বরিশালে খাল ও সরকারি জমি দখল করে ৩০টি দোকান ঘর নির্মাণ

খান মাইনউদ্দিন, বরিশাল: ধান নদী খাল এই তিনে বরিশাল। আর এ যেন বর্তমানে অনেকটা কাগজে কলমে লিপিবদ্ধ। একসময়ে বরিশাল নগরীর যে খালগুলো দিয়ে যাত্রী ও পন্যবাহী নৌযান চলাচল করতো তা আজ অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্মে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

বর্তমান সরকার সারাবাংলাদেশে অবৈধ দখল হয়ে যাওয়া নদী ও খাল দখল মুক্ত করছে ব্যায় করছে কোটি কোটি টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল নগরীর মধ্যে বয়ে যাওয়া ২২টি খাল পুনরুদ্ধারের জন্য বরিশাল জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমান বিসিসি মেয়রও এই অবৈধ খাল দখল মুক্ত করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দিন রাত। বর্তমান সরকার যখন নানামুখী উন্নয়ন ও দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে অক্লান্ত পরিশ্রম করে করে যাচ্ছেন। সেখানে সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন স্থানে করা হচ্ছে নানা অপরাধ। তেমনি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কতিপয় নেতারা নগরীর রুপাতলী এলাকায় জেলা পরিষদের খাল ও সড়ক জনপথের জমি দখল করে নির্মান করেছে পাকা ৩০টি দোকান ঘর। আর যা থেকে প্রতি মাসে ভাড়া হিসেবে আদায় করা হচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরীর রুপাতলী এলাকার ২৪ নং ওয়ার্ডের রেন্ট্রিতলা নামক স্থানে অবস্থিত খাল ও সড়ক জনপথের জমি দখল করে ওই দোকান ঘর তৈরী করেছেন ২৪ নং ওয়ার্ড আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক সাফিন মাহামুদ তারিক ও তার অনুসারী যুবলীগ নেতা পরিচয়দান সাহান সিকদার।

সরেজমিনে পরিদর্শন কালে দেখা যায়, জেলা পরিষদের ওই খালের অর্ধেক এরও বেশি অংশ দখল করায় যেমনি খালের অস্তিত্ব পরেছে সংকটে তেমনি বরিশাল পটুয়াখালী মহাসড়কের পাশ ঘেষেই নির্মান করা হয়েছে ওই দোকানঘর। আর যাতে যেকোন সময় ঘটতে পারে দূর্ঘটনা। বাংলাদেশ সড়ক ও মহাসড়ক আইন অনুযায়ী কোন সড়ক বা মহাসড়কের ৩০ ফুটের মধ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ী কোন স্থাপনা নির্মান না করার নিয়ম থাকলেও তা মানতে নারাজ ওই অবৈধ দখলদাররা।

এবিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অবৈধ দখলকৃত জমির ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে এই দোকান ঘরের সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দোকান ঘর কার তা বলতে চাচ্ছি না। তবে মাস শেষে যুবলীগ নেতা সাহান সিকদার এর কাছে ভাড়ার টাকা দেই।

অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা পরিচয়দানকারী সাহান এর মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবিষয়ে আমার থেকে তারিক ভাই ভালো বলতে পারবে। আপনি তার সাথে কথা বলুন।

শুধু রুপাতলীর রেন্ট্রিতলা নয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত দপপিয়া সেতুর টোল ঘরের দক্ষিন পার্শেও সড়ক জনপথের জমি অবৈধ দখল করে সেখানেও গড়ে তুলেছে ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সার গ্যারেজ। আর সেখান থেকেও মাস শেষে আয় হয় প্রায় অর্ধলক্ষাধিক টাকা।

এবিষয়ে জানতে সাফিন মাহামুদ তারিক এর মুঠোফোনে বার বার ফোন দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।

বরিশাল সিটি করপোরেশন এর ২৪ নং ওয়ার্ড এর দায়িত্বরত রোড ইন্সপেকটর (আর আই) অনিক চৌধুরীর কাছে এই অবৈধ দখল বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অল্প কিছুদিন পূর্বে এই ওয়ার্ডের দায়িত্ব পেয়েছি। তবে আমি সরেজমিনে পরিদর্শন করে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

অপরদিকে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আহসান হাবিব বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসলে আমি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

সড়ক ও জনপথের জমির দখলের বিষয়ে জানতে বরিশাল সড়ক বিভাগের দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী মো: মাসুদ মাহমুদ সুমন এর মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে ২৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শরীফ মো: আনিছুর রহমানের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে সারাবাংলাদেশেই আওয়ামী লীগের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম দিন দিন বাড়ছে। তেমনি আমার ২৪ নং ওয়ার্ডেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। আমি যতদুর জানি ওই দখলকৃত দোকনঘরের কোন প্লান বা অনুমোদন নেই। তারপরও তারা কোন অদৃশ্য শক্তির বলে ওই স্থাপনা নির্মান করেছে তা তারাই ভালো জানে। তবে আমি চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন বিষয়টি আমলে নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে।

Print Friendly

Related Posts