দৌলতদিয়ার ফেরিতে জুয়ার আসর ‘লাগলেই ডাবল’

সুকান্ত বিশ্বাস: ‘লাগলেই ডাবল-লাগলেই ডাবল’ দক্ষিণবঙ্গের প্রবেশদ্বারখ্যাত দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় নৌরুটে চলাচলকারী অনেকেই এই কথাটির সঙ্গে পরিচিত। বিশেষ করে সন্ধ্যা এবং রাতে যারা এই রুটে ফেরি পার হন তারাতো এই কথাটির সঙ্গে খু্বই পরিচিত।

এমন শ্রুতি রয়েছে, রাত যত বাড়তে থাকে রূপ বদলাতে থাকে দৌলতদিয়া। এই নৌরুটের ফেরিতে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বসে জুয়ার আসর। আর সেই জুয়ারিদের পাতা ফাঁদে জড়িয়ে সর্বস্ব হারান সাধারণ মানুষ।

এই রুটে ১৬টি ফেরি নিয়মিত চলাচল করে। ফেরিতে যাতায়াতকারী বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যার পর থেকেই প্রায় প্রতিটি ফেরিতেই জুয়ার আসর বসে। তারা জানান, “লাগলেই ডাবল লাগলেই ডাবল” এই শব্দটি ব্যবহার করে জুয়ারিরা সাধারণ মানুষদের আকৃষ্ট করে।

চার থেকে পাঁচ জন বসে কোরোসিনের কুপি জালিয়ে এই জুয়ার আসর বসায়। লোভে পরে টাকা দিয়ে সেখানে সর্বশান্ত হন সাধারণ মানুষ। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে একাধারে চলে এ খেলা। ফেরি ঘাটে এসে ভিড়লে বাতি নিভিয়ে ফেরিতে থাকা হকারদের দোকানের আড়ালে সরঞ্জাম রেখে মুহূর্তেই উধাও হয়ে যান তারা। ফেরিটি আবার লোড হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাও ফেরিতে উঠে পড়েন। আবার শুরু হয় ‘লাগলেই ডাবল-লাগলেই ডাবল’। চলে সেই জুয়া।

দক্ষিণবঙ্গগামী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যাত্রী বলেন, ভাই সকলে টাকা ধরলেই পায় আমি তিনবারে ৫ হাজার টাকা করে ধরেছি। মোট পনের হাজার টাকা হেরেছি। এগুলোর বন্ধ করা প্রয়োজন।

ফেরিতে হকারি করা একাধিক ব্যক্তি জানান, এই জুয়ার আসর নতুন নয়। প্রশাসন আগে নিয়মিত অভিযান চালালেও এখন আর সে রকম অভিযান চোখে পড়ে না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি সময় দৌলতদিয়া সাইনবোর্ড এলাকার একটি চক্র এর নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন এই জুয়া নিয়ন্ত্রণ করছে তিন থেকে চারটি চক্র। এইসব চক্রের সদস্য সংখ্যা ২০ জনেরও অধিক।

দৌলতদিয়া ঘাটের নৌ পুলিশ ফাঁড়ি সূত্রে জানা গেছে, ফেরিতে জুয়ারিদের সক্রিয়তার খবরে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তিনটি আলাদা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলায় ১৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। যাদের মধ্যে অনেকে গ্রেপ্তার হয়েও জামিনে বের হয়ে আবার এই কাজ শুরু করেছে।

দৌলতদিয়া ঘাটের নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন পিপিএম বলেন, ফেরিতে জুয়ারি চক্রে অন্তত ২০ থেকে ২৫ জন সদস্য রয়েছে। আমরা মাঝে মধ্যেই ফেরিতে অভিযান পরিচালনা করি। কিন্তুু আমাদের উপস্থিতি টের পেলে তারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধাবোধ করে না। তাছাড়া অভিযানে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করলেও জামিন নিয়ে বেরিয়ে আসে তারা। তাই সকলকে এখনই সচেতন হতে হবে, না হলে এই চক্র বন্ধ করা সম্ভব না।

নৌ পুলিশ ফরিদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আমাদের অভিযান চলমান কিন্তু জুয়ারিরা সব সময় আমাদের অভিযানের খবর পেয়ে পালিয়ে যায়। আমরা গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানোর চেষ্টা করছি।

 

Print Friendly

Related Posts