শিক্ষার্থীরা।

সকাল ১০টার দিকে হাসপাতালে থাকা অনশনকারীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরত অনশনরতদের সাথে একসঙ্গে মিলিত হন। এরপর তারা অনশন ভাঙেন।

এর আগে বুধবার (২৬ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে শাবি ক্যাম্পাসে এসে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থানরতদের সাথে দেখা করেন জাফর ইকবাল। এসময় তিনি ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের কথা শুনেন।

তারা আন্দোলনকারীদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এরপর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কী করেছো। দেশের ৩৪টা ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর বলেছেন যে, এই ইউনিভার্সিটির ভিসি যদি পদত্যাগ করেন তাহলে তারা সবাই পদত্যাগ করবেন। এটা দেখার খুবই শখ আমার।

জাফর ইকবাল বলেন, আমাদের এরকম ভাইস-চ্যান্সেলররা আছেন যাদের আদর্শ এত বেশি যে উনারা অন্যকে সহমর্মিতা দেখিয়ে  নিজেরা পদত্যাগ করবেন। কিন্তু আমার মনে হয় না আমার এ আশা সহজে মিটবে। তোমরা বড় ধরনের নাড়া দিয়েছো। এখন কাউকে কোথাও ভিসি পদে বসানো হলে  তার যোগ্যতা নিয়ে সবাই চুলচেড়া বিশ্লেষণ করবে।

তিনি বলেন, আমি অনেক কিছু জানি। কিন্তু পাবলিকলি বলতে চাই না। কারণ নিজেদের দুর্বলতার কথা বলতে ভালো লাগে না। তোমাদেরকে শুধু এটুকু বলতে চাই,  তোমরা যেটা করেছো তার তুলনা নেই। এই আন্দোলনে  বাংলাদেশের প্রত্যেকটা যুবক ছেলেমেয়ে তোমাদের সাথে আছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করবেন না। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মানবিক সহায়তা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। মানবিক সহায়তা দেওয়া যদি অপরাধ হয় তাহলে আমি বঙ্গবন্ধুর ওপর একটি আর্টিকেল লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। সেই টাকাটা আমি তোমাদের দিলাম। আমাকে অ্যারেস্ট করুক।’

এর আগে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) রাত ৯টার দিকে ঢাকা থেকে ক্যাম্পাসের উদ্দেশে রওনা হন মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী। ভোর ৪টার দিকে তারা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন।

অন্যদিকে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শাবি উপাচার্যের বাসভবনের ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীরা বলেন, ‘আমরা যারা অনশন করছি,  অনেক চেষ্টা করেও অনশন ভাঙাতে পারেনি কেউ। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।’

গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) শাবি উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে চলা আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ২৪ জন অনশনে বসেছিলেন। পরে এ সংখ্যাটি ২৮-এ দাঁড়ায়। অনশনরতদের মধ্যে ২০ জন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বাকিদেরও উপাচার্যের বাসভবনের সামনেই ক্যানোলা দিয়ে লিকুইড স্যালাইন দেয়া হয়। তীব্র শীত ও অসুস্থতা উপেক্ষা করেও তারা অনশন চালিয়ে গেছেন। অবশেষে ১৬২ ঘণ্টা পর তারা অনশন ভাঙলেন।

তবে ‘আমরণ অনশন’- এর ইতি ঘটলেও, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানিয়েছেন মীর রানা।

প্রসঙ্গত, গত  ১৩ জানুয়ারি থেকে শাবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ ও তিন দফা দাবি নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। আবাসিক হলের পানি, সিট, ইন্টারনেট, খাবারসহ বেশ কিছু সমস্যা নিয়ে শিক্ষার্থীরা প্রভোস্টের সঙ্গে আলাপ করতে চাইলেও তিনি অসদাচরণ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

পরে ধারাবাহিক বিক্ষোভ চলাকালে একপর্যায়ে গত রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে মুক্ত করতে পুলিশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উপর রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে এবং এ ঘটনায় প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন। পরে এ আন্দোলন উপাচার্যের পদত্যাগের আন্দোলনে রূপ নেয়। দাবি পূরণ না হওয়ায় বুধবার (১৯ জানুয়ারি) আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে ২৪ জন অনশনে বসেন।

Print Friendly

Related Posts